করোনাভাইরাস প্রতিরোধে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রথম ডোজ নেয়াদের শরীরে চার সপ্তাহ পর ৪১ শতাংশ ও দ্বিতীয় ডোজ নেয়াদের শরীরে দুই সপ্তাহ পর ৯৩ শতাংশ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের এক গবেষণায় জানানো হয়েছে।
টিকা নেয়া চিকিৎসক ও কর্মচারীদের ওপর পাঁচ মাস গবেষণা শেষে রবিবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে। বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এসএম সামসুজ্জামানের নেতৃত্বে ৩০৮ জনের ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়।
এক সংবাদ সম্মেলনে ফলাফল তুলে ধরে অধ্যাপক সামসুজ্জামান বলেন, আমরা অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রোজেনেকা ভ্যাকসিনের ১ম ও ২য় ডোজ নেয়া ৩০৮ জন চিকিৎসক ও কর্মচারীদের ওপর গবেষণা করি। এই গবেষণা ৫ মাস ধরে করা হয়েছিল। তাদের প্রত্যেকের শরীরে প্রথম ডোজ নেয়ার ৪ সপ্তাহ পরে নমুনা সংগ্রহ করে অংশগ্রহণকারী শরীরে ৪১ শতাংশ অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার দুই সপ্তাহ পর নমুনা সংগ্রহ করে অংশগ্রহণকারীদের শরীরে ৯৩ শতাংশ অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই অ্যান্টিবডি করোনা থেকে মুক্তির গ্যারান্টি না দিলেও মৃত্যুঝুঁকি কমিয়ে আনে। ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত শরীরে অ্যান্টিবডি থাকতে পারে। তবে বুস্টার ডোজ লাগবে কি না সেটি গবেষণার দাবি রাখে।
তিনি আরও বলেন, এই গবেষণা চালানো ৪২-৫০ বছরের বয়সীদের মধ্যে। করোনার ভ্যাকসিন নিলে করোনা হবে না, এ কথাটি ঠিক নয়। যাদের ভ্যাকসিন নেয়া থাকবে তাদের করোনা হলেও সিবিয়ার পর্যায়ে যাবে না বলে জানান তিনি।
ঢামেকের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. টিটু মিঞা সাংবাদিকদের বলেন, টিকা নেয়ার ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে।
এদিকে, গত মাসে পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের (পিএইচই) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দুই ডোজের পূর্ণাঙ্গ কোর্স করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ কার্যকর।
দেশে এ পর্যন্ত ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন, তাদের মধ্যে ৪২ লাখ ৮৩ হাজার ৮৪২ জন দুই ডোজ নিয়ে কোর্স শেষ করেছেন।
হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক জানান, সঠিক সময় সঠিক গবেষণা করেছেন আমাদের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের গবেষকরা। গবেষণাটি যারা করেছেন তাদের আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। এ ভ্যাকসিন নিলে আমরা ভালো একটা রেজাল্ট পাব। পাশাপাশি আমরা ভালো একটা প্রোটেকশন পেতে পারি। সেই বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে আমরা সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই। আরও গবেষণার জন্য প্রয়োজনে সহযোগিতা করা হবে বলেও আশ্বাস দেন হাসপাতালের পরিচালক।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অর্থায়নে গবেষণায় সার্বিক সহযোগিতা করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা এবং উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল আলম চৌধুরী।