ড্রয়ের বৃত্তে আটকে গেছে আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দুই ম্যাচের পর আজ কোপা আমেরিকায় নিজেদের প্রথম ম্যাচেও জিততে পারল না দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলটি।
লিওনেল মেসির রেকর্ড গোলের পরেও চিলির বিপক্ষে ম্যাচটিতে ১-১ গোলে ড্র করেছে আর্জেন্টিনা।
গত ৪ জুন (শুক্রবার) বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে একই দলের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করেছিল আর্জেন্টিনা। সেদিনও আগে গোল করেছিলেন মেসি। পরে শোধ দিয়ে ম্যাচ ড্র করে চিলি। আজ ঘটল তারই পুনরাবৃত্তি। ম্যাচের ৩৩ মিনিটে দর্শনীয় ফ্রি-কিকে গোল করেন মেসি। দ্বিতীয়ার্ধে সেটি শোধ করে ড্র নিয়ে নেয় চিলি।
আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেসির এটি ৭৩তম গোল। আর শুধু প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের কথা হিসাব করলে, মেসির এটি ৩৯তম আন্তর্জাতিক গোল। এতদিন ধরে আর্জেন্টিনার হয়ে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড ছিল গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার। আজ সেই রেকর্ড নিজের করে নিলেন মেসি। কিন্তু দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেননি।
সান্তোসের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ম্যাচের প্রথমার্ধে একক আধিপত্যই ছিল আর্জেন্টিনার। পুরো ৪৫ মিনিটে একটি শটও লক্ষ্য বরাবর রাখতে পারেনি চিলি। অন্যদিকে ফ্রি-কিক থেকে করা মেসির গোল বাদেও আরও দুইটি শট লক্ষ্যে রেখেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু গোল হয়নি একটিতেও।
খেলা শুরুর পর সপ্তম মিনিটেই প্রথম সুযোগ তৈরি করে আলবিসেলেস্তেরা। কিন্তু নিকোলাস তালিয়াফিকোর পাস থেকে বল পেয়ে সেটি লক্ষ্য বরাবর মারতে পারেননি মেসি। এর মিনিট চারেক পর দুর্দান্ত সুযোগ ছিল লাউতারো মার্টিনেজের সামনে। কিন্তু লো সেলসো বাড়ানো বলে শেষ ছোঁয়া দিতে পারেননি তিনি।
তবু থেমে থাকেনি আর্জেন্টিনার আক্রমণ। পুনরায় ১৬ মিনিটের মাথায় আর্জেন্টাইনদের হতাশ করেন চিলির গোলরক্ষক ক্লাউদিও ব্রাভো। আবারও দারুণ এক বলের যোগান দেন সেলসো, সেটি ধরে জোরালো শটই নিয়েছিলেন নিকো গনজালেজ। তবে গোলবারের নিচে অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় সেটি ফিরিয়ে দেন ব্রাভো।
দুই মিনিট পর আবারও সুযোগ আসে নিকোর সামনে। সেই লো সেলসোর বাড়ানো বলে স্রেফ ফাঁকা বুঝে শট নিতে হতো নিকো গনজালেজকে। কিন্তু তার আলতো করে নেয়া শট সহজেই ফেরান ব্রাভো। ফলে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ হাতছাড়া হয়।
তবে ম্যাচের ৩৩ মিনিটের সময় আর ভুল করেননি অধিনায়ক মেসি। শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলতে থাকা লো সেলসোকে নিজেদের ডি-বক্সের বাইরে ফাউল করেন চিলির মিডফিল্ডার এরিক পুলগার। সঙ্গে সঙ্গে ফ্রি-কিকের বাঁশি বাজান রেফারি, হলুদ কার্ড দেখান পুলগারকে।
গোল করার মতো দূরত্বে ফ্রি-কিক পেয়ে শট নিতে এগিয়ে আসেন মেসিই। তার নেয়া বাঁকানো শট মানব দেয়ালের ওপর দিয়ে গোল পোস্টের বাম পাশের কোণা হয়ে জড়িয়ে যায় জালে। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে মেসির এটি ৭৩তম গোল। আর প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে গোলসংখ্যা বেড়ে হলো ৩৯।
প্রথমার্ধেই ব্যবধান বাড়িয়ে নিতে পারত আর্জেন্টিনা। আনমার্কড অবস্থায় বল পেয়েছিলেন লাউতারো মার্টিনেজ। কিন্তু লক্ষ্য বরাবর শট নিতে পারেননি এ তরুণ ফরোয়ার্ড। ফলে এক গোলের লিড নিয়েই বিরতিতে যেতে হয় আর্জেন্টিনাকে। পরে আর গোলই করতে পারেনি তারা।
দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে পুরোপুরি ভিন্ন রূপে আবির্ভূত হয় চিলি। প্রথমার্ধে একটি শটও লক্ষ্যে রাখতে না পারা দলটি, দ্বিতীয়ার্ধের ২০ মিনিটের মধ্যেই চারটি শট করে লক্ষ্য বরাবর। যার মধ্যে ছিল ৫৬ মিনিটে পেনাল্টি মিসের পর হেডের মাধ্যমে পাওয়া সমতাসূচক গোলটিও।
আক্রমণের ধার বাড়িয়ে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করা চিলি প্রথম ভালো সুযোগ পায় ৫৪ মিনিটের সময়। ডি-বক্সের মুখ থেকে বেশ ভালো শট নেন এরিক পুলগার। তা ঠেকিয়ে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। ফিরতি বলে শট নিতে এগিয়ে আসেন আর্তুরো ভিদাল। তার শটটি ছিল লক্ষ্যভ্রষ্ট।
কিন্তু সেই শট ঠেকানোর প্রচেষ্টায় উল্টো ফাউল করে বসেন নিকোলাস তালিয়াফিকো। ভিডিও এসিসট্যান্ট রেফারির সাহায্য নিয়ে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ভিদালের নেয়া পেনাল্টি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এমিলিয়ানো। কিন্তু ক্রসবারে লেগে ফিরে আসা বলে হেড করে চিলিকে সমতায় বসান এডুয়ার্ডো ভার্গাস।
গোল হজম করে আক্রমণের মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় আর্জেন্টিনা। কিন্তু কাজের কাজ গোলটিই তারা করতে পারেনি। ম্যাচের ৬৯ মিনিটের সময় বক্সের বাইরে বাম পাশ থেকে দূরপাল্লার শট নিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু সেটি হেডে ক্লিয়ার করে চিলির রক্ষণ।
এক মিনিট পর ডি-বক্সের ঠিক মাঝামাঝি জায়গা থেকে দুর্দান্ত শট করেন মেসি। এবার বাম দিকে ঝাঁপিয়ে সেটি ঠেকান চিলির গোলরক্ষক। প্রথমার্ধে সহজ সুযোগ হাতছাড়া করা নিকোর সামনে ৮০ মিনিটে আসে আরও সহজ সুযোগ। বুদ্ধিদীপ্ত ক্রসে ডি-বক্সের মধ্যে নিকোকে খুঁজে নিয়েছিলেন মেসি। ফাঁকায় দাঁড়িয়ে বলটি শুধু লক্ষ্য বরাবর হেড করতে হতো নিকোর। এটিও করতে পারেননি।
ফলে আরও একবার পুড়তে হয় হতাশায়। ম্যাচের শেষ দিকে একের পর এক আক্রমণে চিলির রক্ষণভাগকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে আর্জেন্টিনা। নির্ধারিত সময়ের একদম শেষ মিনিটে জোরালো আক্রমণে গোলের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিল কিন্তু কাজ আর হয়নি। পরে অতিরিক্ত যোগ করা সাত মিনিটেও আর গোল করতে পারেনি আর্জেন্টিনা, ড্র থেকেই শেষ হয় ম্যাচ।
এই ড্রয়ের ফলে কোপার শুরুটা ভালো হলো না আর্জেন্টিনার। ‘বি’ গ্রুপে তাদের অন্য তিন প্রতিপক্ষ উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে ও বলিভিয়া। বাংলাদেশ সময় শনিবার (১৯ জুন) ভোর ছয়টায় উরুগুয়ের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামবেন মেসিরা।