প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোভিড -১৯ ভ্যাকসিনকে বিশ্বব্যাপী জনগণের পণ্য হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।
মঙ্গলবার (২২ জুন) কাতার ইকোনমিক ফোরামের ভাচুর্য়াল বৈঠকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে এবং সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য ছয় দফা প্রস্তাব পেশকালে তিনি এ কথা বলেন।
‘আগামীর জন্য নতুন দিগন্ত’ শীর্ষক স্লোগান নিয়ে সোমবার (২১ জুন) শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনে শতাধিক বিশ্বনেতা, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ এবং ব্যবসায়ী ভিডিও বার্তা প্রদান করছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নশীল দেশ ও এলডিসি যাদের সক্ষমতা রয়েছে, তাদের ভ্যাকসিন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া উচিত। মহামারির পরে টেকসই এবং ন্যায়সঙ্গত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমাদের অংশীদারিত্বমূলক সমৃদ্ধির জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই এবং সামগ্রিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা প্রয়োজন, আমাদের এখন সামগ্রিক বৈশ্বিক প্রচেষ্টার প্রয়োজন। বিশ্বকে ব্যবসা, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ পরবর্তী অবস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য সবার উন্নয়নে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই সামগ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
এ সময় আন্তর্জাতিক সমৃদ্ধির জন্য বাণিজ্য, ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের মাধ্যমে কোভিড -১৯ মহামারির প্রভাব নিরসনে অবিলম্বে সম্মিলিত ও সামগ্রিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশগুলোকে অবশ্যই ডিজিটাল বিভাজন বন্ধ করার জন্য বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের সার্থকতা অর্জন করতে হবে এবং মহামারিজনিত কারণে যে কোনও সম্ভাব্য চ্যুতি প্রতিরোধে গ্র্যাজুয়েশন-প্রাপ্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য নতুন আন্তর্জাতিক সহায়তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য পূরণের জন্য উচ্চাভিলাষী জলবায়ু পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য ও রফতানি আয়ের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে লক্ষ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সহায়তার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এই অঞ্চলে আয়োজক দেশ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী হিসেবে তুলে ধরা অভিবাসী শ্রমিকদের পুনরায় একত্রীকরণ পরিকল্পনায় অবদান রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব সংহতির জন্য কোভিড-১৯ মহামারি হলো লিটমাস টেস্ট। যেহেতু এতে ইতোমধ্যে লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে এবং অর্থনীতিকে ক্ষতবিক্ষত করেছে তাই ‘এজেন্ডা ২০৩০’,‘প্যারিস চুক্তি’ এবং ‘আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডা’ সংকট উত্তরণের ব্লু প্রিন্ট হিসেবে কাজ করতে পারে।
তিনি বলেন, কাতার ইকোনমিক ফোরাম আমাদের সুযোগগুলো শনাক্ত করার জন্য এবং এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য ধারণা এবং সমাধানগুলো ভাগ করে নিতে এবং ভবিষ্যতের সংকটগুলো দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে। কেননা, তার সরকার এ পর্যন্ত ১৫ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। মহামারি থাকা সত্ত্বেও ২০২০-২০২১ সালে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছেছে, যা বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ।
তিনি বলেন, সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ রূপকল্প দেশটিকে কোভিড-১৯ পরবর্তী নতুন বাণিজ্য এবং কাজের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সহযোগিতা করেছে।
কাতার এবং অন্যান্য মধ্য-প্রাচ্যের দেশগুলোর সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের বিশেষ করে অবকাঠামো খাতে, আইসিটি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, হালকা প্রকৌশল, ওষুধ শিল্প এবং কৃষিজাত পণ্য খাতে চমৎকার বিনিয়োগের সুযোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, কেননা, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকার বিস্তৃত পরিসরে প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে দেশগুলোতে এবং বিশ্বের সকল জায়গায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা দরকার। কারণ, এগুলো অর্থনৈতিক কার্যক্রম সম্প্রসারণের পূর্বশর্ত।
বিশ্বজুড়ে পপুলিজম, বিশ্বায়ন-বিরোধী মনোভাব এবং অর্থনৈতিক সংরক্ষণবাদের বিরুদ্ধে বহুত্ববাদকে শক্তিশালী করার জন্য একসঙ্গে দাঁড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।