করোনা মহামারিকালে দেশের উচ্চশিক্ষা খাতে সহায়তায় ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের পর্ষদ শুক্রবার ১৯ কোটি ১০ লাখ ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা) প্রায় ১ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা। একই সভায় আফগানিস্তানের অনুকূলে ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার অনুদান অনুমোদন করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, হাইয়ার এডুকেশন অ্যাকসেলারেশন ট্রানফরমেশন প্রজেক্ট’ নামে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে শিক্ষাখাতে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম আঞ্চলিক প্রকল্পের আওতায় এ অর্থায়ন অনুমোদিত হয়েছে। প্রকল্পটি উচ্চশিক্ষায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াবে, যার মধ্যে রয়েছে এ অঞ্চলের মধ্যে সমজাতীয় কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের গতিশীলতা, ক্রেডিট ট্রান্সফার স্কিম বা এক দেশ থেকে অন্য দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের সুযোগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাঝে অংশীদারিত্বের ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে আরও বেশি নারীকে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করা হবে, যা শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে সহায়তা করবে।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, কোভিড-১৯ অতিমারি দক্ষিণ এশিয়ার উচ্চশিক্ষা খাতকে ক্ষতির মুখে ফেলেছে, যার প্রভাবে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে এবং কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেনি। কোভিডের কারণে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর বৈরী প্রভাব পড়েছে এবং এর ফলে উচ্চশিক্ষা খাতে জেন্ডার বৈষম্য বাড়ছে। প্রকল্পটি ডিজিটাইজেশনের ওপর জোর দিয়ে উচ্চশিক্ষা খাতে অতিমারির কারণে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং টিকে থাকার পদ্ধতিগত সামর্থ্য বাড়াতে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, আমাদের সবার ভবিষ্যতের জন্য উচ্চশিক্ষা অপরিহার্য। বাংলাদেশের উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার আকাঙ্খা পূরণে একটি দক্ষ ও আর্ন্তজাতিকভাবে প্রতিযোগী সক্ষম শ্রমশক্তি তৈরিতে যুব জনগোষ্ঠীর মাঝে বিনিয়োগ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এই অর্থায়ন উচ্চশিক্ষায় বিশেষত নারীদের ক্ষেত্রে শিক্ষার মান বাড়াতে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে কোভিড-১৯ অতিমারির সময় শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখা নিশ্চিত করবে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ভার্চুয়াল গতিশীলতা’ তৈরিতে ‘দক্ষিণ এশিয়া উচ্চশিক্ষা পোর্টাল’ চালু হবে, যার মাধ্যমে নিবন্ধিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজ দেশের বাইরে অন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স নেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরা পোর্টালে সংযুক্ত হতে পারবেন। এটি জাতীয় গবেষণা ও শিক্ষা নেটওয়ার্কগুলোর মাঝে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করবে এবং শিক্ষার্থীদের যুক্ত হতে এবং সংযোগের জন্য সম্প্রসারিত সুবিধা দেবে। প্রকল্পটি বাংলাদেশের জাতীয় গবেষণা ও শিক্ষা নেটওয়ার্কের উন্নয়ন করবে এবং এই নেটওয়ার্কে যুক্ত শিক্ষার্থীদের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভর্তুকি মূল্যে সংযোগ প্যাকেজ দেবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হারে দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। আরও বেশি নারীকে গুণগতমানের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ দিতে, তুলনামূলক ভালো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে এবং তাদের নেতৃত্বে আনতে প্রকল্পটি নারী বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে যা প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের চ্ট্টগ্রামের ‘এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেন’ সমন্বয় করবে।
আফগানিস্তানে উচ্চশিক্ষা খাত দ্রুত বাড়ছে। তবে এ দেশের উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাত্র ৩০ শতাংশ নারী। আফগানিস্তানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর হেনরি কারালি বলেন ‘আঞ্চলিক এই প্রকল্প শিক্ষার্থীদের বিশেষত নারী শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের পর্যায়ে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে কাজ করার জন্য গড়ে তুলবে’।
প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের টাস্ক টিম লিডার মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘প্রকল্পটি দক্ষিণ এশিয়ায় মানসম্মত শিক্ষার জন্য বর্ধিত চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে। এছাড়া উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো উপকৃত হবে এবং এসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবন সক্ষমতা বাড়াবে।’
এই প্রকল্পের ঋণ বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) থেকে, যার মেয়াদ ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছর। বাংলাদেশ বর্তমানে সর্বাধিক আইডিএ গ্রহীতা দেশ, যার পরিমাণ ১৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি।