ইরানে গত শুক্রবারের (১৮ জুন) নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন ইব্রাহিম রাইসি। ইরানের অষ্টম প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন তিনি। আগামী আগস্ট থেকে ইরানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির স্থলাভিষিক্ত হবেন ৬০ বছর বয়সি রাইসি। ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে অভিনন্দন।
ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর এবারই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে কম ভোট পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। এই আশঙ্কা সত্যি হয়েছে। এবার মাত্র ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছে রাইসি ৬১ দশমিক ৯৫ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর প্রাপ্ত ভোট দুই কোটি ৮৯ লাখ ৩৩ হাজার ৪টি। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোহসিন রেজাই পেয়েছেন ৩৪ লাখ, ১২ হাজার ৭১২ ভোট।
রাইসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ইরানের সঙ্গে ছয় জাতির করা পারমাণবিক চুক্তির কী হবে—তা নিয়ে আলোচনা চলছে। অন্যান্য রাজনীতিকের মতোই রাইসি ইরানের অর্থনৈতিক দুর্দশা থেকে মুক্তির জন্য ওই পারমাণবিক চুক্তি পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টার সমর্থন করেছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর সোমবার (২১ জুন) প্রথম সংবাদ সম্মেলনে রাইসি বলেছেন, ফিলিস্তিনের ব্যাপারে ইরানের নীতি হচ্ছে, সেখানকার মূল অধিবাসীদের মধ্যে গণভোটের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের ভাগ্য নির্ধারণ করতে হবে। আমেরিকাকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে পরমাণু সমঝোতায় ফিরে আসতে হবে এবং ইউরোপীয়দেরকে ওয়াশিংটনের চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে ইরানের প্রতি নিজেদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে পূর্ণ মাত্রায় কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ও পরস্পরের দেশে দূতাবাস পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
নির্বাচনী প্রচারে রাইসি ভোটারদের সামনে নিজেকে ‘দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অভিজাতদের’ ঘোর বিরোধী হিসেবে তুলে ধরেছেন। নির্বাচনী প্রচারে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ৪০ লাখ বাড়ি তৈরির কথাও বলেছেন। তাঁর বড় প্রতিশ্রুতি হচ্ছে শক্তিশালী ইরান গঠনের জন্য জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আমরা আশা করি, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে তিনি সর্বোচ্চ আন্তরিক থাকবেন। সেইসঙ্গে তার সরকার বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ও যোগাযোগ রক্ষা করে ইরানের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার জন্য সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নেবে ।
ইরান ও বিশ্ব গণমাধ্যমের চোখে ইব্রাহিম রাইসি হচ্ছেন দেশটির সবচেয়ে কট্টরপন্থি প্রেসিডেন্ট। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হয় তাঁকে। তিনি ইরানের সামরিক পরমাণু কর্মসূচি জোরদারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও তাঁর আমলে আঞ্চলিক ও বিশ্ব শান্তি আরও দৃঢ় হবে- এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।