পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত ৩টি ব্যাংকের প্রতি শেয়ারে এক বছরে ২০ টাকার বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের ২০ টাকা বেড়েছে আর ডাচ বাংলা ও এনআরবি কমার্সিয়াল ব্যাংকের বেড়েছে ৩০ টাকারও বেশি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত এক বছরে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতে সবচেয়ে বেশি শেয়ারের দর বেড়েছে ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের। ব্যাংকটির প্রতি শেয়ারে বেড়েছে ৩০ টাকার বেশি। একই রকমের দর বেড়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ারে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের বেড়েছে শেয়ার প্রতি ২০ টাকার বেশি।
ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড
ব্যাংকটির শেয়ার দর আলোচ্য সময়ের মধ্যে সর্বনিন্ম কমে ছিলো ৫৬.৯০ টাকায়। আর সর্বোচ্চ দর বেড়েছে ৯১.৫০ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ব্যাংটির শেয়ার দর বেড়েছে ৩৪.৬০ টাকা। সবশেষ বুধবার ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮৪.৩০ টাকায়।
চলতি অর্থ বছরে ডাচ বাংলার প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) বেশ ভালো। চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১.৬৫ টাকা। একইসময়ে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয়েছে ৬০.২৯ টাকা।
সবশেষ অর্থবছরে ব্যাংকটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ নগদ এবং ১৫ শতাংশ বোনাস।
কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের শ্রেণি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সাল থেকে এই কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কমছে। উল্লেখিত বছরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানিটির মালিকানা ছিল ৪.৯৫ শতাংশ। বর্তমানে তা কমে ৪.৯১ শতাংশে অবস্থান করছে।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মালিকানা পরিবর্তিত না হয়ে অবস্থান করছে ০.০১ শতাংশে। তবে শেয়ারমূল্য বৃদ্ধিতে ব্যাংকটির শেয়ারের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। ২০২০ সালে কোম্পানিটির মালিকানায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ছিল ৮.০৫ শতাংশ, বর্তমানে তা ৮.০৯ শতাংশে অবস্থান করছে।
আর কোম্পানিটির ডিরেক্টরদের কাছে রয়েছে মালিকানার ৮৬.৯৯ শতাংশ শেয়ার। বর্তমানে কোম্পানিটির দীর্ঘমেয়াদি ঋণ রয়েছে দুই হাজার ৫৭৯ কোটি ৬০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর স্বল্পমেয়াদি কোনও ঋণ নেই।
এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড
ব্যংক খাতে একবছরে সবচেয়ে বেশি শেয়ার দর বাড়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চতুর্থে প্রজন্মের ব্যাংক এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড। গত মার্চে পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করার অল্প কিছু দিনেই তাদের শেয়ার দর বেড়েছে ৩০.৪০ টাকা। সবশেষ ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৩.২০ টাকায়।
ব্যাংকটির শেয়ার দর সর্বনিন্ম ১১ টাকায় লেনদেন হয়। আর সর্বোচ্চ ৪০.৪০ টাকায় লেনদেন হয়। অর্থাৎ ব্যাংকটির শেয়ার দর বেড়েছে ৩০.৪০ টাকা। চলতি অর্থবছরে প্রথম প্রান্তিকে তাদের শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ভালো। জানুয়ারি-মার্চ ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ০.৪৪ টাকা। আলোচ্য সময়ে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয়েছে ১৫.৮২ টাকা।
কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের শ্রেণি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এই কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কমছে। ২০১৯ সালে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানিটির মালিকানা ছিল ৬.৮৩ শতাংশ, বর্তমানে তা কমে অবস্থান করছে ২.৯৪ শতাংশে।
তবে শেয়ারমূল্য বৃদ্ধিতে ব্যাংকটির প্রতি আগ্রহ বেড়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। ২০২০ সালে কোম্পানিটির মালিকানায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ছিল ১৯.৮৫ শতাংশ, বর্তমানে তা ২৩.৭৪ শতাংশে অবস্থান করছে।
আর কোম্পানিটির ডিরেক্টরদের মালিকানায় ৭৩.৩২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বর্তমানে কোম্পানিটির দীর্ঘমেয়াদি ঋণ রয়েছে ১২৯ কোটি দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা। আর স্বল্পমেয়াদি কোনও ঋণ নেই ব্যাংকটির।
ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড
পুঁজিবাজারের ব্যাংক খাতে একবছরে শেয়ার দর সর্বোচ্চ বাড়ায় তৃতীয় অবস্থানে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড। আলোচ্য সময়ের মধ্যে তাদের সর্বনিন্ম শেয়ার দর কমে ছিলো ৩১.৯০ টাকায়। আর সর্বোচ্চ শেয়ার দর বেড়েছে ৫২.৮০ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ব্যাংকটির শেয়ার দর বেড়েছে ২০.৯০ টাকা। সবশেষ ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৭.৫০ টাকায়।
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি- মার্চ) ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.৯৩ টাকা। আলোচ্য সময়ে ব্যাংটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয়েছে ৩৬.২৪ টাকা। সবশেষ অর্থবছরে ব্যাংকটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১০ শতাংশ নগদ এবং ৫ শতাংশ বোনাস।
ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের শ্রেণি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সাল থেকে এই কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বেড়েছে। ২০২০ সালে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানিটির মালিকানা ছিল ৭.৯৭ শতাংশ, বর্তমানে তা বেড়ে অবস্থান করছে ১০.৫৩ শতাংশে।
তবে শেয়ারমূল্য বৃদ্ধির পরেও ব্যাংকটির শেয়ারের প্রতি আগ্রহ কমেছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। ২০২০ সালে কোম্পানিটির মালিকানায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ছিল ৬.২১ শতাংশ, বর্তমানে তা ৫.৩০ শতাংশে অবস্থান করছে। কমেছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও মালিকানা। ২০২০ সালে ব্যাংকটির বিদেশি মালিকানা ছিলো ৩৯.৫৭ শতাংশ, যা বর্তমানে অবস্থান করছে ৩৭.৯৩ শতাংশে।
কোম্পানিটির ডিরেক্টরদের কাছে রয়েছে মালিকানার ৪৬.২৪ শতাংশ শেয়ার। বর্তমানে কোম্পানিটির দীর্ঘমেয়াদি ঋণ রয়েছে এক হাজার ২৫৭ কোটি ২৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা। আর স্বল্পমেয়াদি কোনও ঋণ নেই ব্যাংকটির।।