রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডি : লাশের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২১ থেকে ৩০ দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢামেকের মর্গে লাশের স্তুপ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৫২ শ্রমিকের লাশ পেতে আরও অপেক্ষা করতে হবে ২১ থেকে ৩০ দিন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ফরেনসিক বিভাগ বলছে, অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের লাশ খালি চোখে চেনার উপায় নেই, তাই শনাক্তে এখন ভরসা ডিএনএ টেস্ট। আর এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত লাশ পেতে অপেক্ষা করতে হবে নিহতদের স্বজনদের।

আজ শনিবার (১০ জুলাই) জানা গেছে, শনাক্তের জন্য ইতোমধ্যে ২৫ লাশ এবং ৩৫ জন স্বজনের স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়েছে। আর লাশ হস্তান্তরের যেহেতু সময় লাগবে, ততদিন সেগুলো মর্গে ফ্রিজিং করে রাখা হবে। এরই মধ্যে ঢামেক হাসপাতালের মর্গ থেকে ৪৮ মরদেহের মধ্যে ১৫টি মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে স্থানান্তর করা হয়েছে।

universel cardiac hospital

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (ফরেনসিক) রোমানা আক্তার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নিহত শ্রমিকদের শনাক্তের জন্য তাদের স্বজনদের স্যাম্পল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এরপর এসব স্যাম্পলের প্রোফাইলিং করে নিহত শ্রমিকদের ডিএনএ’র সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। এরপর যাদের সঙ্গে ডিএনএ ম্যাচ করবে তাদের কাছে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লাশ হস্তান্তর করা হবে।

প্রোফাইলিংয়ের জন্য কোন ধরনের স্বজনদের নমুনা নেওয়া হচ্ছে- এ বিষয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, স্যাম্পল নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা বাবা-মাকে প্রথমে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। বাবা-মা না থাকলে ভাইবোন, সন্তানদের অগ্রাধিকার দিয়ে স্যাম্পল সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করে লাশ শনাক্ত করতে ২১ থেকে ৩০ দিন লাগবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে শনিবার (১০ জুলাই) সকালেও সেজান জুস কারখানা এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে নিহত শ্রমিকদের স্বজনদের ভিড় রয়েছে। গত দুদিন ধরে কারখানা ও হাসপাতাল দৌড়াদৌড়িতে ক্লান্ত এই মানুষগুলো এবার লাশের অপেক্ষায়। সান্ত্বনা হিসেবে নিহতের লাশটি সঙ্গে নিয়ে শেষ বারের মতো বাড়ি ফিরতে চান তারা।

লাশ কীভাবে পাওয়া যাবে তা ইতোমধ্যে তারা জেনেছেন। তারপরও মর্গ ছেড়ে যেতে চাইছেন না। নিহত শ্রমিকদের লাশ মর্গে আর তাদের স্বজনরা অপেক্ষা করছেন বাইরে। এদের মধ্যেই একজন সুজন মিয়া। কিশোরগঞ্জের এই বাসিন্দার কিশোরী মেয়ে ফাতেমা ওই কারখানায় কাজ করতো। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে মেয়ের খোঁজ পাচ্ছেন না তিনি।

সুজন মিয়া পরিবার নিয়ে রূপগঞ্জেই থাকতেন। অগ্নিকাণ্ডের পর হাসপাতাল, আর কারখানা; অসংখ্যবার চক্কর কেটেছেন তিনি। মেয়ে বেঁচে না থাকলে অন্তত তার লাশটা দাবি করেছেন এই বাবা। সুজন মিয়ার মতো অসংখ্য মানুষ তাদের স্বজন, সন্তান ও বাবা মা খুঁজছেন এখনও।

বৃহস্পতিবার (৮ জুন) বিকাল সাড়ে ৫টায় সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুডস লিমিটের ছয় তলা একটি কারখানায় হঠাৎ আগুন লাগে। প্রায় ২৪ ঘণ্টার চেষ্টায় শুক্রবার (৯ জুন) বিকালে সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নিচতলা, দোতালা, তৃতীয় ও চতুর্থ তলা থেকে একে একে উদ্ধার করা হয় ৪৮টি মৃতদেহ। আগুনে পুড়ে ছাড়খার হওয়ায় পরিচয় শনাক্ত করতে উদ্ধার করা সেসব মৃতদেহ আনা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে।

শেয়ার করুন