এক বছরে বাস্তুচ্যুত মানুষ বেড়েছে ২৯ লাখ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বাস্তুচ্যুত মানুষ
ফাইল ছবি

চলমান কোভিড-১৯ মহামারিসহ যুদ্ধ, সহিংসতা, নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে এক বছরে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ২৯ লাখ। বিশ্বে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ২৪ লাখে, যা ২০১৯ সালে ছিল ৭ কোটি ৯৫ লাখ। অর্থাৎ, বিশ্বে এক বছরে বাস্তুচ্যুত মানুষ বেড়েছে ৪ শতাংশ।

শুক্রবার (১৮ জুন) জেনেভা থেকে প্রকাশিত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের বার্ষিক গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্ট এ তথ্য দিয়েছে।

universel cardiac hospital

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৮ কোটি ২৪ লাখে পৌঁছেছে। এটি ২০১৯ সালের রেকর্ড সংখ্যা ৭ কোটি ৯৫ লাখের চেয়েও ৪ শতাংশ বেশি। এদের মধ্যে ২ কোটি ৬৪ লাখ শরণার্থী রয়েছে, যা ২০১৯ সালে ছিল ২ কোটি ৬০ লাখ। অর্থাৎ এক বছরের মাথায় শরণার্থীর সংখ্যা ৪ লাখ বেড়েছে।

ইউএনএইচসিআর জানায়, গত বছরের শেষে বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে সংস্থাটির ম্যান্ডেটের অধীন ২ কোটি ৭ লাখ শরণার্থী। এদের মধ্যে ৫ কোটি ৭০ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী এবং বিভিন্ন দেশে বাস্তুচ্যুত ৩৯ লাখ ভেনিজুয়েলান। এছাড়া আরও ৪ কোটি ৮০ লাখ মানুষ তাদের নিজ দেশের ভেতরে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত অবস্থায় ছিল। এদের মধ্যে ৪১ লাখ আশ্রয়প্রার্থী।

সংস্থাটি বলছে, গত বছর চলমান মহামারি সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ছিল। তখন ১৬০টিরও বেশি দেশ তাদের সীমান্ত বন্ধ করে রেখেছিল। এর মধ্যে ৯৯টি দেশ সুরক্ষার খোঁজে পালিয়ে আসা মানুষদের জন্যও তাদের সীমান্ত উন্মুক্ত করেনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বল প্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মানুষদের ৪২ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে। ২০১৮ ও ২০২০ সালের মধ্যে মোট ১০ লাখ শিশুর জন্ম হয়েছে, যারা জন্ম থেকেই শরণার্থী। তাদের মধ্যে অনেকেই আগামী বছরগুলোতেও শরণার্থী হয়েই থাকবে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, গত বছরজুড়ে প্রায় ৩২ লাখ আভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ও মাত্র ২ লাখ ৫১ হাজার শরণার্থী নিজ বাড়িতে ফিরতে পেরেছে। এই সংখ্যা ২০১৯ সালের তুলনায় যথাক্রমে ৪০ ও ২১ শতাংশ কম। এদের মধ্যে প্রায় ৩৩ হাজার ৮০০ শরণার্থী তাদের আশ্রয় প্রদানকারী দেশে স্বাভাবিক অবস্থান পেয়েছে। অন্যদিকে তৃতীয় কোন দেশে শরণার্থীদের পুনর্বাসন অনেক কমে গেছে। অথচ ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩৪ হাজার ৪০০ জন; এটি গত ২০ বছরে সর্বনিম্ন। পুনর্বাসনের স্থান কমে যাওয়া ও কোভিড-১৯ এর ফলাফল এটি।

সংস্থাটির ভাষ্য, মহামারি ও বিশ্বব্যাপী যুদ্ধবিরতি আহ্বানের পরেও সংঘাতের কারণে মানুষের গৃহহীন হওয়া যে থামেনি এই সংখ্যাগুলো তারই প্রমাণ। এগুলো শুধুই সংখ্যা নয়। এদের মাঝে প্রত্যেকটি মানুষের রয়েছে বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনা, সব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া, এবং যন্ত্রণার গল্প। শুধু মানবিক সাহায্য নয়, তাদের দুর্দশার সমাধানে আমাদের মনযোগ ও যথাযথ সহায়তা দিতে হবে।

ক্রমবর্ধমান বাস্তুচ্যুতির বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটির হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন, ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশন ও গ্লোবাল কম্প্যাক্ট অন রিফিউজিস (শরণার্থীদের জন্য বৈশ্বিক সংহতি)-এর মাধ্যমে আমরা বাস্তুচ্যুত ও শরণার্থীদের সাহায্যে আইনি কাঠামো ও অন্যান্য উপায় পাচ্ছি। কিন্তু আমাদের এর চেয়ে বেশি প্রয়োজন অনেক বেশি রাজনৈতিক সদিচ্ছা। তাহলে বাস্তুচ্যুতির মূল কারণ সংঘাত ও নিপীড়ন কমানো যাবে।

ইউএনএইচসিআরের হাই কমিশনার বলেন, এতগুলো শিশুর জন্মের শুরু হচ্ছে নির্বাসনের মাধ্যমে, এটাই সংঘাত ও সহিংসতা রোধ ও বন্ধের জন্য অধিকতর প্রচেষ্টার কারণ হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি আরও বলেন, এই সংকটগুলোর সমাধানের জন্য বৈশ্বিক নেতাদের এবং প্রভাবশালীদের তাদের মতপার্থক্য, রাজনৈতিক অহংকার দূরে রাখতে হবে। সংঘাত প্রতিরোধ ও সমাধান এবং মানুষের মানবাধিকারের প্রতি সম্মান বজায় রাখা উচিত বিশ্ব নেতাদের।

শেয়ার করুন