সপ্তাহে এক কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা, শহরে মডার্না গ্রামে সিনোফার্ম

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনার টিকাদান কার্যক্রম
ফাইল ছবি

দেশব্যাপী করোনার গণটিকাদান কার্যক্রম চালানোর অংশ হিসেবে এক সপ্তাহে ১ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এজন্য আগামী ৭ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা দেয়া হবে। এ কার্যক্রম চালাতে ইউনিয়ন পরিষদে কেন্দ্র তৈরি করে টিকা দেয়া হবে। শহরাঞ্চলে মডার্নার আর গ্রামাঞ্চলে দেয়া হবে সিনোফার্মের টিকা।

কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে আরোপিত বিধিনিষেধের কার্যক্রম পর্যালোচনা ও কোভিড-১৯ প্রতিরোধক টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করা নিয়ে মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য কম সময়ে বেশি সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। সেই সঙ্গে পরবর্তী ভ্যাকসিনের (টিকা) চালান পৌঁছানোর আগেই বিদ্যমান মজুত টিকা দ্রুত ব্যবহার করে কোল্ড স্পেস ও ড্রাই স্টোর স্পেস ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

কম সময়ে বেশি সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে টিকা দেয়ার জন্য সারাদেশে ক্যাম্পেইন আকারে টিকা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে এক সপ্তাহে এক কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ক্যাম্পেইন শুরুর সম্ভাব্য সময় ধরা হয়েছে ৭-১২ আগস্ট।

সূত্রটি আরও জানিয়েছে, শহর ও গ্রামাঞ্চলে একযোগে টিকা কার্যক্রম শুরু করা হবে। শহরাঞ্চলে দেয়া হবে মডার্নার এবং গ্রামাঞ্চলে সিনোফার্মের টিকা। প্রতিটি টিকার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ডোজ সংরক্ষণ করে প্রথম ডোজ দেয়া হবে।

উপজেলা ও পৌরসভায় চারদিন এবং সিটি করপোরেশনে সপ্তাহে ছয়দিন কোভিড-১৯ এর টিকা দেয়া হবে। সিটি করপোরেশনগুলোতে প্রতি ওয়ার্ডে একটি স্থায়ী ও দুটি করে অস্থায়ী কেন্দ্র বা ভ্যাকসিনেশন টিম থাকবে। উপজেলা ও পৌরসভার প্রতি ওয়ার্ডে একটি করে ভ্যাকসিনেশন টিম থাকবে।

ক্যাম্পেইন কৌশল

সারাদেশে ক্যাম্পেইন আকারে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে কিছু কৌশল নেয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে-

১. স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী এবং সিটি করপোরেশনের মেয়রদের মধ্যে এ বিষয়ে সভা করা।

২. সারাদেশে বিদ্যমান ইপিআইয়ের দক্ষ জনবল দিয়ে ক্যাম্পেইন আকারে টিকাদান পরিচালনা করা।

৩।উপজেলা পর্যায়ে বিদ্যমান সাব-ব্লক অনুযায়ী ভ্যাকসিনেশন সেশন পরিচালিত হবে।

৪. এক্সেল শিটভিত্তিক নিবন্ধনের মাধ্যমে ক্যাম্পেইন আকারে টিকাদান পরিচালিত হবে এবং টিকার কার্ড দেয়া হবে।

৫. সুরক্ষা ওয়েব পোর্টাল/অ্যাপে এসব সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও গ্রামাঞ্চলের ওয়ার্ডভিত্তিক নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হবে।

গণটিকাদান কার্যক্রমের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, টিকা দেয়ার বিষয়ে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। সে কারণে আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদে টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করছি। যেখান থেকে ইউনিয়নের সব লোকজন, আপামর জনসাধারণ যারা টিকা নিতে চায় বা যাদের নিতে হবে তারা টিকা নিতে পারবেন। এ সুবিধাটা আমরা করে দিচ্ছি। তারা এনআইডি কার্ড নিয়ে আসলেই টিকা নিতে পারবেন।

তিনি জানান, পঞ্চাশোর্ধ নারী ও পুরুষ বেশি সংক্রমিত হচ্ছে। ঢাকা শহরের হাসপাতালে যারা ভর্তি আছেন তাদের ৭৫ শতাংশ পঞ্চাশোর্ধ এবং তাদের ৯০ শতাংশ টিকা নেয়নি। তাদের মধ্যে মৃত্যুহারও বেশি। এ কারণে পঞ্চাশোর্ধ নারী-পুরুষদের টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যারা পঞ্চাশোর্ধ তারা যেন তাড়াতাড়ি ইউনিয়ন পর্যায়ে এসে টিকা নিতে পারেন, আমরা সেদিকে জোর দিচ্ছি। টিকা আরও বেশি যখন হাতে আসবে তখন আমরা আরও নিচে যেতে পারব। অর্থাৎ ওয়ার্ড পর্যায়ে আমরা চিন্তা-ভাবনাই রেখেছি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, পৃথিবীর যেখানেই টিকা দেয়া হয়েছে, সেখানেই সংক্রমণের গতি কমে গেছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশেও আমরা এ দৃশ্যটা দেখেছি। সে কারণেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আমাদের টিকার কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। তিনি বয়সের সীমাও কমিয়ে দিয়েছেন এবং নিবন্ধনের বিষয়ে তিনি আরেকটা নির্দেশনা দিয়েছেন- এনআইডি কার্ড নিয়ে যে যাবেন তাকে টিকা দেয়া হবে।

তিনি বলেন, শুধু নিরাপত্তা বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তারা নন, আমাদের জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতা সবাইকে এটার (টিকা) সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে, না হলে আমরা এই জায়গা থেকে সহজে পরিত্রাণ পাব না। সেজন্য আমরা টিকা কার্যক্রমে সমাজের নেতা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সবাইকে সম্পৃক্ত করবো। আমাদের কাছে যে টিকাগুলো এসেছে তা দিয়ে কার্যক্রম চলবে। পরবর্তীতে যে টিকা আসবে, সেটার ব্যবহার আমরা পরবর্তী সময়ে করবো।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনটি বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা সবাই মাস্ক পরবো, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবো এবং সবাই টিকা নেব। এটাই হলো আমাদের মূল কথা। যারা সম্মুখসারির যোদ্ধা তারা টিকার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। নেভি, এয়ার ফোর্স, কোস্টগার্ড, বিজিবিসহ সব বাহিনীর সদস্যদের টিকার আওতায় আনা হবে। সেই সঙ্গে সম্মুখসারির যোদ্ধাদের পরিবারের ১৮ বছরের ঊর্ধ্বের সবাইকে টিকার আওতায় আনা হবে।

শেয়ার করুন