নগদকে ব্যবসায়িকভাবে ঘায়েল করতে বিকাশের ষড়যন্ত্র

ডেস্ক রিপোর্ট

নগদ-বিকাশ

ব্যবসায়িকভাবে না পেরে ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদকে ব্যবসায়িকভাবে ঘায়েল করতে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বি কোম্পানি বিকাশ। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

তদন্ত শেষে আদালতে দাখিল করা চার্জশিটে বলা হয়েছে, মোবাইল ফোনে হোওয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে বিকাশের কর্মকর্তারা চক্রান্তমূলক এই অপপ্রচারে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি পিবিআইয়ের অর্গানাইজ ক্রাইম ইউনিটের পক্ষ থেকে আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নগদের দ্রুত প্রসার এবং ব্যবসায়ীক সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে বিকাশ বিভিন্ন মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আদালতে দাখিল করা পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনটি গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে এসেছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সরকার, সেনাবাহিনী ও সরকারি সেবার বিরুদ্ধে একটি চক্র গুজব ছড়িয়ে লিফলেট বিলি করছিল, যার প্রেক্ষিতে ঢাকার সিএমএম কোর্টে অজ্ঞতানামা ১০ হাজার জনকে আসামি করে মামলা করে নগদ। সে সময় সারা দেশে অন্তত তিন লাখ লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে বলেও নগদের পক্ষ অভিযোগ করা হয়। প্রমাণ হিসেবে লিফলেটের কপি, বেশ কিছু ভিডিও আদালতে দাখিল করা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে পিবিআইকে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট।

মামলায় বলা হয়, লিফলেটগুলোর সঙ্গে আলজাজিরা টেলিভিশনের প্রচারিত প্রতিবেদনের বাংলাকপি জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা উচ্চ আদালত নিষিদ্ধ করেছে। একই সঙ্গে সেনাপ্রধান ও সেনাবাহিনী এবং নগদকে হেয় প্রতিপন্ন করতে লিফলেট দেওয়া হচ্ছে।

মামলাটির তদন্ত করেছেন পিবিআইয়ের পরিদর্শক মেছবা উদ্দিন। তিনি আদালতে যে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন সেখানে প্রমাণ পেয়েছেন, বিকাশের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সংঘবদ্ধভাবে নগদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাতে নিয়োজিত ছিলেন। কৌশলে মিথ্যা অপপ্রচার ও মানহানিকর গুজব ছড়িয়ে সরকারি অপারেটরটির সুনাম নষ্ট, তার অগ্রযাত্রায় বাঁধা সৃষ্টি এবং আর্থিকভাবে ক্ষতি সাধন করা করা হয়েছে। এভাবে সরকারের ডাক বিভাগের অংশীদারিত্বে পরিচালিত নগদকে তারা জনসম্মুখে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

গত ২৩ জুন ঢাকার মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্টেট আদালতে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, নগদ প্রতি হাজারে ১১ টাকা চার্জ নেওয়ার কারণে খুব অল্প সময়ে দ্রুত প্রসার লাভ করে এবং জনগনের মধ্যে সুনামের সঙ্গে গ্রহণ যোগ্যতা অর্জন করে। পাশাপাশি বিকাশ বহু দিন থেকে হাজারে ২০ টাকা চার্জ নিয়ে ব্যবসা করে আসছে। সাশ্রয়ী সেবা হওয়ায় নগদ সহজেই প্রসার লাভ করতে শুরু করে। আর তাতেই বিকাশ ঈর্ষান্বিত হয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত হয় বলে পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সেন্ট্রাল নর্থ ক্লাস্টার’ নামের একটি হোওয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে বিকাশের শীর্ষ দুই কর্মকর্তার মোবাইল নম্বর থেকে অপপ্রচারে নেতৃত্ব দেওয়া হয়। পিবিআই নিশ্চিত হয়েছে, ওই দুই কর্মকর্তারা হলেন বিকাশের বিজনেস ক্লাস্টার হেড নাজমুল করিম ও রিজিওনাল ম্যানেজার আব্দুহ সুফী। পরে অবশ্য ‘সেন্ট্রাল নর্থ ক্লাস্টার’ নামের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটি ডিলিট করে দেন তারা। পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা নাজমুল করিম ও আব্দুহ সুফীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তারা বলেছেন, ‘চাকরির স্বার্থে ও বিকাশ কোম্পানিকে আর্থিকভাবে লাভবান করার জন্য তারা সকলে একই উদ্দেশ্যে নগদকে হেয় প্রতিপন্ন ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্যে এহেন কাজটি করেছেন।’ মিথ্যা অপপ্রচারমূলক লিফলেট সারাদেশে ছড়িয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পেনাল কোডের বেশ কয়েকটি ধারায় অপরাধ করেছেন।

শেয়ার করুন