শুরু থেকে বললে, আওয়ামী লীগ সভাপতি থাকাকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বেই আসে আমাদের স্বাধীনতা। পরের ৫০ বছরের যত অর্জন, তার বেশিরভাই এসেছে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বাংলাদেশ হয়েছে বিশ্বের বিস্ময়। উঠেছে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে।
আজ ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দলটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ছিল ৪০ বছরেরও বেশি সময়। টানা ৯ টার্ম দলের সভাপত্বির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সংখ্যার হিসাবে ছাড়িয়ে গেছেন পিতাকেও। বঙ্গবন্ধু টানা আট বছর সভাপতিসহ মোট ২৫ বছর দলের বিভিন্ন পদে ছিলেন।
সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে অসংগঠিত দলটিকে সুংগঠিত করেছেন শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে আরও ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী বলে দাবি দলটির নেতাদের।
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে অনেকগুলো গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ হাসিনা। দলকে ক্ষমতায় এনেছেন চারবার। রেকর্ড ভেঙে টানা তৃতীয় টার্মে দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
৭২ বছরের মধ্যে ২১ বছর দেশের ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে সাড়ে ১৬ বছরই নেতৃত্বে আছেন শেখ হাসিনা। চলতি মেয়াদে তার আরও আড়াই বছর দেশ শাসনের সুযোগ রয়েছে।
বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবেও ছাড়িয়েছেন অন্যদের। তিন টার্মে ১২ বছর বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে যত উন্নয়ন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশ চাক্ষুষ করেছে অভূতপূর্ব সব উন্নয়ন। দেশের নানা সংস্কারমূলক কাজ হয়েছে তাঁর হাত দিয়েই।
১৯৯৬ সালে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ওই সময় ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন ও পার্বত্য শান্তিচুক্তির মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হয়। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পায় ২১ ফেব্রুয়ারি।
নারীর ক্ষমতায়ন
ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকারের সব পরিষদে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত পদ সৃষ্টি করে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেন শেখ হাসিনা। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা এমপির সংখ্যাও তিনি বৃদ্ধি করেছেন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়েই সন্তানের পরিচয়ে পিতার পাশাপাশি মায়ের নাম যুক্ত করার বিধান চালু হয়। সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসন, আদালত থেকে শুরু করে বিভিন্ন উচ্চপদে নারীদের অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে তাঁর আমলেই। তিনি প্রথম নারী স্পিকার মনোনীত করেন। সংসদের উপনেতাও করেছেন নারীকে।
সরকারের পাশাপাশি দলেও নারী নেতৃত্ব বেড়েছে শেখ হাসিনার হাত ধরে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেতৃত্ব এখন ২৫ শতাংশের বেশি। সব স্তরে নারী নেতৃত্ব ৩৩ শতাংশ করার নির্বাচন কমিশনের যে শর্ত তা পূরণের পথে এগোচ্ছে দলটি।
দলের সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠন হিসেবে যুব মহিলা লীগ ও মহিলা শ্রমিক লীগ নামে দুটি উইং হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই।
বন্দনায় মুখর বিশ্ব
বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বিচারে একাধিকবার বিশ্বের প্রভাবশালী নেতৃত্বের উপাধী পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল। শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাসের জন্য বেশ আগেই আন্তর্জাতিক পদকে ভূষিত হয়েছে দেশ।
আওয়ামী লীগের বর্তমান শাসন আমলেই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নতুন মাত্রা সূচিত হয়েছে। দেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এ বছরই স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে।
শেখ হাসিনার হাত দিয়েই ঘটেছে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার। দিয়েছেন ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা। মহাকাশে এখন আছে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট। বিশ্বব্যাংকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে গড়েছেন পদ্মা সেতু।
সর্বশেষ বৈশ্বিক মহামারি করোনা সঙ্কট মোকাবিলায় তার ভূমিকা দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে।
ভারতের সঙ্গে ৬৮ বছরের ছিটমহল ও সীমান্ত সমস্যার সমাধান হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে সুবিশাল সমুদ্রে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ)-এর মতো আন্তর্জাতিক দুটি সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ।
অর্থনীতির চাকায় নতুন গতি
২০০৮-৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ হয়।
মাথাপিছু জাতীয় আয় ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ৭৫৯ মার্কিন ডলার। ২০২০-২১-এ তা দাঁড়ায় ২২২৭ ডলারে। রাজস্ব আয় ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ৬৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ এ হয় তিন লাখ ৪৮ হাজার ৫৯ কোটি।
রফতানি আয় ২০০৮-০৯ এ ছিল ১৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হয় ৪০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে আমদানি ব্যয় ২২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৫৯ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
প্রবাস আয় ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ৯ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ এ তা দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারে। একই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৭ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৩৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। বর্তমানে মাছ, মাংস ও সবজি উৎপাদনে অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্ব সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শেখ হাসিনা সব ধরনের সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজকের জায়গায় এসেছেন। শেখ হাসিনার বিকল্প এখন শেখ হাসিনাই।
সাবেক উপাচার্য আরও বলেন, না সরকারে, না রাজনৈতিক অঙ্গনে; তার নেতৃত্বের কোনও বিকল্প দেখা যাচ্ছে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শন দ্বারা প্রভাবিত শেখ হাসিনা জাতির পিতার অসম্পূর্ণ কাজগুলোই সম্পূর্ণ করছেন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ ধরেই তার কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নয়নের মহাসড়কে। ২১ ফেব্রুয়ারির মাতৃভাষা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করা, সমুদ্রসীমা জয়, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, স্যাটলাইটের মালিকানা, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণসহ বহু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনসহ সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বদানে বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকজন রাষ্ট্রনায়কের মধ্যে শেখ হাসিনা অন্যতম।