মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যেকার বহুল প্রতীক্ষিত বৈঠক শুরু হয়েছে। বুধবার জেনেভায় সাংবাদিকদের সামনে সৌজন্য করমর্দন সেরেই লেকপাড়ের একটি ভবনে ঢুকে যান তারা। এখন বিশ্বের ক্ষমতাধর দুই দেশের সরকারপ্রধানের এ বৈঠকের দিকে নজর গোটা বিশ্বের।
পুতিন বলেছেন, তিনি একটি ‘ফলপ্রসূ’ বৈঠক আশা করছেন। আর বাইডেনের মতে, ফোনের চেয়ে সামনাসামনি আলাপই সর্বোত্তম।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবর অনুসারে, দুই নেতা এদিন করমর্দন করলেও তাদের সাক্ষাতের সূচনা কিছুটা উদ্ভট ছিল। সাংবাদিকদের সামনে সংক্ষিপ্ত ফটোশুটের সময় তাদের কেউই সরাসরি একে অন্যের চোখের দিকে তাকাচ্ছিলেন না।
তবে ছাড় দেননি সাংবাদিকরা। তারা বাইডেনকে প্রশ্ন করেন, পুতিনকে বিশ্বাস করা যায় কিনা। জবাবে শুধু মাথা নাড়ান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
আর পুতিনের কাছে প্রশ্ন ছিল, তিনি কারাবন্দি বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনিকে ভয় পান কিনা। অবশ্য এ প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি রুশ প্রেসিডেন্ট।
অস্ত্রব্যবসা, সাইবার হামলা, নির্বাচনে হস্তক্ষেপ, ইউক্রেনের মতো ইস্যুগুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। রাশিয়া সম্প্রতি ‘অবন্ধু-সুলভ দেশের’ তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের নাম যোগ করেছে। এছাড়া দু’দেশই বলছে যে, তাদের মধ্যকার সম্পর্ক এখন প্রায় তলানিতে নেমে এসেছে।
কোন দেশেরই এখন অন্য দেশে রাষ্ট্রদূত নেই। ঊর্ধ্বতন রুশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে নানা কারণে। রাশিয়া যেভাবে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল দখল করে তা নিজ দেশের অন্তর্ভুক্ত করেছে সেটি যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষিপ্ত করেছে। তাছাড়া অন্য দেশের নির্বাচনে রাশিয়া নাক গলায় এমন অভিযোগেও কিছু নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দু’জন সাবেক মার্কিন মেরিন সেনা এখন রুশ কারাগারে বন্দি। এদের একজন গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ১৬ বছরের সাজা খাটছেন।
দুই দেশের এই বৈরি সম্পর্কে আরও যুক্ত হয়েছে পুতিনকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কিছুদিন আগের করা মন্তব্য। গত মার্চে এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর সঙ্গে একমত হন যে, ভ্লাদিমির পুতিন আসলে একজন ‘খুনি’।
এত কিছুর পরেও তারা দুই দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বৈঠকে বসেছেন। ফলে অনেকেই এটিকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে মনে করছেন।
তবে ওয়াশিংটন বা মস্কো কেউই বৈঠকের ফলাফল নিয়ে অতটা আশাবাদী নয়। বাইডেনের সঙ্গে জেনেভা যাওয়ার পথে এয়ারফোর্স ওয়ানে এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এই বৈঠক থেকে বড় কিছু আশা করছি না।
আর পুতিনের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ বলেছেন, কোনো সমঝোতা হবে কি না সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই।
বাইডেন-পুতিনের এই বৈঠক অন্তত চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা চলতে পারে বলে জানা গেছে।
সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা