করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেনের উচ্চ চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উদ্ভাবিত যন্ত্র অক্সিজেট ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন না পাওয়ায় বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বুয়েট বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের উদ্ভাবিত ‘অক্সিজেট’ নামের সি-প্যাপ ভেন্টিলেটরটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পরও ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন পায়নি। সোমবার এই বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অনীক আর হক। এরপর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন একক ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এই পর্যবেক্ষণ দেন।
অনীক আর হককে উদ্দেশ্যে করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইনোভেটিভ মাইন্ডের। প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার জন্য তার মূখ্য সচিবকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানান। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং অ্যাটর্নি জেনারেলকেও জানান।
এর আগে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন উল্লেখ করে আইনজীবী অনিক আর হক আদালতকে জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে অক্সিজেনের সংকট দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে বুয়েট উদ্ভাবিত স্বল্পমূল্যের সি-প্যাপ ভেন্টিলেটর ডিভাইস ব্যবহারে সংকট কিছুটা হলেও কমাতে পারে।
অনিক আর হক বলেন, যন্ত্রটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও সম্পন্ন হয়েছে। এটি দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কয়েকজন করোনা রোগীকে হাই ফ্লো অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এটি ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছে না। তারা বলেছে, কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য না হলে অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয় ।
তার এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেন, সরকারের ক্রয়নীতি আছে। বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। তখন আইনজীবী বলেন, এটি তো অনেক সময়সাপেক্ষে। হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার সংকটে প্রাণহানি বাড়ছে। সেক্ষেত্রে অক্সিজেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এই পর্যায়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, এই ধরনের ডিভাইস নিয়ে পাবলিক ক্যাম্পেইন দরকার। আপনি এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দেন। প্রধানমন্ত্রী ইনোভেটিভ মাইন্ডের। তার নজরে আনার জন্য মুখ্য সচিবকে চিঠি দেন।’ পরে অনিক আর হক আদালতকে বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেলকে জানিয়েছি। মুখ্য সচিবকেও জানাবো। আশা করছি ভালো কিছু হবে।
উল্লেখ্য, বুয়েট বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের উদ্ভাবিত ‘অক্সিজেট’ নামক স্বল্পমূল্যের সি-প্যাপ ভেন্টিলেটর ডিভাইসটি বিদ্যুৎ ছাড়াই শুধুমাত্র অক্সিজেন সিলিন্ডার বা মেডিকেল অক্সিজেন লাইনের সঙ্গে সংযুক্ত করে ব্যবহার করা যাবে।
গত ১১ মে বুয়েটের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনা আক্রান্ত রোগীর শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিলে প্রথমে স্বল্প মাত্রায় অক্সিজেন দেওয়া হয়। কিন্তু এই স্বল্পমাত্রায় রোগীর অবস্থার উন্নতি না হলে উচ্চগতির অক্সিজেন প্রবাহ প্রয়োজন পড়ে যা রোগীর অবস্থার অবনতি রোধ করতে পারে।
করোনা প্রকোপ শীর্ষে থাকা অবস্থায় দেশের হাসপাতালগুলোতে অনেক সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে হাই- ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা যন্ত্র পাওয়া যায় না। এছাড়া এ যন্ত্রগুলো ব্যয় বহুল ও ব্যবহার কৌশল জটিল হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হয়। সহজে ব্যবহারযোগ্য অক্সিজেট সি-প্যাপ এই ঘাটতি পুরণে সাহায্য করবে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) অনুমোদনক্রমে এটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ সফলভাবে অতিক্রম করে তৃতীয় ধাপের অনুমতি লাভ করেছে বলে বুয়েটের ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
অক্সিজেট সি-প্যাপ প্রকল্পটির সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে রয়েছেন বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. তওফিক হাসান। তার সঙ্গে আছেন একই বিভাগের মীমনুর রশিদ, কাওসার আহমেদ, ফারহান মুহিব, কায়সার আহমেদ, সাঈদুর রহমান।