দেশে কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস) রোগের ভারতীয় ডেল্টা ধরনের সামাজিক সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে। ইতোমধ্যে এর প্রকোপ অনেক বেড়েছে। এ প্রজাতির জীবাণুর সংক্রমণ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। এমন পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ২৮ জুন থেকে পরবর্তী সাত দিন সারাদেশে কঠোর লকডাউন জারি থাকবে। পরে প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, সারাদেশেই উচ্চ সংক্রমণ, পঞ্চাশটির বেশি জেলায় অতি উচ্চ সংক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে। এটি প্রতিরোধে খণ্ড খণ্ডভাবে নেওয়া কর্মসূচির উপযোগিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অন্যান্য দেশ, বিশেষত পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অভিজ্ঞতা হলো, কঠোর ব্যবস্থা ছাড়া এর বিস্তৃতি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ঠেকাতে এবং জনগণের জীবনের ক্ষতি প্রতিরোধে জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন, অফিস-আদালতসহ সবকিছু বন্ধ রাখার কোনো বিকল্প নেই বলেই সরকার কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর এ ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে না পারলে আমাদের যত প্রস্তুতিই থাকুক না কেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অপ্রতুল হয়ে পড়বে বলে মনে করি।
করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ জুন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখল দেশ। এদিন স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ১০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ৯৭৬ জনের। একই সঙ্গে করোনা শনাক্তের হারও দ্রুত বাড়ছে। দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তের হার ২১.২২ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল দেশে করোনায় সর্বাধিক ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
প্রতিদিন যে হারে এ ভাইরাসে মানুষ সংক্রমতি হচ্ছে এবং মৃত্যুবরণ করছে তা রীতিমতো আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানা, যত্রতত্র ঘুরে বেড়ানো, আড্ডাবাজিসহ নানা কারণে কম বয়সিরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলে চিকিৎসকরা মনে করছেন। পাশাপাশি টিকা দেওয়ার পর করোনা জয় করার মনোভাবও কাজ করছে অনেকের মধ্যে। তাদের কারণে ঘরের বয়োবৃদ্ধ, নারী ও শিশুরা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। এমতাবস্থায় জীবন বাঁচাতে টিকা নেওয়া যেমন জরুরি, তেমনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটাও অত্যন্ত জরুরি।
সংক্রমণের আরও বৃদ্ধি ঠেকানোর জন্য লকডাউন থাকুক আর না-ই থাকুক মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোয়া, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রতি সবাইকে আরও মনোযোগী ও দায়িত্বশীল করে তোলার জন্য ব্যক্তিগত, পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি প্রতিটি বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকেও এ ক্ষেত্রে নিজেদের ভূমিকা আরও জোরদার করতে হবে। পাড়ায় পাড়ায় সচেতনতা কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে স্থানীয় নেতারা বড় ভূমিকা রাখতে পারবেন। প্রতিটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্যোগ নিতে হবে; সেই সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকে।