গোল করার সংগ্রাম, দশ জনের দল নিয়েও গোল রক্ষা করার সংগ্রাম। সে সংগ্রামে সফলভাবেই উতরে গেছে সেলেসাওরা। লুকাস পাকেতার একমাত্র গোলে তারা চিলিকে হারিয়ে চলে গেছে কোপা আমেরিকার শেষ চারে।
গ্রুপপর্বে ব্রাজিল খেলেছে দুর্দান্ত। চার ম্যাচ খেলে জয় তুলে নিয়েছিল প্রথম তিনটিতে, শেষ ম্যাচে ড্র হলেও বি গ্রুপ থেকে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব রুখতে পারেনি সেটা। অন্যদিকে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ চিলির তো এ গ্রুপ থেকে উঠে এসেছেই কষ্টেসৃষ্টে। এক হার, দুই ড্রয়ের পর একটি জয় তুলে নিয়ে নকআউট নিশ্চিত করেছিল চিলি।
ইতিহাসও কথা বলছিল চিলির বিপক্ষে। সব ধরণের টুর্নামেন্টে ১৬ বারের দেখায় ব্রাজিলের বিপক্ষে চিলিয়ানদের জয় ছিল মাত্র একটিতে, হেরেছে ১৩ ম্যাচে। সর্বশেষ দেখা যেবার হয়েছিল, সেই ২০০৭ সালে তারা ব্রাজিলের কাছে হেরেছিল ৬-১ গোলে।
সেই চিলিই কিনা ব্রাজিলের সামনে হাজির হয় দুর্বার রক্ষণ নিয়ে। ম্যান মার্কিংয়ের কৌশলে ব্রাজিলকে বোতলবন্দি রেখেছিল প্রথমার্ধে। ফলে বলের দখল আর মুহুর্মুহু আক্রমণ করেও গোলের দেখা মেলেনি নেইমারদের।
যদিও বলার মতো সুযোগটা প্রথম তৈরি করেছিল চিলিই। ম্যাচে প্রথমবার ভালো এক আক্রমণে উঠে আসা এদুয়ার্দো ভার্গাসের শটটা দারুণভাবে প্রতিহত করেন ব্রাজিলের গোলরক্ষক এডারসন মোরায়েস।
ব্রাজিল তাদের প্রথম আক্রমণটা পায় ১৫ মিনিটে। রিশার্লিসনের আক্রমণ অবশ্য শেষ হয়েছে চিলি গোলরক্ষক ক্লদিও ব্রাভোর হাতে। রিশার্লিসনের শটটা সহজ এক সেভেই শেষ করেন তিনি।
২২ মিনিটে আরও এক আক্রমণ সেলেসাওদের। নেইমার করে বসেন দারুণ এক ক্রস। কিন্তু বলের নাগাল পাননি ফিরমিনো, ফলে সে যাত্রাতেও গোলের দেখা পায়নি ব্রাজিল। মিনিট পাঁচেক পর আক্রমণে উঠে এসেছিল চিলি। আবারও সেই ভার্গাসের শট ঠেকান ব্রাজিল গোলরক্ষক এডারসন।
৩২ মিনিটে চিলি রক্ষণ বল হারায় ব্রাজিল রাইটব্যাক দানিলোর কাছে। কিন্তু সে আক্রমণটা শেষ হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট এক শটে। ৪০ মিনিটে পেনাল্টির আবেদন তুলেছিল ব্রাজিল। বক্সে মাউরিসিও ইসলার সঙ্গে সংঘর্ষে মাঠে পড়ে যান রিশার্লিসন। কিন্তু সে আবেদনে সাড়া দেননি ম্যাচের আর্জেন্টাইন রেফারি। এর মিনিট তিনেক পর ব্রাজিল ফরোয়ার্ড গ্যাব্রিয়েল জেসুসের দারুণ এক শট প্রতিহত হয় ব্রাভোর হাতে। ফলে বিরতির আগে কোচ তিতের শিষ্যদের ফিরতে হয় খালি হাতেই।
প্রথমার্ধে উইং ধরে দারুণ সব আক্রমণ হলেও ছিল না মাঝমাঠের দখল, সৃষ্টিশীলতা। সেটার অভাব ঘোচাতেই দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ব্রাজিল কোচ তুলে নেন রবার্তো ফিরমিনোকে। মাঠে আসেন লুকাস পাকেতা। তারই যেন অপেক্ষা ছিল ব্রাজিলের। নামার পর প্রথম মিনিটেই করলেন গোল। ৪৬ মিনিটে নেইমারের সঙ্গে বল দেওয়া নেওয়া করে দারুণ এক গোল করে বসেন এসি মিলান মিডফিল্ডার। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ব্রাজিল, নকআউটে যে গোল মহামূল্য।
তবে গোলের স্বস্তিটা মাত্র দুই মিনিট টিকল ব্রাজিলের। বল জিততে গিয়ে চিলির ফুটবলার মেনার মুখে লাথি মেরে বসেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস। অবধারিত লাল কার্ডটাই জেসুসকে দেখান রেফারি। সেলেসাওরা পরিণত হয় দশ জনের দলে।
সে সুযোগটাই এরপর নেওয়ার দারুণ চেষ্টা করেছে চিলি। ৬২ মিনিটে ফল প্রায় পেয়েই গিয়েছিল। কিন্তু বেরসিক লাইন্সম্যান তুলে বসেন অফসাইডের পতাকা। প্রথমার্ধে ব্রাজিল রক্ষণে হানা দেওয়া ভার্গাসই বল জড়িয়েছিলেন জালে। কিন্তু লাইন্সম্যান দেখতে পান, ফ্রি কিক থেকে বলটা রিসিভ করার আগেই তিনি চলে গিয়েছিলেন অফসাইডে, ফলে গোল আর পাওয়া হয়নি চিলির।
ম্যাচের পরের গল্পটা প্রতি আক্রমণে নেইমারদের উঠে আসার, নাহয় বাকি সময়ে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় রক্ষণকাজে মন দিয়েছে ব্রাজিল। ৬৭ মিনিটে তিতের শিষ্যরা উঠে এসেছিল প্রতি-আক্রমণে। নেইমারের শটটা সে যাত্রাতেও ঠেকিয়ে দেয় ক্লদিও ব্রাভো।
এর মিনিট দুয়েক পর চিলির আরও এক আক্রমণ শেষ হয়েছে ব্যর্থতায়। তবে এ আক্রমণটা ব্যর্থতার চেয়ে দুর্ভাগ্যের মিশেলই যেন বেশি ছিল। মেনার ক্রস থেকে ব্রেরেটনের হেডার ব্রাজিল গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়েই দিয়েছিল, কিন্তু এরপর তা প্রতিহত হয় ক্রসবারে। আরও একবার সমতা ফেরাতে ফেরাতেও হয়নি চিলির। ৭৮ মিনিটে আবারও ভার্গাসের আক্রমণ, সেবারও তা ঠেকান এডারসন।
এরপর দশ জনের ব্রাজিলের বিপক্ষে আরও আক্রমণ গুছিয়েছে চিলি। কিন্তু জমাট সেলেসাও রক্ষণ ভাঙা আর সম্ভব হয়নি তাদের। ফলে এক গোলের কষ্টার্জিত জয় নিয়ে ব্রাজিল নিশ্চিত করে শেষ চারের টিকিট।