১. করোনার মহাপ্রলয়, চ্যালেঞ্জের মুখে অর্থনীতি ও আগামী দিনের রাজনীতি নিয়ে দেশ এক কঠিন সময়ের মুখোমুখি। করোনা এখন বিষাদের চাদরে ঢেকে দিয়েছে আমাদের মন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে গণমাধ্যমে চোখ রাখলেই কেবল মৃত্যুর সংবাদ। চেনা-অচেনা, কাছের-দূরের কত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, কত মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন, আর আমরা শোকস্তব্ধ হচ্ছি।
বিষাদগ্রস্ত মনে কারও আনন্দই নেই। নিরানন্দের ঈদ গেছে করোনার আতঙ্কের মধ্যে। যে পরিবারে করোনা কারও প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, যে পরিবারে করোনার সঙ্গে সদস্যরা লড়াই করেছেন তারা জানেন কী ভয়ংকর এক অভিশাপের নাম করোনা। গোটা পৃথিবীকে তছনছ করে দিয়েছে অদৃশ্য করোনা, তার সঙ্গে তামাম দুনিয়া লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। একেক সময় একেক চরিত্র ধারণ করা এ অদৃশ্য শক্তির সঙ্গে প্রায় দেড় বছরের লড়াইয়ে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনাই ঘটেনি, অর্থনৈতিক বিপর্যয়ও নেমে এসেছে। জীবন আগে না জীবিকা আগে- এ বিতর্ক সামনে নিয়ে একেকটি দেশকে লকডাউনে যেতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে গতিতে এগিয়েছিল বিশ্বকে তা চমকে দিয়েছিল।
এখন লকডাউন চলছে অন্যদিকে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। মৃতের সংখ্যা একদিকে প্রান্তিকে চিকিৎসা সংকট অন্যদিকে নগরগুলোয় হাসপাতালে ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই অবস্থা। পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটলে পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কেউ বলতে পারছেন না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, অবনতি হলে হাসপাতালে জায়গা দেওয়া যাবে না। প্রধানমন্ত্রী প্রথম দফা করোনার আঘাতকে দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন জীবন ও জীবিকা রক্ষা করে। আমাদের এবারের চ্যালেঞ্জ আরও বেশি কঠিন। দারিদ্র্যসীমার নিচে বিশাল জনগোষ্ঠী চলে যাচ্ছে। কর্মহারা হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। শ্রমজীবী মানুষের হাতে কোনো কাজ নেই। মানুষ খাবার সহায়তার চেয়ে কাজ চাইছে।
দেশের দেশপ্রেমিক বড় বড় শিল্পপতি বিশাল বিনিয়োগ করে এ পরিস্থিতির মধ্যে কঠিন চাপের মুখে পড়েছেন। মাঝারি ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদেরও চরম দুঃসময়। এমন সময়ে একদল নষ্ট লুটপাট করে। বিদেশে অর্থ পাচার করে। কত নির্লজ্জ। আমাদের দীর্ঘ লকডাউনে থাকারও সুযোগ নেই। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপও বেড়েছে চারদিকে। মানুষের মধ্যে এখন ভয় আতঙ্ক আর ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি অবস্থা। শুরু থেকে সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ টিকা গ্রহণের আহ্বান জানালে মানুষের মধ্যে চরম অনাগ্রহ দেখা গেছে। মানুষ সচেতন হতে চায়নি। এক ধরনের বেটাগিরি দেখাতে গিয়ে করোনা নিয়ে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে কথা বলেছে, মাস্ক পরেনি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেনি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকেনি। এমনকি টিকাও গ্রহণ করেনি। একদল মোল্লা ওয়াজে যেমন করেছেন তেমনি নগর থেকে প্রান্তিকের মানুষ করোনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে।
সরকারকে জনসচেতনতায় এখনই ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারে যেতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা অনেক দেশ মৃত্যু উপত্যকা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে জনগণকে টিকার আওতায় এনে। সরকারের হাতে টিকা রয়েছে, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে টিকা গ্রহণে। করোনার উপসর্গ দেখামাত্রই টেস্ট করাতে হবে। মানুষ জ্বর-কাশি হলেও শুরুতে টেস্ট করাচ্ছে না। করোনার পজিটিভ নিয়ে ঘুুরে বেড়ায় আর মানুষকে সংক্রমিত করে আসে। অনেকে শেষ মুহুর্তে হাসপাতালে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। করোনার শুরু থেকেই দেশের চিকিৎসক থেকে নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এ যুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে মানুষের পাশে রয়েছেন। রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। অনেকেই স্স্থু হয়ে বাড়ি যাচ্ছে। সরকার একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই গ্রাম পর্যায়ে ভোটার আইডি কার্ডের মাধ্যমে মানুষকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসবে। এখানে সব জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং এনজিও কর্মীদের কাজে লাগানো প্রয়োজন। উন্নত দেশে রাস্তায় বের হলেই টিকা দেওয়া হচ্ছে। যারা নেননি তাদের জন্য এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও জীবনও বাঁচাতে হবে, জীবিকাও রক্ষা করতে হবে।
একই সঙ্গে টিকা উৎপাদনেও যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। দেশের অর্থনীতি বাঁচিয়ে রাখতে না পারলে, শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উন্নয়নের এ অগ্রগতির ধারা রক্ষা করা না গেলে করোনায় যেমন মানুষ মরছে, পরে না খেয়ে মানুষকে মরতে হবে।
২. সম্প্রতি চট্টগ্রামের রেজাউল হক চৌধুরী মোস্তাক হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেছেন। একজন অমায়িক স্বজন হিসেবে আমার সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। ষাটের দশকে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। স্বাধীনতার পর জাসদ গঠিত হলে তাতে যোগ দেন। পরে একজন রাজনৈতিক-সচেতন সমাজকর্মী হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। ভদ্রলোকের মৃত্যুর পর অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক জানাতে গিয়ে তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধির প্রস্তাবক বলে একজন মৃত মানুষকেই ছোট করেননি, ইতিহাসকেও বিকৃত করেছেন। তিনি নিজেও এমন দাবি কখনো করেননি। তবে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের এক প্রচারপত্রে দেওয়া লেখায় তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের নামের আগে বঙ্গশার্দূল, বঙ্গবন্ধু, বজ্রকণ্ঠ এসব বিশেষণ যুক্ত করেছিলেন। কিন্তু ছাত্রলীগ বা সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ তার এটাকে গ্রহণ করেনি, তিনিও প্রস্তাব দেননি। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ডাকসুসহ ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নের দুই অংশ, এনএসএফের একাংশ মিলে সবর্দলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গঠন করে আন্দোলন শুরু করেছিল। ডাকসু ভিপি হিসেবে সেদিন তোফায়েল আহমেদ ছিলেন তার আহ্বায়ক এবং মুখপাত্র। তিনিই প্রতিটি সভায় সভাপতিত্ব করতেন। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা যুক্ত করে ছাত্রসমাজের ১১ দফা আন্দোলন বিসুভিয়াসের মতো জ্বলে উঠলে আকাশ-বাতাস কেঁপে ওঠে। আসাদ, মতিউরের রক্তঝরা সেই আন্দোলন এতটাই ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে বিস্ফোরিত হয়েছিল যা পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। সেই গণঅভ্যুত্থানের মুখে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পক্ষে ২১ ফেব্রুয়ারি ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমেদ আইয়ুব খানের সামরিক সরকারের কাছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শেখ মুজিবের মুক্তির দাবি জানান। তখন আন্দোলন ১১ দফা থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির এক দফায় পরিণত হয়। আন্দোলনের দাবানলে বিচারক পর্যন্ত পালিয়ে যান। ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে মহানায়কের বেশে মুক্তিলাভ করে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে আসেন। ওইদিকে জনগণ শেখ মুজিবকে দেখার জন্য পল্টনকে জনসমুদ্রে পরিণত করেছে। শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নেতারা পল্টন অভিমুখে রওনাও হয়েছিলেন। কিন্তু শিক্ষা ভবনের সামনে থেকে তারা মত পাল্টে ফিরে আসেন। সিদ্ধান্ত নেন ২৩ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ শেখ মুজিবুর রহমানকে গণসংবর্ধনা দেবে। পল্টনে গিয়ে তোফায়েল আহমেদ অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ লাখো মানুষকে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। পরদিন সেই সংবর্ধনা সভায় ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে তাদের স্বতঃস্ফ‚র্ত সমর্থন নিয়ে বাঙালি জাতির আবেগ-অনুভূতি ও ভালোবাসা ধারণ করে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের নায়ক তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করলে জনগণ তুমুল করতালির মাধ্যমে উল্লাসে ফেটে পড়ে। সেই থেকে তিনি জনগণের হৃদয়ে ও ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন। যেমন দেশ স্বাধীন করে হন জাতির পিতা। ভারতের করমচাঁদ গান্ধীকে মহাত্মা উপাধি দিয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষচন্দ্র বসুকে নেতাজি উপাধি দিয়েছিল জনগণ। যেমন দিয়েছিল চিত্তরঞ্জন দাশকে দেশবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর মতো এমন আবেগঘন গণজোয়ারে একটি জাতি ঐক্যবদ্ধ ও আনুষ্ঠানিকভাবে উপাধি দান পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
’৬৯ ছিল স্বাধীনতার টার্নিং পয়েন্ট। বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জনগণ ঐক্যের মোহনায় মিলিত হতে থাকে। ’৬৯-এ বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে বেরিয়ে লন্ডন সফরকালে ভারতীয় হাইকমিশনে স্বাধীনতাযুদ্ধের রূপরেখাই চূড়ান্ত করেননি, দেশে আওয়ামী লীগ সংগঠনটিকে তৃণমূল পর্যন্ত শক্তিশালী করেন। সে সময় অনেক নেতা আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ’৭০ সালের নির্বাচনে জনগণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর আস্থা ও বিশ্বাস আবেগ ভালোবাসা নিয়ে তাঁর আওয়ামী লীগের নৌকা প্রার্থীদের একচ্ছত্রভাবে বিজয়ী করে। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে অনেক প্রগতিশীল সংগঠন ও বীর জনতা এবং দ্বিধাগ্রস্ত বুদ্ধিজীবীর একাংশ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর কঠিন দুঃসময়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা সংগঠনকে ঘুরে দাঁড় করালেও সেনাশাসকদের নির্যাতন-নিপীড়নে করুণ অবস্থা ছিল। ’৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে দেশে ফিরে গণতন্ত্রের সংগ্রামের বাতি জ্বালিয়েছিলেন। সারা দেশ সফর করে একদিকে সামরিক শাসনের অবসান, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আরেকদিকে আওয়ামী লীগকে জনপ্রিয় শক্তিশালী দলে পরিণত করার লক্ষ্য অর্জনে সফল হন। তাঁর ৪০ বছরের রাজনীতি আর তিন মেয়াদের শাসনকাল তাঁকে একজন অভিজ্ঞ ক্যারিশমাটিক রাজনীতিবিদ হিসেবে বিশ্বনেতৃত্বের সামনে তুলে এনেছে। সমালোচকরা যা-ই বলুন না কেন, দেশের অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটিয়ে তিনি নিজেকে যে জায়গায় নিয়েছেন সেখানে আজকে পর্যবেক্ষকরা অস্বীকার করতে পারছেন না যে আওয়ামী লীগেই নয়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার বিকল্প কেবল শেখ হাসিনাই। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া একদিকে শারীরিকভাবে অসুস্থ, আরেকদিকে কারাদন্ডে নির্বাচনের বাইরে। দলের জন্য তাঁর কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ দেখা যাচ্ছে না। তাঁর পুত্র তারেক রহমানও মামলার দন্ডে নির্বাচনে অযোগ্য এবং লন্ডনে নির্বাসিত। বিএনপির জন্য কোনো চমক সৃষ্টির সম্ভাবনা যেমন কম অন্যদিকে দলটি ১৩ বছরে নানা নিপীড়নে কার্যত মাটিতে শুয়ে গেছে। সংগঠনকে নিজেরা দূরদর্শী পরিকল্পনায় গুছিয়ে তুলবে এমন আলামতও দেখা যাচ্ছে না। এমন দুঃসময়েও বিএনপিতে কমিটি ও মনোনয়ন বাণিজ্য হয়। এর চেয়ে দলটির জন্য আর কী বড় অভিশাপ থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে কালের বিচারে দীর্ঘ অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েই তাঁর আজকের জায়গায় আসতে জীবনকে বারবার ঝুঁকির মুখে ফেলেও সুসংহত করেছেন। ৭৪ বছর বয়স্ক শেখ হাসিনা এখনো শারীরিক-মানসিকভাবে ফিট। এখনো ১৮ ঘণ্টা পরিশ্রমকালে তৃণমূল পর্যন্ত দল ও প্রশাসনের খোঁজখবর রাখতে পারেন। নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বা গণমাধ্যমের খবরে অন্যায় দেখলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেন। শেখ হাসিনা সারা জীবন রাজনীতিতে বা ক্ষমতায় থাকবেন না। তিনি নিজেও বলেছেন অনেকবার। তিনি আর থাকতে চান না। নতুন নেতৃত্ব দলকে খুঁজে নিতে বলেছেন। দল চারদিকে তাকিয়ে দেখে কেবল শেখ হাসিনার মুখই ভাসে। বাংলাদেশের বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো রিক্ত-নিঃস্ব হয়েছে। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তি পঙ্গুত্ববরণ করেছে। উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নানা কায়দায় সরকার দমিয়ে রেখেছে। কিন্তু কেউ ভাবছেন না ১০ বছর পরে হলেও একদিন শেখ হাসিনার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের জায়গাটি কে পূরণ করবেন। নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের দল আওয়ামী লীগে একসময় অনেক হেভিওয়েট নেতা ছিলেন। অনেকেই ইন্তেকাল করেছেন। অনেকেই জীবনের শেষ বেলায়। নতুন নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে অনেকের দলে ও বাইরে না আছে পরিচিতি, না আছে গ্রহণযোগ্যতা। গণমুখী আদর্শিক সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ওপর প্রভাবশালী নেতৃত্ব আজ আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার পর কোথায়? যারা নেতৃত্বে আছেন তাদের ভাবতে হবে আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রের সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল। গণমানুষের দল আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হলে দলকে আদর্শের ধারায় সব লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের হৃদয় জয় করেই ফিরিয়ে আনতে হবে। পাপিয়া স্ক্যান্ডাল হয়, ভয়ংকর অপরাধের অভিযোগে তাকে কারাগারে যেতে হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো দলকে এরা বিতর্কিত করে যায়। এ দল একবারও খোঁজ নেয় না পাপিয়াকে কারা সৃষ্টি করেছে। তদন্ত করে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। আওয়ামী লীগের মতো দলে এই বিতর্কিতদের কারা খুঁজে আনে। সাহেদ এখন কারাগারে। তাকে পররাষ্ট্র উপকমিটির সদস্য করা হয়েছিল। কে করেছিলেন সেই তদন্ত হয় না। সর্বশেষ মহিলা উপকমিটি থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কার করা হলেও চাকরিজীবী লীগ নিয়ে দলটিকে বিতর্কিত করা হয়েছে। এদের কারা খুঁজে এনে কমিটির সদস্য করে তা তদন্তের মাধ্যমে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ দূরে থাক একটি শোকজ নোটিসও দেওয়া হয় না। হাইব্রিড অনুপ্রবেশকারীদের দুধকলা দিয়ে পোষা হচ্ছে। ব্যবস্থা নেওয়া দূরে থাক। আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক যথার্থই বলেছেন, দলে আজ কে আসল কে নকল চেনা বড় মুশকিল। ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগ সুবিধাবাদীদের জন্য দলকে অভয়াশ্রমে পরিণত করে। আর মহাদুর্দিনের লড়াই করা পথের কর্মীকে দূরে সরিয়ে রাখে। আজ দেশে সবাই আওয়ামী লীগ। ’৭৫-পরবর্তী সময়েও উগ্রপন্থি ছাত্র সংগঠন করা যারা ছিলেন চরম বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাবিদ্বেষী, আজ তারা বড় ভক্ত। চেহারা বদল। সবাই বলে ছোটবেলা থেকেই আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের মতো দলে মহাদুঃসময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা চিহ্নিত নেতা-কর্মীদের ঠাঁই না দিয়ে উপকমিটিতে কারা এসব বিতর্কিত নতুন মুখ আমদানি করেন? কেন করেন? আর এ উপকমিটিগুলোর আসলে কি কোনো কাজ হয়? নির্বাচনী ইশতেহার তো শেখ হাসিনা তাঁর পছন্দের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ নিয়েই করে থাকেন।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।