বিধিনিষেধ শিথিলে সংক্রমণ নিয়ে নতুন শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পশুর হাট
ফাইল ছবি

করোনার প্রকোপ ঠেকাতে কঠোর বিধিনিষেধের ১৪ দিন শেষ হয়েছে গত মধ্যরাতে। ইতিমধ্যে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আজ থেকে আট দিন বিধিনিষেধ শিথিলের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে এই সময়ে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিধিনিষেধ শিথিলের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে জনসাধারণের সুবিধার কথা চিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।

বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন নিয়মিত সংবাদ বুলেটিনে বলেন, ‘ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই আট দিনের জন্য লকডাউনের যে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে, তাতে সারাদেশে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে চালু হওয়া গণপরিবহন, শপিংমল ও কোরবানির পশুর হাটে যদি স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে মানা না হয়, তবে সংক্রমণের মাত্রা কমার কোনো সুযোগ থাকবে না।’

দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোরবানির পশুর হাটে মাস্কের ব্যবহার ১০০ ভাগ করা না গেলে সংক্রমণের মাত্রা আপ্রাণ চেষ্টা করেও কমানো যাবে না। তাই জনে জনে যেন স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয় সেজন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও অনুরোধ জানাই।’

ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘বিধিনিষেধ শিথিল করা হোক বা না হোক, যদি স্বাস্থ্যবিধি ঠিকমতো মেনে চলা হয়, তাহলে আশা করছি সংক্রমণ এতটা ছড়াতে পারবে না। কিন্তু আমরা দেখেছি স্বাস্থ্যবিধি সেভাবে মানা হচ্ছে না। এভাবে যদি চলতে থাকে, আমরা ভাবছি ঈদ পরবর্তী সময়ে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।’

তবে সাময়িক সময়ের জন্য বিধিনিষেধ শিথিল হলেও ২৩ জুলাই থেকে আবার কঠোর বিধিনিষেধের জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সেই সময় সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। তবে সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থল এলাকায় অবস্থান করবেন এবং দাপ্তরিক কাজ ভার্চুয়ালি সম্পন্ন করবেন; সকল প্রকার শিল্প কারখানা বন্ধ থাকবে, যা এতদিন লকডাউনের মধ্যে খোলা রাখার অনুমতি ছিল; সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) সকল প্রকার যন্ত্র চালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে; শপিংমল/মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে; সব পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে; জনসমাবেশ হয় এই ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি) রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

এদিকে বুধবার সরকারি তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, বিধিনিষেধ শিথিল করা হলেও এই সময়ে বিনোদন কেন্দ্র, পর্যটন স্পট ও সবধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, বিধিনিষেধ শিথিল ঘোষণা করা হলেও সকল পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হবে। জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পরিহার করতে হবে।

শঙ্কা পশুর হাট নিয়ে

ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসবে। ইতিমধ্যে হাটের সংখ্যা কমানো হয়েছে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারেও জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আশঙ্কা করা হচ্ছে, জনসাধারণের অসচেতনতার কারণে পশুর হাটই হতে পারে করোনা সংক্রমণের বড় ক্ষেত্র।

সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পশু এমনভাবে রাখতে হবে যাতে ক্রেতারা নিজেদের মধ্যে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে হাটে অবস্থান করতে পারেন৷ সেভাবেই হাটে গবাদি পশু তুলতে হবে৷ এর বেশি পশু রাখা যাবে না৷ হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে মাস্ক পরতে হবে৷ আর গরু কিনতে দুইজনের বেশি হাটে যেতে পারবেন না৷ হাটের আয়তন অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব রেখে যত জন ক্রেতা এক সঙ্গে প্রবেশ করতে পারেন, ততজন প্রবেশ করবেন৷ বাকিরা বাইরে অপেক্ষা করে পর্যায়ক্রমে প্রবেশ করবেন৷ হাটে প্রবেশের পথে শরীরের তাপমাত্রা মাপা ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকবে৷ হাটের ভেতরেও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা৷ হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থাও রাখতে হবে প্রতিটি হাটে৷ এছাড়া হাটে আইসোলেশন সেন্টার ও মেডিকেল টিম থাকবে৷

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. সেলিম রেজা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা এই শর্তগুলো পালনে ভ্রাম্যমাণ আদালত ছাড়াও আমাদের নিজস্ব টিম নিয়োগ করছি৷ ইজারাদাররা শর্ত না মানলে তাদের ইজারা বাতিল করা হবে৷ আর ক্রেতা বা বিক্রেতা যারাই স্বাস্থ্যবিধি মানবেন না, মাস্ক পরবেন না, তারা জরিমানাসহ শান্তির মুখোমুখি হতে পারেন৷’

তবে সরকারি এসব নির্দেশনা কতটা বাস্তবায়ন হবে সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে সংশ্লিষ্টদের। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পশুর হাট থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক

এদিকে দেশে করোনা পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২১০ জন মারা গেছেন। ইতিমধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ১৭ হাজার ছাড়িয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১১ জুলাই সর্বোচ্চ ২৩০ জন মারা গিয়েছিলেন। আর সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৭৬৮ জন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছিল সোমবার।

কেবল শনাক্ত আর মৃত্যুর সংখ্যায় নতুন রেকর্ড নয়, বরং স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে যে, নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হারের অনুপাতও ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবে এই হার গত দু’দিন ধরে কিছুটা কম। সোমবার থেকে মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ২৯.২১। আর গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৯.১৪ ভাগ।

গত এক সপ্তাহের অন্তত পাঁচ দিন করোনা আক্রান্ত হয়ে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা দুইশোর উপরেই থাকছে। আর ১৮ দিন ধরে মৃত্যু হচ্ছে শতাধিক রোগীর।

শেয়ার করুন