ঈদুল আজহাকে ঘিরে শিথিল করা কঠোর বিধিনিষেধ শুক্রবার থেকে ফের শুরু হতে যাচ্ছে। ফলে ঈদের খুশি স্বজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে না করতেই কর্মস্থল রাজধানীর উদ্দেশ্যে ফিরতে শুরু করেছেন মানুষ। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভির আরও বেড়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে, লঞ্চে, ফেরিতে, গাড়িতে- যে যেভাবে পারছেন মরিয়া হয়ে ঢাকায় ফিরছেন।
সরেজমিনে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার বেলা বাড়ার পর থেকেই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, মাওয়া-(বাংলাবাজার)-কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট, মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুট জনস্রোত দেখা গেছে। সন্ধ্যার পরও এসব ঘাটে ফেরি পারাপারের জন্য অপেক্ষা করছিল শত শত যানবাহন।
অন্যদিকে সড়ক পথের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, টঙ্গি-গাজীপুর এবং টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতুতে বাড়ছিল গাড়ির চাপ। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যানবাহন ও যাত্রীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাতে পৌঁছেছেন রহুল আমিন। তিনি বলেন, ঈদের আগের রাতে বাড়ি গিয়েছি। গতকাল ঈদ করে আজই ঢাকাতে ফিরে আসা লাগলো। শুনলাম এবার লকডাউন কঠোর হবে। তাই লকডাউনে আটকা পড়লে ঢাকা আসতে পারবো না অনেকদিন। এই জন্যই এত অল্প সময়ের জন্য বাড়ি গিয়ে পরিবার ছেড়ে আসতে কষ্ট হলেও আগে আগেই চলে এলাম।
রমজান, রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পরিবারের সঙ্গে ঈদশেষে নড়াইল থেকে ঢাকা এসেছেন। তিনি বলেন, ঈদ পরিবারের সঙ্গে না করলে ভালো লাগে না। গত ঈদে লকডাউন থাকাই বাড়িতে যেতে পারি নাই। এবার ঈদের আগে লকডাউন শিথিল করে দিয়ে ভালোই করেছে। যদিও লকডাউন শিথিলের আগেই নতুন করে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা করে দিয়েছিলেন তাই বাড়িতে গিয়েই আগে ঢাকাতে ফেরত আসার টিকিট কেটে রেখেছিলাম। দুই দিনের জন্য হলেও বাড়িতে যেতে পেরে ভালই লাগছে।
এদিকে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, মাওয়া (বাংলাবাজার) কাঁঠালবাড়ি, মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া বাংলাবাজার ফেরি ও লঞ্চ ঘাটে ফিরতি মানুষের চাপ বেড়েছে। সন্ধ্যার পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে ঘাট এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। পারাপারের অপেক্ষায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রী ও চালকদের। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় দেখা গেছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে মহাসড়কের গোয়ালন্দ পদ্মার মোর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়কজুড়ে যানজট।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, ঢাকামুখী মানুষের চাপ সামলাতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ৩৩টি লঞ্চ ও ১৯ ফেরি চালু রাখা হয়েছে। তবে, শুক্রবার ভোর ছয়টা থেকে ফেরিতে যাত্রী ও যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। শুধুমাত্র কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধু জরুরি পণ্যবাহী গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স পারাপার করা হবে।
সড়ক ও নদীপথ ছাড়াও ট্রেনে করেও ঢাকা আসছেন শত শত মানুষ। এবারের বিধিনিষেধ আগের চাইতেও কঠোর হবে- এমন ঘোষণায় ভিড় পড়েছে রেলেও। বগিতে সিট না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে চড়ে ঢাকা আসছেন বিভিন্ন জেলার মানুষ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে চাঁদপুর কোর্ট স্টেশনে হাজার হাজার যাত্রী নিয়ে সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি এসে বিরতি নেয়। ট্রেনের ভিতর অবস্থান নিয়েছে শত শত যাত্রী। ট্রেনের ছাদের উপরও কানায় কানায় পূর্ণ ছিল যাত্রী।
ট্রেনে করে চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরে আসা এক যাত্রী বলেন, ভোরে এসেও টিকিট পাইনি। তাই বিকল্প হিসেবে ট্রেনের ছাদে করেই চাঁদপুরে আসতে হয়েছে। ছাদের উপর ঝুঁকি আছে। কিন্তু কী করবো, আসতেতো হবেই। লকডাউনে আটকে থাকলে আমাদের থাকা খাওয়ার কষ্ট হবে। তাই নিজ গ্রামের বাড়ি চলে এসেছি। আমরা অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে করে আসছি চাঁদপুরে।
চাঁদপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সোয়াইবুল শিকদার বলেন, ২৩ তারিখ থেকে সব ট্রেন চলাচল বন্ধ। আর চাঁদপুরের সঙ্গে চট্রগ্রামের সাকরিকা এক্সপ্রেসই আজ শেষ ট্রেন৷ তাই যাত্রীর আজকে প্রচুর ভিড় ও চাপ দেখা যাচ্ছে। এত যাত্রীর চাপে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হয়ে পড়েছে। প্রচুর যাত্রীর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি অনেক কঠিন বিষয়। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি, যাতে করে যাত্রীরা মাস্ক পরে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করে। নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্যই এটা করার প্রয়োজন।
সারা দেশে করোনার সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত ১ জুলাই সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ। এ বিধিনিষেধ ছিল ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত। পরে বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও ৭ দিন অর্থাৎ ১৪ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে বিধিনিষেধেও বিশেষ ব্যবস্থায় রপ্তানিমুখী পোশাক ও শিল্প কারখানা খোলা ছিল। এরপর ঈদুল আজহার কারণে ১৫ জুলাই থেকে লকডাউন শিথিল করা হয়।
গত ১৩ জুলাই জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে লকডাউন শিথিলের এ নির্দেশনা দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
একই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, করোনাভাইরাস জনিত সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ঈদের ছুটি শেষে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট দিনগত রাত ১২টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো। লকডাউনে জরুরি সেবা ব্যতীত সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।