নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একসঙ্গে এত শ্রমিকের মৃত্যুতে আমরা গভীর শোকাহত। ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক। বর্তমানে দেশ এমনিতেই করোনা দুর্যোগের অভিঘাতে বিপর্যস্ত। আর এই সময়ে রূপগঞ্জে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডকে নিছক দুর্ঘটনা বলার সুযোগ নেই। এ মর্মান্তিক ঘটনাটিকে হত্যাকাণ্ড বলে অভিহিত করেছেন ওই কারখানার বেঁচে যাওয়া কর্মীরা।
জানা যায়, ভবনটির কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ ছিল, বন্ধ ছিল চারতলার সিঁড়ির দরজা। ফলে ভবনে আগুন লাগার পর এর কর্মীরা না পেরেছেন ছাদে যেতে, না পেরেছেন বের হয়ে আসতে। এ কারণে হতাহতের সংখা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন অগ্নিনির্বাপণে অংশ নেওয়া ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা। কারখানার শ্রমিকদের অভিযোগ, ভবনটিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল একেবারেই নাজুক। জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত বের হওয়ার পথ না থাকলেও বিভিন্ন ফ্লোরে বিদ্যমান কেচিগেটগুলোও সব সময় বন্ধ রাখা হতো। কাজেই এটা স্পষ্ট যে, কারখানা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই অর্ধশতেরও বেশি মানুষকে এভাবে প্রাণ হারাতে হলো। আহত হতে হলো আরও অর্ধশত মানুষকে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে আমরা জেনেছি, অনেক অভিভাবক তাদের এমন সন্তানদের খুঁজে এসেছেন, যাদের বয়স ১২ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। এই ঘটনাগুলোর সত্যাসত্য যাচাই করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, কোনো কারখানায় আগুন লাগলে অথবা কোনো দুর্ঘটনার পর যে ভবনে কারখানা অবস্থিত ওই ভবনের নির্মাণত্রুটি এবং কারখানা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা, কারখানার অব্যবস্থাপনা- এসব বিষয় আলোচনায় আসে। তাই এসব প্রতিষ্ঠান নজরদারির দায়িত্বে যারা রয়েছেন, তারা কতটা সঠিকভাবে সেই দায়িত্ব পালন করছেন, তাও খতিয়ে দেখা জরুরি। এ কাজে নিয়োজিত কেউ দুর্নীতির আশ্রয় নিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তবে সবকিছুর আগে আহতরা যাতে উপযুক্ত চিকিৎসা এবং ক্ষতিগ্রস্তরা যথাযথ ভাবে ক্ষতিপূরণ পান, তার ব্যবস্থা করতে হবে।