শনিবার থেকে সিনোফার্মের টিকাদান শুরু, অগ্রাধিকার পাবেন যারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সিনোফার্মের টিকা
ফাইল ছবি

দীর্ঘ বিরতির পর আগামীকাল শনিবার থেকে দেশে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া আবার শুরু হচ্ছে। চীনের তৈরি সিনোফার্মের টিকা দিয়ে পাঁচ লাখ মানুষকে টার্গেট করে টিকা দেয়া শুরু করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কারা এই টিকা পাবে এ ব্যাপারে ক্যাটাগরি ভাগ করেছে সংস্থাটি। যারা ইতিমধ্যে নিবন্ধন করেছেন তারা টিকায় অগ্রাধিকার পাবেন। এছাড়া সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ সদস্যরা যারা আগে টিকা নেননি তাদেরসহ বিদেশগামী বাংলাদেশি কর্মীরা অগ্রাধিকার পাবেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মো. শামসুল হক শুক্রবার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, চীন দুই দফায় বাংলাদেশকে যে ১১ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা দিয়েছিল সেটা দিয়ে শুরু হচ্ছে টিকা কার্যক্রম। তবে সেটা সবার জন্য নয়।

শামসুল হক জানান, এই ১১ লাখ ডোজ টিকার জন্য পাঁচ লাখ মানুষকে টার্গেট করা হয়েছে, যাতে করে তাদের দুই ডোজ টিকা দেয়া সম্পন্ন করা যায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের খুব পরিষ্কার পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা পাঁচ লাখ মানুষকে দুইটা ডোজের টিকা দিয়ে কমপ্লিট করবো। এখানে আগে যারা নিবন্ধন করে রেখেছেন তারা অগ্রাধিকার পাবেন।’

ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব জানান, এর পাশাপাশি প্রবাসী শ্রমিক, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থী, সরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফরা এই টিকায় অগ্রাধিকার পাবেন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরাও এ টিকা পাবেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, টিকার জন্য ইতিমধ্যে রেজিস্ট্রেশন করেছেন ৭০ লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে ৫৮ লাখ মানুষের কেউ দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন, আবার কেউ একটা ডোজ নিতে পেরেছেন। যারা এক ডোজ টিকাও পায়নি তাদের লক্ষ্য করে এই সিনোফার্ম টিকার কার্যক্রম চলবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঢাকা জেলায় চারটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাধ্যমে দেয়া হবে সিনোফার্মের ভ্যাকসিন। এই চারটি হাসপাতাল হচ্ছে—ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এসব হাসপাতালে একটি করে টিকা কেন্দ্র হবে এবং প্রতিটি কেন্দ্রে দুটি করে বুথ থাকবে। তাছাড়া ঢাকা জেলা বাদে প্রতি জেলায় একটি করে ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্র হবে এবং প্রতিটি কেন্দ্রে দুটি করে বুথ থাকবে। তবে বুথ চালু করতে হবে টিকা গ্রহীতার সংখ্যার ওপর নির্ভর করে।

নির্ধারিত কেন্দ্রে ইতিমধ্যে যারা ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ভ্যাকসিন পাননি, তাদের এই ভ্যাকসিন দেয়া হবে। অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ সদস্যরা যারা আগে ভ্যাকসিন নেননি, অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিদেশগামী বাংলাদেশি কর্মী, যাদের বিএমইটি নিবন্ধন কিংবা কার্ড আছে, সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীরা, সরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি, সরকারি ম্যাটস ও সরকারি আইএইচটি’র শিক্ষার্থীরা, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা, বিডা’র আওতাধীন ও অন্যান্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক সরকারি প্রকল্পে (পদ্মা সেতু প্রকল্প, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, এক্সপ্রেস হাইওয়ে প্রকল্প, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র) সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মী, সারাদেশে কোভিড-১৯ মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ওয়ার্ড/পৌরসভার কর্মী এবং বাংলাদেশে বসবাসরত চীনা নাগরিকরা পাবেন সিনোফার্মের এই টিকা।

সিনোফার্মের এই ভ্যাকসিন ১৮ বছরের নিচে কাউকে দেয়া হবে না। ভ্যাকসিন গ্রহণের সময় জ্বর থাকলে বা অসুস্থ থাকলে, ভ্যাকসিনজনিত অ্যালার্জির পূর্ব ইতিহাস থাকলে, প্রথম ডোজ গ্রহণের পর মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে তিনি এ ভ্যাকসিন নিতে পারবেন না। অনিয়ন্ত্রিত দীর্ঘমেয়াদি রোগ, যেমন: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ঘা, অ্যাজমা, কিডনি রোগ, ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন এমন ব্যক্তি, ক্যানসারে আক্রান্ত এবং স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জনগোষ্ঠীর ভ্যাকসিন দেয়ার ক্ষেত্রে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে অক্সফোর্ড এস্ট্রেজেনেকার টিকা দিয়ে গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। যারা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের জন্য দ্বিতীয় ডোজ কবে কীভাবে নিশ্চিত করা হবে এ নিয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ।

সদস্য সচিব মো. শামসুল হক জানাচ্ছেন, বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা আনার জোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু টিকা হাতে না আসা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘চীন, রাশিয়া, কোভ্যাক্সসহ আরও অনেক জায়গায় যোগাযোগ চলছে। এখন মর্ডানা, নোভাভ্যাক্স, জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিন, ফাইজার আবার অ্যাস্ট্রেজেনেকার কথাও হচ্ছে। এখন যেটা যখন আমাদের হাতে আসবে তখন সেটা নিয়ে আমরা প্ল্যান করতে পারবো।’

শেয়ার করুন