জিম্বাবুয়ে সফরের টেস্ট দলে তিনি ছিলেনই না। শেষ মুহূর্তে কয়েকজনের চোট-শঙ্কায় অন্তর্ভূক্ত হন। আর একাদশে জায়গা পেয়েই নিজের অপরিহার্যতা আরও একবার প্রমাণ করলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। চাপের মুখে ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসটাই খেললেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। তাসকিন আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে রেকর্ড জুটি গড়লেন। যার ওপর ভর করেই কঠিন বিপদ থেকে উদ্ধার হলো দল।
হারারে টেস্টে জিম্বাবুয়ের বোলিং তোপে ১৩২ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশ দুইশ পর্যন্ত যেতে পারবে কি না, একটা সময় সেটা নিয়েই সংশয় ছিল। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ আর তাসকিন মিলে রূপকথার এক জুটি গড়ে দলকে বসিয়ে দিয়েছেন চালকের আসনে।
১২৬ ওভার ব্যাটিংয়ের পর টেস্টের দ্বিতীয় দিনে প্রথম ইনিংসে ৪৬৮ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ শেষ পর্যন্ত অপরাজিতই রয়ে গেছেন ক্যারিয়ারসেরা ১৫০ রানে।
এর আগে মাহমুদউল্লাহর টেস্ট ক্যারিয়ারে সেরা ইনিংসটি ছিল ১৪৬ রানের। ২০১৯ সালে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেটা করেছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
ওই ম্যাচেও বড় জুটি গড়েছিলেন। সৌম্য সরকারকে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে ২৩৫ রানের জুটি গড়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। যেটি কিনা বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের সপ্তম সেরা জুটি।
এই মাহমুদউল্লাহ আরও একবার দেখালেন, তিনি ফুরিয়ে যাননি। বয়সটা ৩৬ ছুঁইছুঁই হলেও দলের বিপদে হাল ধরার মতো সামর্থ্য এখনও আগের মতোই আছে তার।
নবম উইকেটে তাসকিনকে নিয়ে ১৯১ রানের জুটিতে বেশ কয়েকটি রেকর্ডে নাম লেখালেন মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই উইকেটে এটিই সেরা। নবম উইকেটে যে কোনো দলের সেরা জুটি হারারের স্পোর্টস ক্লাব মাঠেও।
শেষ পর্যন্ত মিলটন সাম্বার ঘূর্ণিতে তাসকিন আহমেদ ব্যক্তিগত ৭৫ রানে বোল্ড হলে ভেঙেছে রেকর্ডগড়া জুটিটি। ১৩৪ বলে তাসকিনের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসটিতে ছিল ১১টি বাউন্ডারির মার।
দলীয় ৪৬১ রানে তাসকিন ফেরার পর আর বেশিদূর এগোয়নি বাংলাদেশের ইনিংস। এবাদত হোসেন এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন শূন্য রানেই। ৭ রান যোগ করেই থামে টাইগাররা।
তবে মাহমুদউল্লাহ শেষ পর্যন্ত অপরাজিতই ছিলেন। ক্যারিয়ারসেরা ১৫০ রানের হার না মানা ইনিংসে ১৭ বাউন্ডারির সঙ্গে একটি ছক্কা হাঁকান তিনি।
জিম্বাবুইয়ান বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ব্লেসিং মুজারবানি। ৯৪ রান খরচায় বাংলাদেশের ৪ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরের পথ দেখিয়েছেন তরুণ এই পেসার। ২টি করে উইকেট শিকার ডোনাল্ড তিরিপানো আর ভিক্টর নিয়াচির।
এই টেস্টে টস জিতে প্রথম ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। শুরুতেই ৮ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়েছিল টাইগাররা। সেখান থেকে অধিনায়ক মুমিনুল হকের ৭০ রানের ইনিংসে প্রাথমিক বিপদ সামলে নিলেও পরে আবার ধাক্কা খায় সফরকারি দল।
১৩২ রানের মধ্যে হারিয়ে বসে ৬ উইকেট। সেখান থেকে লিটন দাস আর মাহমুদউল্লাহ মিলে গড়েন ১৩৮ রানের জুটি। মাত্র ৫ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন লিটন। ১৪৭ বলে ১৩ বাউন্ডারিতে ৯৫ রান করে তিরিপানোকে পুল খেলতে গিয়ে ক্যাচ হন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান। পরের বলেই মেহেদি হাসান মিরাজকেও তুলে নেন জিম্বাবুইয়ান পেসার।
কিন্তু নবম উইকেটে স্বাগতিকদের চমকে দেন মাহমুদউল্লাহ আর তাসকিন। তাদের ১৯১ রানের জুটিটিই বলতে গেলে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছে। একটা সময় ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশই এই টেস্টে এখন চালকের আসনে।