রূপগঞ্জের হাসেম ফুডস্ কারখানার মালিক ও তাঁর সঙ্গীসাথীদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা হয়েছে। কেন? তাঁরা কি কাউকে বন্দুক দিয়ে গুলি করে অথবা অন্য কোনো কিছু দিয়ে হত্যা করেছেন? উত্তর : না, তা করেননি, তবে যা করেছেন তা অস্ত্র দিয়ে খুন করার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। সে ব্যাপারে কিছু কিছু ডিটেল পত্র-পত্রিকার মারফত ইতিমধ্যেই আমরা জানতে পেরেছি। বাকি অংশ যথাসময়ে নিশ্চয়ই ‘রূপালী পর্দায়’ দেখব!
তবে একটা কথা তো ঠিক। রূপগঞ্জের ওই নাতিপ্রসিদ্ধ জনপদে ফ্যাক্টরির নামে যে মরণফাঁদ ওই হুজুরেরা দীর্ঘদিন ধরে পেতে রেখেছিলেন, তাতে এত দিন যে ফান্দে পড়িয়া বগারা কান্দে নাই এটাই তো আশ্চর্যের ব্যাপার। ফ্যাক্টরিটি যে দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে-উচ্চতায়-ব্যস্ততায় বিশাল এবং তাতে যে নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী, পোলাপাইন-মাইয়াপাইন শুধু মজুরির দুটো কাঁচা পয়সার জন্য দিনের পর দিন, মাসের পর মাস তনুমন সমর্পণ করে মুখ বুজে নাক ডুবিয়ে যন্ত্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করত তা তো এখন শুধু রূপগঞ্জ থানার বড়বাবু-মেজোবাবু-সেজোবাবু-ছোটবাবু নন, আমজনতা সবার কাছে স্পষ্ট। ওই ফ্যাক্টরিতে ‘জুস্’ বানাতে গিয়ে ওই সব শ্রমিক যে একদিন নিজেরা শব্দার্থে কাবাব হবে তা কি তারা জানত? না বোধ হয়। তারা শুধু জীবন-যৌবন উৎসর্গ করেছিল মালিকের চাহিদামত পণ্য উৎপাদন করতে। হায়, তারা কোনোদিন মালিকের কাছ থেকে জানতে চায়নি : হুজুর, যদি ফ্যাক্টরিতে হঠাৎ আগুন লাগে তা হলে আমরা জান বাঁচাতে কোনদিক দিয়ে পালাব? কোন দরজা দিয়ে? চারতলা থেকে নিচে নামব কোন সিঁড়ি বেয়ে?
না, বস্তুতপক্ষে আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে এসব বিষয় তাদের জানার কথা না। তারা শ্রমিক। তাদের দায়িত্ব শুধু রক্ত জল না হওয়া পর্যন্ত শ্রম দিয়ে যাওয়া। ইংরেজ কবি টেনিসনের সেই ‘চার্জ অব দ্য লাইট ব্রিগেড’ কবিতার সৈন্যদের মতো তারা কী কেন ইত্যাদি জানতে চাইবে না, ‘দে আর বাট টু ডু অ্যান্ড ডাই’। তারা কাজ করতে করতে ওই মেশিনের ওপর মরে পড়ে থাকবে। লেলিহান অগ্নিশিখা তোমাকে গ্রাস করতে ছুটে আসছে, তুমি শ্রমিক, তোমার জানার দরকার নেই নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার রাস্তা কোন দিকে। তুমি যেখানে আছো সেখানেই বাজে খরচ হয়ে যাও, তোমার শূন্যস্থান পূরণ করে নেবো আমরা কাল সকালেই তোমারই কোনো ভাই বন্ধুকে দিয়ে। হাঁ, এরকমই বোধ হয় ওই হাসেম ফুডস্ কারখানার মালিকদের চিন্তাধারা। তা না হলে এত বিশাল ছয়তলা ফ্যাক্টরি ভবনে কোনো ইমার্জেন্সি একজিট (জরুরি নির্গমন পথ) নেই কেন? আগুন লাগলে সঙ্গে সঙ্গে যে কেউ ফায়ার অ্যালার্ম (অগ্নিসঙ্কেতসূচক ঘণ্টাধ্বনি) বাজিয়ে সবাইকে সতর্ক করবে সে ব্যবস্থাই নাকি নেই পুরো ভবনে। তেমনি নেই কোথাও থেকে ধোঁয়া বের হলে ‘স্মোক ডিটেক্টর’ নামক যন্ত্র, যেটা তাত্ক্ষণিকভাবে জানিয়ে দেবে কোথাও আগুন লেগেছে। সর্বোপরি কারখানাটি যেখানে নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি বা অন্য কোনো বড় গাড়ি ঢোকার সুপ্রশস্ত রাস্তাই নাকি নেই। ৮ জুলাইয়ের আগুন নেভাতে তাই ফায়ার ব্রিগেডের গাড়িগুলো অকুস্থলে যেতেই পারছিল না। যে রাস্তাটি আছে তা নাকি কুল্লে ১০ ফুট চওড়া। অথচ বিল্ডিং কোড অনুযায়ী এ ধরনের পেল্লায় সাইজ দালানের অন্ততপক্ষে ৩০ ফুট চওড়া অ্যাপ্রোচ রোড থাকার কথা। তা হলে প্রশ্ন আসে, ওই দালান নির্মাণের অনুমোদন দিল কে? জানা গেল, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নাকি অনুমোদন দিয়েছে। বলে কী? ইউনিয়ন পরিষদের সেই প্রকৌশলী, সেই স্থপতি কোথায় যে তারা এত বড় দালান নির্মাণের অনুমোদন দেবে? তার মানে গোড়ায় গলদ রয়ে গেছে। এই দায়িত্ব যদি ইউনিয়ন পরিষদকে পালন করতেই হয় তবে পরিষদে যোগ্যতাসম্পন্ন জনবল থাকতে হবে। এটা বোধ হয় সম্ভব নয়। কারণ ইউনিয়ন পরিষদের যে আয় তা থেকে তাদের সচিবের বেতনই জোগান দেওয়া কষ্টকর। তা হলে বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে হবে। যেমন আশেপাশের কোনো বড় পৌর করপোরেশনের প্রকৌশল/স্থাপত্য বিভাগকে এই অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্পণ। যা হোক, বোঝা যাচ্ছে হাসেম ফুডস্ দুই নম্বরি পন্থায় প্ল্যান পাশ করিয়ে নিজেদের ইচ্ছামত দালান বানিয়েছে। সে দালানের এটা নেই, ওটা নেই, এমনকি প্রবেশপথটিও জরুরি অবস্থায় গাড়ি ঢোকার জন্য যথেষ্ট প্রশস্ত নয়। তেমনি উপর থেকে নিচে দ্রুত নামার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিঁড়িও নাকি নেই ওই দালানে।
ফিরিস্তি আর বাড়িয়ে লাভ নেই। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, এই প্রতিষ্ঠানটির জন্মই হয়েছে নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করে। এই ধরনের একটি কারখানার জন্য যা যা অপরিহার্য তার অনেক কিছুই বাদ দিয়ে নিশ্চয়ই প্ল্যান পাশ করিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন হলো, কোন কোন সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান এই পাশ করার কাজটি করেছে? তারা তো শুধু এই হাসেম ফুডস্-এর অনুমোদনই দেয়নি, এরকম শত শত অনুমোদন তারা হর-হামেশাই দিচ্ছেন। হাশেম ফুডস্-এ আগুন লেগে ৫২টি প্রাণ অকালে ঝরে না পড়লে এটার খবরও কেউ জানত না। আর এই অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত—যারা এ ধরনের কাজ করে করে চুল-দাড়ি পাকিয়ে একদিন চাকরি থেকে ফুলের মালা গলায় দিয়ে অবসর নেবেন—তারা সারাজীবন টু পাইস ইন্টু টু পাইস, ইকুয়েল টু ফোর পাইস করে করে গুলশান-বনানী-বারিধারা শেষ করে যথাসময়ে মালয়েশিয়া-কানাডাতেও বেগমপাড়া সাহেবপাড়ার অনারেবল সদস্য হবেন।
২.
প্রসঙ্গটা যখন উঠেই এল তা হলে একটা বিষয় পরিষ্কার করে নেই এই সুযোগে। কেউ কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আচ্ছা, এইসব হাসেম ফুডস্ অনুমোদনকারী, বেগমপাড়া-সাহেবপাড়ার গর্বিত বাসিন্দারা, এরকম সিনা ফুলিয়ে জিন্দেগি পার করে দেন কীভাবে? আপনারা যে এত লেখালেখি করেন, চিক্কর পাড়তে পাড়তে গলার রগ কাকলাসের মত লাল করে ফেলেন, কই আপনারা তো তাদের কেশাগ্রটাও ছুঁতে পারেন না, আইনি ব্যবস্থা তো দূরের কথা।
ঠিক কথা। একদম হাচা (সত্য) কথা কইচইন। তা হলে আজ থেকে প্রায় বাহান্ন বছর আগের একটা অভিজ্ঞতার কথা শোনাই। আমি তখন পাকিস্তানে (পাঞ্জাব) মহকুমা প্রশাসক। আমার আদালতে একজন বিচক্ষণ পুলিশ সাব ইন্সপেক্টর পুলিশি মামলা পরিচালনা করার দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর নাম ছিল মালিক আমজাদ খান। একদিন আমার অফিস কামরায় তাঁর সঙ্গে একটা আইনি বিষয়ে আলাপ করছিলাম। কথাচ্ছলে তিনি বললেন, হুজুর, আমাদের গ্রামাঞ্চলে কোনো মার্ডার হলে বিচক্ষণ থানাদার (অফিসার ইনচার্জ-ও.সি.) প্রথমেই জানতে চান, উয়ো লাড়কি কৌন হ্যায়? আমি বুঝতে না পেরে জানতে চাইলাম, কিছু না জেনে প্রথমেই কোনো মেয়েলোকের প্রসঙ্গ কেন? মালিক আমজাদ তখন বললেন, আমাদের গ্রামাঞ্চলে যত খুন-খারাবি হয় তার প্রায় সবগুলোই হয় কোনো মেয়েঘটিত ব্যাপার নিয়ে। তাই তদন্তের শুরুতেই যদি কোনো মেয়েকে আইডেন্টিফাই করা যায় তা হলে খুনের রহস্য ভেদ করতে আর তেমন দেরি হয় না। (পশ্চিম) পাকিস্তানে দুই বছর মহকুমা প্রশাসকের দায়িত্ব পালনকালে মালিক আমজাদের কথার যথার্থতা মোটামুটি পেয়েছিলাম। এবার আসুন আমাদের ব্যাংক-লুটেরা, অর্থ পাচারকারী গং-রা কেন ধরা পড়ে না তার জবাব দেই। আমাদের দেশে ‘উয়ো লাড়কি কৌন হ্যায়’ প্রশ্ন জিজ্ঞেস না করে জানতে চাইতে হবে, ‘পেছনের হুজুরটি কে?’ এখানে কিছুই হয় না, আবার সবই হয় যদি পেছনে কোনো ‘হুজুরের’ মায়া-মুহাব্বত-দু’আ থাকে। হাসেম ফুডস্-এর দালানের মত কোনো দালানের প্ল্যান পাশ করানো এক শ বছর সংশ্লিষ্ট অফিসের দুয়ারে দুয়ারে, টেবিলে টেবিলে ঘুরে ঘুরে দুই শ জোড়া জুতার ‘সোল’ ক্ষয় করলেও হবে না, যদি না ‘হুজুর’ ধরেন, বা সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিটির হাতে ‘প্যাকেট’ ধরিয়ে দেন। এখন বুঝলেন তো, কেন হাসেম সাহেবদের এই ডেঞ্জারাস বিল্ডিংটির প্ল্যান চোখের পলকে পাশ হয়ে যায়, আর আপনার হক-হালালের পয়সার সামান্য দোতলা বাড়িটির প্ল্যান পাশ করাতে পায়ের ঘাম মাথায় তুলতে হয়।
আচ্ছা, হাসেম গংদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা হলে ‘কান টানলে মাথা আসে’ ফর্মুলায় তো যারা এই বিল্ডিংয়ের প্ল্যান পাশ করেছিলেন, যারা বিভিন্ন বহির্গমনের দরজায় তালা লাগিয়ে লাপাত্তা হয়ে গিয়েছিলেন, যারা ফুলের মতো নিষ্পাপ শিশুগুলোকে—যার মধ্যে বেশির ভাগই মেয়েশিশু—আইন ভঙ্গ করে শিশুশ্রমিক হিসেবে কাজে লাগিয়েছিলেন (কারণটি তো খুবই স্পষ্ট। বাচ্চা ছেলেমেয়েকে অর্দ্ধেক বেতনে নিয়োগ দেওয়া যায়।), যে ওভারস্মার্ট কর্তাব্যক্তিটি ৪৯ জন শ্রমিককে একটি তালাবদ্ধ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে ঢুকিয়ে নিরাপত্তা দেওয়ার নামে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন—এদের সবাই এই গণহত্যার জন্য দায়ী। আমরা আশা করব, তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ পুরোপরি নিরপেক্ষতা বজায় রেখে তদন্তকার্য সম্পন্ন করবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করবে।
৩.
অসদুপায় অবলম্বন করে দালান নির্মাণের প্ল্যান পাশ করানো থেকে শুরু করে কারখানাটির সকল প্রকার কার্যক্রমে দিনের পর দিন যে অনিয়ম-অনাচার চলে আসছিল সেগুলো দেখার জন্য কেউ কি ছিল না? নিশ্চয়ই ছিল। এবং তারা সকলেই মোটা অঙ্কের বেতনখোর সরকারি কর্মকর্তা বটেন। এদের সকলের নিয়মিত কারখানাটি পরিদর্শন এবং ত্রুটি-বিচ্যুতি শুধরানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়ার কথা। তাঁরা কি আদৌ কখনো হাসেম ফুডস্-এ পাদুকাধুলি দিয়েছেন? বললেই তো দশটা অজুহাত দেখাবেন পরিদর্শন না করার। (এমনিতে বলা হয় বাঙালির নাকি তিনটা হাত : ডান হাত, বাঁ হাত ও অজুহাত।) এর অন্যতম ও ‘কমন’ অজুহাত হচ্ছে লোকবলের অভাব। ‘একা আমি কত দিক সামলাব’—এটা এঁদের একটা কমন ডায়লগ। আর যদি তাঁর শুভাগমনে প্রতিষ্ঠানটি কখনো ধন্য হয়েও থাকে তবে তা শুধু ম্যানেজারের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কামরায় বসে দেশটা যে দিন দিন রসাতলে যাচ্ছে সেজন্য আক্ষেপ করতে করতে চা-কফি-শিঙাড়া সেবা করা এবং যাওয়ার সময় ওই ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত জুস্-চকলেট ইত্যাদির একটি মানানসই সাইজের কার্টনও সেলামিস্বরূপ একটি হূষ্টপুষ্ট ‘প্যাকেট’ হাতানোতেই সীমাবদ্ধ। এই ভদ্রলোকের কাজ সুপারভাইজ করার জন্য আরেকজন কর্মকর্তা আছেন। তাঁকে কেউ কোনোদিন এই তল্লাটে দেখেছে বলে তাঁর অতি বড় মিত্রও সাক্ষ্য দেবে না। তার মানে কী দাঁড়াল? হাসেম ফুডস্ বছরের পর বছর নির্বিবাদে তাদের দুই নম্বরি কারবার চালিয়ে যাচ্ছিল। খবরে প্রকাশ, কিছুদিন পরপর নাকি এই প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগে। অথচ মালিকপক্ষ নির্বিকার। কোনো ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা তারা নিয়েছে বলে জানা যায়নি।
৪.
আসলে একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেলে সেটা নিয়ে কিছুদিন সর্বমহলে ‘হায় হাসান-হায় হোসেন’ বলে বুক চাপড়ানো ছাড়া দেশে কাজের কাজ কিছুই হয় না। যেসব ব্যক্তি স্পষ্টতই দোষী বলে প্রতীয়মান হয়—তা লঞ্চডুবি হোক আর হাসেম ফুডস্-এর মতো ফ্যাক্টরি হোক—প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা ‘ম্যানেজ’ করে ঠিকই কেটে পড়ে। এই যে এখন রূপগঞ্জ নিয়ে এত মাতামাতি হচ্ছে, এটাও বন্ধ হয়ে যাবে এ ধরনের বা এর চেয়ে বড় আরেকটি ঘটনা-দুর্ঘটনার আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে। এ যেন সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো। একটা ঢেউ বেলাভূমিতে এসে আছড়ে পড়তে না পড়তেই আরেকটি এসে তার নাম-নিশানা মুছে দেয়। তা না হলে তাজরীন-রানা প্লাজা-নিমতলী ইত্যাদি নামগুলো আমাদের স্মৃতিতে এখন ধূসর হয়ে যাবে কেন? তবু তাজরীন বা রানা প্লাজা আমাদের তৈরি পোশাক খাতকে যথেষ্ট মেজেঘষে চলতে শিখিয়েছে। এর কারণ বিদেশি ক্রেতাদের ত্রুটিপূর্ণ উৎপাদন-প্রক্রিয়াকে মেনে নিতে অনীহা। তাদের হুমকিতে কাজ হয়েছে। আমাদের মালিকপক্ষ বিদেশিদের দেওয়া শর্তাবলি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। সরকারও বোধগম্য কারণে আমাদের এই ব্রেড অ্যান্ড বাটার সেক্টর নিয়ে কোনো প্রকার ঝুঁকি নিতে চায় না। ভালো। তবে হাসেম ফুডস্ তো সে-রকম কোনো অতীব জরুরি বা জরুরি সেক্টর নয়। জুস্ আর চকলেট ইত্যাদি না খেলেও চলবে। আর এই কম্পানির রপ্তানি বাজারের কথাও এখন পর্যন্ত শোনা যায়নি। এখানে যা শোনা গেছে তা বায়ান্নটি গরিব শ্রমিকের আকস্মিকভাবে অকালে ঝরে যাওয়ার কথা, দগ্ধীভূত অঙ্গারে পরিণত হওয়া কিছু অসহায় মানুষের আর্তনাদের কথা।
এদের আর্তচিৎকার কি থামবে না কোনোদিন? হায় বিচারহীনতা, তুমি কি এত নিষ্ঠুর? সুশাসন, তুমি কি এতই অধরা?
লেখক : সাবেক সচিব, কবি
mkarim06@yahoo.com