ইভ্যালির গ্রাহকরা যেভাবে পণ্য বা টাকা ফেরত পাবেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ই-ভ্যালি
ফাইল ছবি

আলোচিত ই-কমার্স প্লাটফর্ম ইভ্যালির যেসব গ্রাহক এখনো তাদের পণ্য বুঝে পাননি বা যাদের টাকা পরিশোধ করা হয়নি তাদের পাওনা পরিশোধ করা হবে। এর সমাধানের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল।

শনিবার (২৪ জুলাই) মধ্যরাতে ফেসবুক লাইভে আসেন ইভ্যালির সিইও। এক ঘণ্টা ২২ মিনিটের ফেসবুক লাইভে ইভ্যালির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যতে কীভাবে ব্যবসা করবেন এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন মোহাম্মদ রাসেল।

ইভ্যালির সিইও বলেন, আমরা অনেককে রি-ফান্ডের চেক দিয়েছি তা আটকে গেছে। দুটি ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি, এটি সমাধানে আরও সাত থেকে ১০ দিন সময় লাগবে। এর মধ্যেই নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা হয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে আমাদের পুরনো সব অর্ডার ডেলিভারি দেব। এজন্য সহযোগিতা দরকার।

রাসেল বলেন, ইভ্যালি বন্ধ করে কোনো সমাধান হবে না। কোনো প্রতিষ্ঠানই বন্ধ করে ইনভেস্টমেন্ট ফেরত আনা সম্ভব নয়। তাই আমাদের ব্যবসা করার সুযোগ দিন, আমরা কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেব না। সুযোগ দিলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে পুরনো সব অর্ডার ডেলিভারি দেব।

ক্ষোভ প্রকাশ করে ইভ্যালির সিইও বলেন, গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষা ও ভবিষ্যতে সুরক্ষার জন্য অনেকে কথা বলছেন। কিন্তু বিষয়টা সমাধানের চেয়ে ইভ্যালির বন্ধ করতেই এখন বেশি জোর দিচ্ছেন তারা। অনেকে বলছে ইভ্যালির যে লস হয়েছে তা পূরণ করা সম্ভব নয়। এটা আসলে ঠিক না। একটা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের ভ্যালুয়েশন করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। বিজনেস ভ্যালুয়েশন করলে এ লস রিকভারি করা সম্ভব। এখন আমাদের সঙ্গে অনেক বড় বড় কোম্পানি আছে। অপ্পো, স্যামসাং, টেকনো, যমুনা ইলেকট্রনিক্স, ওয়ালটন, বসুন্ধরা গ্রুপ, বাটা ও কোকা কোলার মতো কোম্পানি আমাদের সঙ্গে রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান কি না বুঝেই আমাদের সঙ্গে ব্যবসা করছে।

রাসেল বলেন, আমরা যে ধরনের ব্যবসা করি তা নতুন না। প্রি পেমেন্ট নিয়ে ই-কমার্স ব্যবসা আমরাই কিন্তু নতুন করছি না। পৃথিবীর অনেক কোম্পানিই এভাবে বড় হয়েছে। কয়েক বছরে ডিসকাউন্ট দিয়ে ইভ্যালি নিজেদের বাজার সৃষ্টি করেছে। তবে ডিসকাউন্ট হয়তো একটু বেশি দেয়া হয়েছে। এতে যে লোকসান হয়েছে তা পুষিয়ে ওঠা কোনো ব্যাপার না। ছয় মাসের মধ্যেই সব ধরনের ব্যাকলগ ক্লিয়ার করা সম্ভব।

সিইও বলেন, এখন যে অবস্থা, আমাদের মার্জিন লেভেল অনেক হাই। তা দিয়ে আমরা নতুন পণ্য সরবরাহের সঙ্গে ব্যাকলগও ক্লিয়ার করতে পারব। আমরা বিনিয়োগ পাওয়ার চেষ্টা করছি।

রাসেল বলেন, প্রশ্ন উঠে আমরা কেন বেশি ডিসকাউন্ট দিয়ে শুরু করেছিলাম? কিন্তু দারাজের মতো কোম্পানি প্রথমে ডাবল ভাউচার ডিসকাউন্ট দেয়নি? কোনো কোম্পানিই শুরুতে ডিসকাউন্টের মতো সুবিধা না দিয়ে বাজার ধরতে পারে না।

ইভ্যালির কর্ণধার বলেন, অনিয়মের বিষয়ে মিডিয়ায় যে কথাগুলো আসে এগুলোকে আমি এপ্রিশিয়েট করি। কারণ স্বাধীনতার পর আমাদের দেশে অনেক ফাইনান্সিয়াল ক্রাইম হয়েছে। কিন্তু ইভ্যালিকে সেই ক্রাইমে সঙ্গে মেলানো হয়েছে যা ইনজাস্টিস। কারণ আমরা কোনো ফাইনান্সিয়াল ক্রাইম করিনি।

ইভ্যালির সিইও বলেন, সরকারের দুটি সংস্থা ই-কমার্স নিয়ে কাজ করছে। গত মাসের ২৯ তারিখ ই-কমার্স পরিচালনা সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে। এতে করে একটি স্টান্ডার্ড অপারেটর সিস্টেম চালু হয়েছে। যে নির্দেশনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দিয়েছে তা আমাদের মানতে হবে। এ নিয়ম না মানলে মন্ত্রণালয় আমাদের লাইসেন্স বাতিল করে ব্যবসা বন্ধ করে দেবে। এই সিস্টেমে এখন ৪৫-৬০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার সুযোগ থাকছে না। এখন সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দিতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেমের যে নির্দেশনা দিয়েছে গ্রাহক পণ্য বুঝে না পেলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অর্থ পাবে না। এসব নিয়মের কারণে ভবিষ্যতে ই-কমার্সে গ্রাহকের ক্ষতিগ্রস্ত বা প্রতারিত হওয়ার সুযোগ নেই।

সিইও বলেন, ইভ্যালি কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৭০ লাখ অর্ডারের পণ্য গ্রাহককে ডেলিভারি দিয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। আমাদের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। এত সমস্যার মধ্যেও আমাদের অর্ডার আসছে। আজকেও ২০ কোটি টাকার অর্ডার পেয়েছি। এগুলো দিতে গেলে অবশ্যই নিয়ম মেনে দিতে হবে। এজন্য আমাদের কিছু সহযোগিতা প্রয়োজন। আমাদের ১০ লাখ ইউনিক গ্রাহক আছে। এখন আমাদের সুযোগ দিলে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারব। আগামীতে আমরা ডিসকাউন্ট অফার আস্তে আস্তে কমিয়ে লস কমাব।

রাসেল বলেন, ইভ্যালি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অডিট করেছিল, খবর প্রকাশ পায় গত মাসে। তবে অডিট হয় চার মাস আগে। আমাদের কোনো ইলিগ্যাল অ্যাকটিভিটি ছিল না। আমি চাই পলিসি লেভেল থেকে আমাকে ডাকা হোক। কীভাবে ব্যবসা করি তা তারা দেখুক। আমার দ্বারা কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি না তাও দেখুক। আমার কোনো ভুল থাকতে পারে। কিন্তু কোনো ক্রাইম ছিল না।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটির সিইও বলেন, যারা মনে করেন তাদের বেশি বিনিয়োগ হয়ে গেছে, আমাদের ইমেইল করুন। যদি মনে করেন এ পর্যন্ত ইভ্যালি থেকে কিছু পাইনি, শুধু দিয়ে গেছি তাও আমাদের জানান। যারা গত বছরগুলোতে বিজনেস করে গেছেন, তারা আমাদের কিছুটা সময় দেন। শুধু ফ্লো একটু ঠিক মতো রাখতে দেন। আপনারা সবাই নীতিমালা দেখলে বুঝবেন আপনাদের এখন চেক বা এমআরপি রিফান্ড দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা আপনাদের প্রোডাক্টই দেব। প্রোডাক্ট দিতে হয়তো আগের মতো তত দ্রুত দিতে পারব না। যদি কি না কোনো ধরনের বিনিয়োগ না পাই। আর আমরাও ফান্ড রেইজের চেষ্টা করছি, বিনিয়োগ যদি পেয়ে যাই তাহলে আপনাদের সব অর্ডার ক্লিয়ার করে ইভ্যালি নেক্সট হান্ড্রেড ইয়ারের জন্য এক নম্বর কোম্পানির জায়গা কনফার্ম করে ফেলবে। এই মুহূর্তে আপনাদের কাছে রিকোয়েস্ট করা ছাড়া হাতে কোনো বিকল্প নেই।

শেয়ার করুন