গত মে মাসে টানা বিমান হামলা চালিয়ে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ৩৯ হাজারের বেশি বাড়িঘরের ক্ষতি করেছে। এখন সেগুলো সংস্কার বা পুনর্নির্মাণও করতে দিচ্ছে না তারা। ফলে যুদ্ধবিরতির মাস পার হলেও এখনো খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হচ্ছে হাজার হাজার ফিলিস্তিনির।
গত মে মাসে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলিদের নির্বিচার হামলায় অন্তত ২৫৭ ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাদের মধ্যে ৬৬ শিশুও রয়েছে। বিপরীতে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে প্রাণ হারান বিদেশিসহ ১৩ জন।
গাজা সরকারের হিসাব অনুসারে, ১১ দিনের ওই যুদ্ধে ইসরায়েলের হামলায় উপত্যকার অন্তত ২ হাজার ২০০ ঘর পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ৩৭ হাজার।
গত ২১ মে মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস। যুদ্ধবিরতির আলোচনার সময় মধ্যস্থতাকারী দুই দেশ গাজায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর এবং রাস্তাঘাট পুনর্নির্মাণে ৫০০ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তার প্রস্তাব দেয়।
হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অভিযোগ, সংগঠনটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মদদ দেয়। গাজাবাসীর জন্য সংগ্রহ করা অর্থের সিংহভাগ তারা অস্ত্র কেনায় ব্যয় করে বলেও অভিযোগ দখলদারদের। ইসরায়েলের সন্দেহ, ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার পেলে তার বড় অংশ এ কাজেই ব্যয় করবে হামাস। অবশ্য রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলকে অস্বীকার করে আসা হামাস বরাবরই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ২০ লাখ অধিবাসীর দুই-তৃতীয়াংশের জীবনই সহায়তা-নির্ভর। ফলে গৃহহীনদের অবস্থা এখন আরও সংকটাপন্ন। কেউ কেউ জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুল বা অন্য কোনো ভবনে থাকছেন। অনেকের মাথার ওপরে শুধুই খোলা আকাশ।
এ অবস্থায় অর্থ সহায়তার কথা উঠলেই ইসরায়েল বলছে, ২০১৪ সালের যুদ্ধের সময় নিখোঁজ তাদের দুই সেনাসদস্য এবং দুজন বেসামরিক নাগরিককে ফিরিয়ে দিলেই কেবল অর্থসহায়তা পৌঁছাতে দেয়া হবে।
ইসরায়েলিদের এমন অযৌক্তিক দাবির ফলে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে ফিলিস্তিনিদের ঘরে ওঠার স্বপ্ন। কারণ, যে দুই সৈন্যকে ফেরত চাওয়া হচ্ছে ইসরায়েলই ইতোপূর্বে তাদের ‘মৃত’ ঘোষণা করেছে। তাছাড়া হামাসের মতে, ইসরায়েল আটক ফিলিস্তিনিদের ফিরিয়ে দিলেই কেবল বন্দি ইসরায়েলিদের ফিরিয়ে দেয়া যাবে।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে