সমন্বয়হীনতার কারণে শুরুর আগেই পিছিয়ে গেল ‘কঠোর লকডাউন’। শুক্রবার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল সোমবার সাত দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হবে। তবে শনিবার রাতে সেই সিদ্ধান্ত বদলে যায়। জানানো হয়, দেশব্যাপী কঠোরভাবে সর্বাত্মক লকডাউন বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে শুরু হবে। তবে সোমবার থেকে ‘সীমিত পরিসরে’ লকডাউন থাকবে।
শনিবার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে উচ্চপর্যায়ের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। রোববার প্রজ্ঞাপন দিয়ে সব কিছু স্পষ্ট করা হবে। সভায় উপস্থিত একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, সোমবার থেকে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দেওয়া হলেও অর্থবছরের শেষ সময় হওয়ায় সিদ্ধান্তে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। মার্কেট, হোটেল, রেস্তোরাঁসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে লকডাউন শুরু হবে। এই সময়ে কিছু কার্যক্রম চালু থাকবে। আর ১ জুলাই থেকে সাত দিনের সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হবে। লকডাউনে জরুরি সেবা ছাড়া বাকি সব কিছু বন্ধ হয়ে যাবে।
এর আগে গত শুক্রবার সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছিল, সোমবার থেকে সারাদেশে সাত দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হবে। এই সময়ে সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। জরুরি পণ্যবাহী ছাড়া সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে। শুধু অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসাসংক্রান্ত কাজে যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আগেই অর্থবছর সমাপ্তির বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি ছিল। আর কঠোর লকডাউন বা শাটডাউনের সুপারিশ এসেছে মানুষের জীবন রক্ষার স্বার্থেই। বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতা।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, আগের চেয়ে এবারের লকডাউন কঠোর হবে। মাঠ পর্যায়ে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হতে পারবেন না। শুধু জরুরি সেবা ছাড়া আর কোনো কিছুই চলবে না। গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক) লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে। আপাতত এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হলেও পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধে পরামর্শ কমিটি কঠোর বিধিনিষেধ জারির সুপারিশ করেছে। সেই আলোকে সারাদেশে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। পরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সময় আরও বাড়ানো হতে পারে। মাঠ পর্যায়ে লকডাউন পালনে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও নামতে পারে।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, ‘কঠোর লকডাউন’ বলতে যে চিন্তাটি করা হয়েছে সেটা হলো, শুধু জরুরি সেবা ছাড়া আর কোনো কিছুই চলবে না। এখন যেমন কিছু কিছু বিষয়ে নমনীয়তা দেখানো হচ্ছে, সেটি হয়তো তখন আর থাকবে না। বর্তমানে যে লকডাউন চলছে, সেখানে সব ধরনের গণপরিবহন চলছে। বাজার, শপিংমল খোলা রয়েছে। অফিস-আদালত, ব্যাংক, বীমা- সব কিছুই খোলা। বেসরকারি খাতেরও সব কিছুই খোলা। তবে ওষুধের দোকান, নিত্যপণ্যের দোকান জরুরি সেবার মধ্যেই পড়ে। তাই এগুলো লকডাউনেও খোলা রাখা যাবে।
কঠোর লকডাউনের ঘোষণায় শনিবার সকাল থেকে নিত্যপণ্যের বাজারে ভিড় বেড়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, কারওয়ান বাজার, রামপুরা, রায়ের বাজার, ধানমন্ডি, গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকার বাজার ও সুপারশপে ক্রেতার ভিড় তুলনামূলক বেশি চোখে পড়েছে।
বিক্রেতারা বলছেন, ৭ থেকে ১৪ দিনের মতো বাজার করছেন বেশিরভাগ ক্রেতা। তবে পণ্যের দাম আগের মতোই আছে বলে জানিয়েছেন তারা। এ ছাড়া লকডাউনের ঘোষণায় এরই মধ্যে রাজধানীর ঢাকা ও আশপাশের জেলা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে ছুটতে শুরু করেছেন অনেকেই। এ কারণে শনিবার সকাল থেকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটসহ দেশের অন্যান্য রুটেও যাত্রী, ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী গাড়ির চাপ বেড়েছে।