সরকার কোরবানির ঈদ ও লকডাউন নিয়ে দুর্ভাবনায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা শহরে লকডাউন
ফাইল ছবি

কোরবানির ঈদ ও চলমান লকডাউন নিয়ে কঠিন ভাবনায় পড়েছে সরকার। করোনা সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউন ১৪ জুলাইয়ের পর আরও বাড়বে কি না, অথবা বাড়ানো যৌক্তিক হবে কি না- তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছে। চলছে গভীর পর্যালোচনা। করোনা সংক্রমণের গতি কোন দিকে- তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণও হচ্ছে। তাই কোরবানির ঈদের সময় দেশে চলমান লকডাউন অব্যাহত থাকবে কি না, নাকি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হবে, তা নিয়েও চলছে নানা পর্যায়ে আলোচনা। যদিও সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্তাব্যক্তিরা বলছেন পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র জানিয়েছে, একদিকে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব কোরবানির ঈদ, অপরদিকে করোনা মহামারি। রাষ্ট্র কোনটিকে গুরুত্ব দেবে সেই ভাবনায় পড়েছে সরকার। ঈদকে গুরুত্ব দিলে লকডাউন তুলে নিতে হবে, নতুবা ঢিলেঢালা করতে হবে। এতে করোনা বাড়বে। করোনা বাড়লে জীবন হুমকিতে পড়বে।

অপরদিকে করোনাকে গুরুত্ব দিলে ঈদের আনন্দ ম্লান হবে। সেটি সাধারণ মানুষকে কতটা মানানো যাবে তা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট সন্দেহ। কারণ, সারা বছর ইটপাথরের এই রাজধানীতে বসবাস করা শ্রমজীবী মানুষগুলো শেকড়ের সন্ধানে, নাড়ির টানে, মাটির টানে গ্রামে যান পরিবার পরিজনের সঙ্গে মিলিত হতে। সাধারণ মানুষের এই যাওয়া যে কোনও কিছু দিয়ে ঠেকানো যায় না রোজার ঈদ তার জলন্ত দৃষ্টান্ত।

করোনা যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে মানুষকে সংক্রমিত করছে, তাতে এবারের কঠোর লকডাউন কোনওভাবে ফেল করলে পরিস্থিতি কেমন হবে তা কল্পনা করতেও গা শিউরে ওঠে। এবারের লকডাউন যদি কোনও কারণে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভবিষ্যতে কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে- সেটাও একটা বড় চিন্তার বিষয়। এদিকে সময়ও খুব কম। সিদ্ধান্ত নিতে হবে আগামী কয়েকটি দিনের মধ্যে। প্রস্তুতিরও একটা বিষয় রয়েছে। সরকার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, মানুষকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে এই বিধি-নিষেধ দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে মানুষ যদি বিধি-নিষেধ মেনে চলে তাহলে সামনে সুফল পাওয়া যাবে। এজন্য আমাদের সবাইকে সরকারি বিধি-নিষেধ মানতে হবে। তবে ১৪ জুলাইয়ের পর বিধি-নিষেধের মেয়াদ বাড়বে কি না তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।

সূত্র জানিয়েছে, বছরে দুটি উৎসবের একটি কোরবানির ঈদ। এই ঈদকে কেন্দ্র দেশের সমগ্র অর্থনীতি চাঙা হয়। গ্রামীণ অর্থনীতিও চাঙা হয় পশু বেচাকেনার ওপর ভিত্তি করে। কাজেই লকডাউন চলমান থাকলে কোরবানির পশু বিক্রির ওপর নির্ভরশীল নির্ভর করা অর্থনীতি চরম ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

এদিকে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২০ বা ২১ জুলাই বাংলাদেশে ঈদ-উল আজহা উদযাপিত হবে। ঈদের তারিখ নির্ধারণে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আগামী ১১ জুলাই বসবে চাঁদ দেখা কমিটি। তবে ২১ জুলাই ঈদ ধরে, সে হিসেবে সরকারি ছুটি ২০-২১-২২ জুলাই (মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার)- এই তিন দিন ধরা আছে। পরের দুদিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। এই হিসেবে কোরবানিতে ঈদের সরকারি ছুটি হবে পাঁচদিন। আর সেই ছুটিতে কর্মস্থল ত্যাগ করা যাবে কি না, সেটি নিয়েও আলোচনা চলছে।

এদিকে গত ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউনে অফিস-আদালত, ব্যবসা বাণিজ্য, দোকানপাট শপিংমল, মার্কেট গণপরিবহণ বন্ধ রাখা হয়েছে। সাধারণ মানুষের ভাষায় লকডাউন আর সরকারের ভাষায় বিধি-নিষেধ বাস্তবায়নে মোতায়েন করা হয়েছে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার। মাঠে কাজ করছে ১০৬টি মোবাইল কোর্ট। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হলেই জেল বা জরিমানার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন আরও জানিয়েছেন, গত ঈদে মানুষ যেভাবে বাড়িতে গেছে তার প্রভাব আমরা দেখেছি। তাই এবারের ঈদটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ করোনা যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তা চিন্তার বিষয়। প্রতিমন্ত্রী বলেন, তৃতীয় সপ্তাহটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ১৪ তারিখ পর্যন্ত সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করবো। তারপর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবো। এরপর পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নিতে পারবো। সরকার মনে করছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার একমাত্র উপায় চলমান বিধি-নিষেধ অব্যাহত রাখা। যে কোনওভাবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমানোই এখন মূল লক্ষ্য।

তিনি আরও বলেন, আবারও ১২ অথবা ১৩ জুলাই আমরা পরের সিদ্ধান্ত নেব। গভীরভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। গত ঈদের মতো যাতে পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেজন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।

শেয়ার করুন