পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে দেশের পাঁচ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৩৫ জনেরও বেশি। এর মধ্যে রংপুরে দুই বাসের সংঘর্ষে প্রাণ ঝরেছে ৪ জনের। ওই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৩০ জনের মতো। এছাড়া মেহেরপুরে দুই বাইকের সংঘর্ষে মারা গেছেন ৩ যুবক। অন্য তিনটি দুর্ঘটনা ঘটেছে বগুড়ার শেরপুর, নাটোর ও ভোলা জেলায়। এই তিন জেলায় সড়কে দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন।
এসব দুর্ঘটনার বিস্তারিত খবর:
রংপুর: রংপুরে যাত্রীবাহী দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। আজ বুধবার দুপুর দেড়টায় তারাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সামনের এই দুর্ঘটনায় ৩০ জনের মতো আহত হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে একজনের নামপরিচয় জানা গেছে। তিনি দিনাজপুরের পাবর্তীপুর উপজেলার শিংগীমারী গ্রামের তাজিরুল ইসলামের ছেলে শামছুর রহমান।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দিনাজপুরগামী হিমাচল নামের একটি যাত্রীবাহী বাস তারাগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনে আসলে বিপরীত দিক থেকে ছেড়ে আসা হানিফ এন্টারপ্রাইজের একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে তিনজন নিহত এবং ৩০ জনের বেশি আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুনবী প্রধান বলেন, আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ পর্যন্ত চারজন নিহত হয়েছেন। আহতদের অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক।
মেহেরপুর: দুপুর আড়াইটার দিকে মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জ মানিকনগর এলাকায় দুই বাইকের সংঘর্ষে তিন যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুইজন।
নিহতরা হলেন- মেহেরপুর সদর উপজেলার সোনাপুর মাঝেরপাড়া গ্রামের শাকিল হোসেন, শামিম রেজা ও গাড়াডোব গ্রামের মুস্তাক। তাদের বয়স ২০ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে হবে।
আহতরা হলেন গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের রকিবুল ইসলাম এবং আলমপুর গ্রামের ফারুক। আহতদের মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
মুজিবনগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাশেম জানান, বেলা আড়াইটার দিকে মুজিবনগর সড়কের কেদারগঞ্জ মানিকনগর এলাকায় দুটি বাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলেই দুইজন মারা যান। আহত হয় তিনজন। আহতদের উদ্ধার করে মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মুস্তাককে মৃত ঘোষণা করেন। আহত বাকি দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বগুড়া: জেলার শেরপুর উপজেলায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের মহিপুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় পথচারী এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকের ওই দুর্ঘটনায় মারা যান উপজেলার মহিপুর এলাকা বাসিন্দা রহমতুল্লাহ।
শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ একেএম বানিউল আনাম জানান, মহাসড়কে একটি ভ্যান দাঁড়ানো ছিল। ওই সময় দ্রুতগতির একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়। ভ্যানটি চার পথচারীর ওপরে পড়লে রহমতউল্ল্যাহ গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দুর্ঘটনার পর পুলিশ বাসটি আটক করলেও যানটির চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছে।
নাটোর: নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাঁশভাগ গ্রামে থ্রি হুইলারের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে আল আমিন নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে দুটি শিশু। সকাল ১০টার দিকে নলডাঙ্গা পাটুল সড়কের বাঁশভাগ স্লুইস গেইট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত আল-আমিন ওই উপজেলার পাটুল গ্রামের রাশেদুল ইসলামের ছেলে।
নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম মৃধা জানান, সকালের দিকে ঈদের নামাজ শেষে বোন ও জামাইকে দাওয়াত করতে শ্যামনগর গ্রামে যায়। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাঁশভাগ স্লুইস গেইট এলাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি থ্রি হুইলার সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। এতে মোটরসাইকেল আরোহী আল-আমিনসহ দুই শিশু গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করলে পথেই আল-আমিনের মৃত্যু হয়। আহত দুই শিশুকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে শিশু জিসানকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই থ্রি হুইলাচালক পলাতক রয়েছেন।
ভোলা: দুপুরে জেলার লালমোহন উপজেলার সবুজবাগ এলাকায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মো. ফারুক নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। নিহত ফারুক লালমোহনের পৌর ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তিনি লালমোহন বাজারের চৌ-রাস্তা মোড় এলাকার জুতার ব্যবসা করতেন। লালমোহন থানা পুলিশেল ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাকসুদুর রহমান মুরাদ দুর্ঘটনার ব্যবসায় ফারুকের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।