রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের কারণে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে মুমূর্ষু রোগীর সুচিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বা আইসিইউয়ের জন্য রোগীর স্বজনরা হন্যে হয়ে ঘুরছেন।
রাজধানীর বাইরে যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে অনেকেই রোগী নিয়ে রাজধানীতে ছুটে আসছেন। তাদের অধিকাংশই প্রথমে সরকারি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের আইসিইউয়ের জন্য ছুটছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসার জন্য রাজধানীর পাঁচটি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের ৯০টি আইসিইউ শয্যার একটিও খালি নেই।
হাসপাতালগুলো হলো উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, ৫০০ শয্যার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ইউনিট-২) ও বার্ন ইউনিট, ৫০০ শয্যার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
এছাড়া রাজধানীর মোট ১৩টি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মধ্যে সম্প্রতি চালু হওয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল ছাড়া অন্যান্য হাসপাতালের ৮২টি শয্যার মধ্যে ২৫টি খালি আছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ২৬টি, ৫০০ শয্যার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১০টি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ইউনিট-২) ও বার্ন ইউনিটে ২০টি, ৫০০ শয্যার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪টি এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ বেড রয়েছে। এ পাঁচটি হাসপাতালের কোনোটিতেই আইসিইউ খালি নেই।
অন্যান্য করোনা ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালের মধ্যে ২৫০ শয্যার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের ১৬ টির মধ্যে আটটি, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ফুলবাড়িয়ায় ৬টির মধ্যে ১টি, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ১৫টির মধ্যে ২টি, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ১০টির মধ্যে ৪টি, ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতালে ৫টির মধ্যে ৩টি, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ১০টির মধ্যে ৪টি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)- ২০টির মধ্যে মাত্র তিনটি আইসিইউ খালি রয়েছে।
এর বাইরে রাজধানীর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) করোনা হাসপাতালে ২১২টির মধ্যে ১০২টি আইসিইউ বেড খালি রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সরকারি পর্যায়ে করোনা ডেডিকেটেড হিসেবে ঘোষিত ১৬টি হাসপাতালের মধ্যে ১৩টি হাসপাতালে সর্বমোট ৩৮৪টি আইসিইউ বেড রয়েছে। তার মধ্যে মোট ১২৭টি ফাঁকা রয়েছে। এই ১২৭টি বেডের মধ্যে ১০২টি বেডই ডিএনসিসি হাসপাতালের।
সরকারি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর মধ্যে জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট, জাতীয় নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল এবং অসংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে কোনো আইসিইউ বেড নেই।
বেসরকারি ২৮টি করোনা হাসপাতালে মোট আইসিইউ বেডের সংখ্যা ৪৪১টি।
২ জুলাই পর্যন্ত বেসরকারি হাসপাতালে ২৫৫টি আইসিইউ বেড খালি রয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ বেশি হওয়ায় অনেক রোগী ভর্তি হতে না পেরে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা অর্থাৎ আইসিইউয়ের চিকিৎসা না পেয়ে তাদের অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন।