বঙ্গভ্যাক্স: ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ক্লিয়ারেন্স দিতে আইনি নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

গ্লোব বায়োটেক
ফাইল ছবি

বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক কর্তৃক উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন বঙ্গভ্যাক্সের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ক্লিয়ারেন্স দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি একটি আইনি নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য সেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্স কাউন্সিলের (বিএমআরসি) পরিচালক, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে এ নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছে।

আজমসোমবার ডাক ও ই-মেইলের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান জনস্বার্থে এ নোটিশ প্রেরণ করেন।

universel cardiac hospital

নোটিশে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশে লকডাউনসহ নানাবিধ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে পালন করা সত্ত্বেও সারাবিশ্বে আজ পর্যন্ত প্রায় ৪১ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। আর এ সময় বাংলাদেশ আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ ও মৃত্যুরবরণ করেছেন প্রায় ১৯ হাজার ২৭৪ জন। আজ এটা সবাই স্বীকার করবেন যে, ভ্যাকসিনই সকল মানুষকে এই মহামারি থেকে আল্লাহর রহমতে রক্ষা করতে পারে।

সারাবিশ্ব যখন ভ্যাকসিন উৎপাদনের দিকে তাকিয়ে ছিল, ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর সেসময় বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশ ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে সারাবিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিল উল্লেখ করে নোটিশে আরও বলা হয়, সারাবিশ্বের মিডিয়ায় সেই অর্জনের কথা ছড়িয়ে পড়ে যে, বাংলাদেশ সারা বিশ্ববাসীকে মহামারি থেকে রক্ষা করতে ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে। গ্লোব বায়োটেকের উদ্ভাবিত বঙ্গভ্যাক্স ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুমোদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। তারপর মানবদেহে পরীক্ষামূলক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্ব ১ এবং ২ এর জন্য বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্স কাউন্সিলের কাছে নৈতিক অনুমোদনের জন্য গত আবেদন করা হয় ১৭ জানুয়ারি।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি কিছু সংশোধন-বিয়োজন করার জন্য চিঠি দেওয়া হলে গ্লোব বায়োটেক গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পুনরায় সংশোধিত রিসার্স ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দেয় বলেও তাতে জানানো হয়। কিন্তু এর দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে বিএমআরসি সম্পূর্ণ নীরব থেকেছেন এবং বাংলাদেশি ভ্যাকসিনটি পরীক্ষা চালানোর জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়নি অভিযোগ করে নোটিশে বলা হয়, উপরন্তু বিএমআরসি একেক সময় সংবাদমাধ্যমে একেক রকম বক্তব্য দিয়েছে যাতে সারাদেশের মানুষ দেশে উৎপাদিত ভ্যাকসিন নিয়ে আশাহত হয়েছে।

সর্বশেষ বিএমআরসি গত ২২ জুন একটি চিঠি দিয়ে গ্লোব বায়োটেককে জানায় যে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আগে বানর বা শিম্পাঞ্জির ট্রায়াল করতে হবে, তবেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ইথিক্যাল অনুমোদন বিষয়ে পরবর্তী চিন্তা করা হবে। আইনজীবী তার নোটিশে বলছেন, বানর বা শিম্পাঞ্জির শরীরে পরীক্ষা চালাতে হলে থার্ড পার্টি রিসার্স ল্যাবের প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে এই ধরনের কোনও গবেষণা ল্যাব নেই। গ্লোব বায়োটেক বানর এবং শিম্পাঞ্জির শরীরে পরীক্ষা চালানোর জন্য ভারত এবং চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান সাথে কথা বলেছেন। সেসব প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, এই মুহূর্তে তাদের হাতে সময় নেই এবং দরখাস্ত সরকারের মাধ্যমে করতে হবে, যা খুবই দীর্ঘ সময় সাপেক্ষ এবং এই মুহূর্তে সম্ভব নয়।

নোটিশে আরও বলা হয়েছে, আমরা সংবাদমাধ্যমে দেখেছি ফাইজার ও মডার্না’ র টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার এবং কর্তৃপক্ষ একে অপরের সাথে মিলেমিশে ভ্যাকসিন তৈরি ও তা প্রয়োগের উপযোগী করে তুলেছে। বঙ্গভ্যাক্স একটি নিউ জেনারেশন টেকনোলজি এমআরএনএ প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে আমেরিকা এবং জার্মানির ফাইজার ও মডার্না টিকা। এটা স্পষ্ট যে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন না দিয়ে বানরের শরীরে ট্রায়ালের জন্য শর্ত জুড়ে দেয়ার অর্থ হচ্ছে এই ভ্যাকসিনটি যাতে উৎপাদন করতে বা অনুমোদন পেতে আরো অনেক সময় অতিবাহিত হয় এবং এটি যাতে আলোর মুখ না দেখে। যদি বানরের শরীরে প্রয়োগের প্রয়োজন হতো তবে বিএমআরসি আরো ৫ মাস আগে গ্লোব বায়োটেককে এসব শর্ত উল্লেখ করতো।’

গ্লোবের আইনজীবীর অভিযোগ, বাংলাদেশে উৎপাদিত করোনার ভ্যাকসিন বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের জীবন যেভাবে রক্ষা করতে পারতো, তেমনিভাবে সারা বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের সম্মান ও মর্যাদা এক অনন্য চূড়ায় পৌঁছে দিতে পারতো। কিন্তু বিএমআরসি এর ধীরে চলো নীতি ও নিষ্ক্রীয়তা সেই স্বপ্নকে ম্লান করে দিয়েছে। সেই সাথে ১৭ কোটি মানুষের জীবন রক্ষার সংবিধানিক অধিকার লংঘন করেছে বিএমআরসিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

‘তাই ১৭ কোটি বাংলাদেশি ও কোটি কোটি বিশ্ববাসীর জীবন রক্ষায় জনস্বার্থে গত ২২ জুন গ্লোববায়োটেক বরাবর বানরের শরীরে পরীক্ষার জন্য যে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে তা যাতে প্রত্যাহার করে স্বেচ্ছাসেবীদের শরীরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পেইজ-১ ও ২ এর ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। অথবা ফাইজার ও মডার্না টিকার মতো ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলাকালীন সময়ে বানরের শরীরেও প্রয়োগের শর্ত দিতে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

নোটিশ প্রাপ্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বঙ্গভ্যাক্সের ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে আইনি পদক্ষেপের জন্য উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলেও নোটিশে উল্লেখ করেছেন আইনজীবী।

শেয়ার করুন