ঢাকার মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি তুলেছেন সংসদ সদস্যরা। তারা বলছেন, ওই ঘটনায় দায়ীদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে তা হতাহতদের পরিবার ও স্বজনদের দিতে হবে।
সোমবার জাতীয় সংসদের অধিবেশন চলাকালে পয়েন্ট অব অর্ডারে সংসদ সদস্যরা এসব কথা বলেন। বেলা ১১টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। এসময় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু শুরুতে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে মগবাজারের বিস্ফোরণ নিয়ে কথা তোলেন। তিনি ঘটনা তুলে ধরে বলেন, মগবাজারের দুর্ঘটনায় ৬ জন মারা গেছেন। অনেকে হাসপাতালে ভর্তি। ঢাকা শহরে যে সমস্ত হোটেল বা রেস্টুরেন্ট আছে এগুলোতে যে গ্যাস স্টোভ ইউজ হয় সেই গ্যাসের স্টোভ বা সিলিন্ডারগুলো কখনো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরিদর্শনের মাধ্যমে ইন্সস্পেকশন করা হয় কি-না এ প্রশ্নটা সামনে আসছে। কারণ আমরা দেখেছি বিভিন্ন প্রাইভেট গাড়িতে যে সমস্ত গ্যাস সিলিন্ডার রয়েছে সেগুলো ব্লাস্ট হওয়ার কারণে অনেক অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে এবং অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে।
গ্যাস সিলিন্ডার যেসব জায়গায় স্টোর করা হয় সেখানে যথাযথ কর্তৃপক্ষ নিয়মিত পরিদর্শন করেন কি-না, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলে জাপার এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, আমি জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীকে অনুরোধ করব এই যে ঘটনাটা গতরাতে ঘটল এটা আসলেই যদি গ্যাসের কারণে হয়ে থাকে তাহলে কি কারণে? এখানে গ্যাসের যে এত বড় একটা স্টোর ছিল এটা কি কোনো সময় ইন্সস্পেকশন করা হয়েছিল? এমনকি সারাদেশে যে সমস্ত জায়গায় গ্যাসের সিলিন্ডার স্টোর করা হয় প্রয়োজনীয় ইন্সপেকশন হয় কিনা? এগুলো যেন ইন্সস্পেকশন করা হয়। কারণ কাল রাতে যে দুর্ঘটনা ঘটলো এর কারণটা, এর প্রতিকার এবং এত মানুষ মারা গেল এতে কি কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে?
চুন্নু বলেন, যেসব হোটেল রেস্টেুরেন্টের কারণে এ ঘটনা ঘটছে তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা হবে কিনা? এই বিষয়ে একটি বিবৃতি দিতে মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি।
এরপর বিএনপি’র সংসদ সদস্য হারুন উর রশিদ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি এসব ঘটনা ঘটছে। গত বছর নারায়ণগঞ্জের মসজিদে নামাজরত অবস্থায় প্রায় ৪০ জন মানুষ মারা গেছেন, অনেকে আহত হয়েছেন। তাদেরকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয়েছে। গতকালকে রাজধানীর মগবাজারের মতো ব্যস্ততম এলাকায় যে দুর্ঘটনাটা ঘটেছে এর দায় সরকারকে নিতে হবে। এখানে (সংসদে) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নাই।
তিনি বলেন, যত্রতত্র যেখানে-সেখানে এভাবে রেস্টুরেন্ট উঠছে সেগুলোর সেফটি আছে কি-না? আমরা বিভিন্ন দেশে ঘুরে দেখি সেখানে লেখা থাকে-সেফটি ফার্স্ট। কিন্তু বাংলাদেশের কী অবস্থা? আজকে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ হয়ে লোক মারা যাচ্ছে। এই কাজগুলোতো বিদ্যুৎ বিভাগের। তাদেরকেতো জবাবদিহিতার আওতায় আসতে হবে।’ এসময় তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংসদ নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মগবাজারের আউটার সার্কুলার রোডে আড়ংয়ের বিপরীতে ওই ভবনটিতে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সর্বশেষ ৭ জন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। বিস্ফোরণে আশপাশের বেশ কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে ভবন থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে সেটি চারতলা। ধারণা করা হচ্ছে, এই ভবনের নিচতলা থেকে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে কী কারণে এই বিস্ফোরণ তা এখনো জানা যায়নি। বিকট শব্দের কারণে ঘটনাস্থলে থাকা তিনটি বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আশপাশের ভবনের কাঁচ ভেঙে পড়তে থাকে।