রাজধানীর কদমতলীর মুরাদপুরের হাইস্কুল রোডের একটি বাসায় মা-বাবা ও ছোট বোনকে হত্যার ঘটনায় মেহজাবিন ইসলাম মুনের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস শুনানি শেষে এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কদমতলী থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) জাকির হোসাইন এই আসামিকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, মুনের বাবা মাসুদ রানা দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে সৌদি আরব থাকতেন। মাঝে-মধ্যে তিনি দেশে আসতেন। মেহজাবিন ইসলাম মুনের বিয়ে হয় শফিকুল ইসলাম অরণ্যর সঙ্গে। এরপর থেকে মুন সম্পত্তি লিখে দেয়ার জন্য তার মা মৌসুমি ইসলামকে বিভিন্নভাবে চাপ দিতেন এবং টাকা-পয়সা দাবি করতেন। সম্পত্তি লিখে না দেয়ার কারণে মুন এবং তার স্বামী অরণ্য ছয় মাস আগে থেকে মাসুদ রানা, তার স্ত্রী মৌসুমি এবং মেয়ে জান্নাতুল ইসলাম মোহনীকে মারার জন্য বিভিন্নভাবে পরিকল্পনা করতে থাকেন। মাসুদ রানা তিন মাস আগে সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আসামিরা গত ১৮ জুন বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে মাসুদ রানার বাসায় আসেন। মাসুদ রানা দম্পতি সবকিছু ভুলে আসামিদের বাসায় থাকতে দেন। গত ১৮ জুন রাত ৯টা থেকে বিভিন্ন সময়ে চা-কপি ও পানির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে মাসুদ রানা, মৌসুমি ইসলাম এবং মোহনীকে তা খাওয়ানো হয়। এতে সবাই অচেতন হয়ে গেলে আসামিরা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে একে একে সবার মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
আবেদনে বলা হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুন মামলাসংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন। তবে কী কারণে, কেন? কী উদ্দেশ্যে মুন তার বাবা-মা, বোনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আর কেউ জড়িত ছিল কি না তা জানার জন্য সাত দিনের রিমান্ড প্রয়োজন।
রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তবে আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
বেলা তিনটার কিছু পর মুনকে এজলাসে তোলা হয়। এ সময় তাকে স্বাভাবিকই দেখাচ্ছিল। কথাও বলেছেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। কেন খুন করলেন এমন প্রশ্নে মুন বলেন, পরকীয়া এবং পারিবারিক ঝামেলার কারণে খুন করেছি। আর কেউ সাথে ছিল কি না? জানতে চাইলে মুন বলেন, তিনি একাই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। অনুশোচনা হচ্ছে না, এমন প্রশ্নে মুন বলেন, ‘না। আমার কোনো অনুশোচনা হচ্ছে না। বরং কাল থেকে আরও ভালো আছি। সুস্থ, স্বাভাবিক আছি।’
এর আগে শনিবার রাজধানীর কদমতলী থানার মুরাদপুরের হাইস্কুল রোডের একটি বাসা থেকে মাসুদ রানা, মৌসুমি ইসলাম এবং মোহনীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় মাসুদ রানার বড় ভাই সাখাওয়াত হোসেন মেহজাবিন ইসলাম মুন এবং তার স্বামী শফিকুল ইসলাম অরণ্যকে আসামি করে কদমতলী থানায় মামলা দায়ের করেন। স্বামী শফিকুল ইসলাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।