সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়া, হিমবাহের বরফ গলা এবং বরফের ধস নামার কারণে পৃথিবীর অন্তত ৪১ কোটি মানুষ পানির নিচে হারিয়ে যাবে। গ্রিন হাউসের প্রভাবে বাড়ছে বিশ্ব উষ্ণায়ন৷ এর প্রত্যক্ষ প্রভাবে সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে৷ গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমানো সম্ভব না হলে আর ৮০ বছরের মধ্যে বিভিন্ন মহাসাগর ও সমুদ্রোপকূলবর্তী বিশ্বের অন্তত ৪১ কোটি মানুষ পানির নিচে হারিয়ে যাবে।
মহাসাগর ও সমুদ্রের জলস্তর অনেকটা উপরে উঠে আসার ফলে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বেন ইন্দোনেশিয়ার মানুষ। জলের অতলে তলিয়ে যাবে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দেশগুলোর ৬২ শতাংশ স্থলভাগ। যার জেরে বিপদাপন্ন হয়ে পড়বেন নিরক্ষীয় অঞ্চলের দেশগুলোর ৭২ শতাংশ মানুষ। তার মধ্যে শুধু এশিয়ারই ৫৯ শতাংশ মানুষ। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার কমিউনিকেশন্স’ এই উদ্বেগজনক খবর দিয়েছে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন দেশের এই ৪১ কোটি মানুষ যে স্থলভাগের উপর থাকেন এখনই সে সব জায়গা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ মিটারেরও কম উঁচুতে রয়েছে। ফলে, গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনের জন্য বিশ্ব উষ্ণায়নের রথের চাকায় রশি পরাতে না পারলে সমুদ্রের উঠে আসা জলস্তর আর ৮০ বছরের মধ্যেই ওই সব এলাকাকে নিয়ে যাবে জলের তলায়। ভারতের পশ্চিম উপকূলে আরবসাগর লাগোয়া বেশ কিছু অংশের মানুষ এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা।
গত বছর ক্লাইমেট অ্যান্ড অ্যাটমস্ফেরিক সায়েন্স-এর একটি গবেষণাপত্র জানায়, ২৩০০ সালের মধ্যে মহাসাগর ও সমুদ্রগুলোর জলস্তর সর্বাধিক ৫ মিটার পর্যন্ত উঠে আসার জোরালো আশঙ্কা রয়েছে।
উল্লেখ্য, পৃথিবীর ৫.৮ মাইল এলাকা বরফে ঢাকা। এই সমস্ত বরফ গলে গেলে পৃথিবীর সব সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ২৩০ ফুট বৃদ্ধি পাবে।যার ফলাফল হবে ভয়ঙ্কর। ফলে তলিয়ে যাবে সাতটি মহাদেশ।
বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানি। যা পোড়ানো থেকে উৎপন্ন হয় কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং তা থেকে গ্রিন হাউস গ্যাস৷ গ্রিন হাউস গ্যাসে বেড়ে যায় ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা৷ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মানব সৃষ্ট কারণ দায়ী করা হলেও বিভিন্ন কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। এই কারণগুলোর মধ্যে পৃথিবী কর্তৃক গৃহীত সৌর বিকিরণের পরিবর্তন, প্লেট টেক্টনিক্স ও আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ যাই হোক না কেন এর ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ছে মারাত্মকভাবে। আর এ কারণে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে ভয়ঙ্কর বিপদ।