একাদশে স্বীকৃত ব্যাটসম্যান মাত্র পাঁচজন। সেই পাঁচজনের সংগ্রহ যথাক্রমে ১৪, ০, ৯, ০ ও ৬। ওপরের সারির ব্যাটসম্যানদের এমন পারফরম্যান্সের পর দলের কী অবস্থা হবে তা সহজেই অনুমেয়। যা আজ হলো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভারতের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে।
টেস্ট সিরিজ খেলতে মূল দল ইংল্যান্ডে। তাই দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে শ্রীলঙ্কায় টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে গেছে ভারতীয় ক্রিকেট দল। সেই দলের ক্রুনাল পান্ডিয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় এক ঝাঁক ক্রিকেটার আইসোলেশনে আর কাঁধের চোটে ছিটকে গেছেন নবদ্বীপ সাইনি।
ফলে শেষ ম্যাচের একাদশ সাজাতে নেট বোলার হিসেবে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া সন্দ্বীপ ওয়ারিয়ারকে অভিষেক করিয়ে দিয়েছে ভারত। দ্বিতীয় ম্যাচের মতো শেষ ম্যাচেও ভারতের একাদশে পরীক্ষিত ব্যাটসম্যান মাত্র পাঁচজন আর বোলার বাকি ছয়জন।
এমন একাদশ নিয়ে নামার পর ব্যাটিংয়ে ভরাডুবির আশঙ্কা থেকেই যায়। দ্বিতীয় ম্যাচে কোনোভাবে ১৩২ রান করলেও, শেষ ম্যাচে ৮ উইকেট হারিয়ে ৮১ রানের বেশি করতে পারেনি শিখর ধাওয়ানের দল। যা তাদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে তৃতীয় সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০০৮ সালে করা ৭৪ রান তাদের সর্বনিম্ন।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ১০ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ ছিল ৫ উইকেটে ৩৯ রান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০ ওভার শেষে ভারতের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড। কুলদ্বীপ যাদব ও ভুবনেশ্বর কুমারের সৌজন্যে শেষের দশ ওভারে ৪২ রান করে সর্বনিম্ন সংগ্রহের রেকর্ড এড়িয়েছে তারা।
ভারতকে এই দুঃস্বপ্ন উপহার দেয়ার মূল নায়ক স্পিনার ভানিন্দু হাসারাঙ্গা। নিজের ২৪তম জন্মদিনে খেলতে নেমে তিনি গড়েছেন অনন্য এক রেকর্ড। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান খরচায় নিয়েছেন ৪ উইকেট। অল্পের জন্য পাননি ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফার।
তবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে জন্মদিনে এটিই সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড। এতদিন ধরে জন্মদিনে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড ছিল ইমরান তাহিরের দখলে। ২০১৪ সালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে নিজের ৩৫তম জন্মদিনে খেলতে নেমে ২১ রান খরচায় ৪ উইকেট নিয়েছিলেন এ প্রোটিয়া লেগস্পিনার।
ভানিন্দুর এমন বোলিংয়ের দিন জ্বলে উঠেছেন অন্যান্যরাও। অধিনায়ক দাসুন শানাকা ২০ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। দুশমন্থ চামিরা ১৬ রানে ১ ও রমেশ মেন্ডিস ১৩ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট। কোনো উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে মাত্র ১১ রান খরচ করেছেন আকিলা ধনঞ্জয়।
টপঅর্ডারের পাঁচ ব্যাটসম্যানে সাকুল্যে ৩১ রান করার দিনে ভারতকে লজ্জার রেকর্ডের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন দুই বোলার ভুবনেশ্বর ও কুলদ্বীপ। বিশেষ করে নবম উইকেটে চেতান সাকারিয়ার সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ১৫ রানের জুটি গড়ে ৭৪ রানের বাঁধা পেরিয়েছেন কুলদ্বীপ।
শেষ পর্যন্ত এ চায়নাম্যান অপরাজিত ছিলেন ২৩ রান করে। ভুবনেশ্বরের ব্যাট থেকে এসেছে ১৬ রান। স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ১৪ রান করেছেন রুতুরাজ গাইকদ। বাকিরা কেউই দুই অঙ্কে যেতে পারেননি। শূন্য রানে আউট হয়েছেন তিনজন।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের কারণে বাইরে থেকে নেট বোলার পাওয়া যাবে না দেখে নেট বোলার হিসেবে নেয়া হয়েছিল সন্দ্বীপ ওয়ারিয়ারকে। সেই তিনিই এবার পেয়ে গেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ। সবমিলিয়ে চলতি সিরিজে ভারতের হয়ে খেলতে নামা ১৯তম ক্রিকেটার ওয়ারিয়ার।
ওয়ারিয়ারকে অভিষেক করিয়ে রেকর্ডের পাতায়ও নাম তুলে ফেলেছে ভারত। কোনো টি-টোয়েন্টি সিরিজ বা টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ক্রিকেটার খেলানোর তালিকায় এতদিন ছিল অস্ট্রেলিয়া (বনাম ভারত, ২০১৬) ও রোমানিয়ার নাম (বনাম বুলগেরিয়া, ২০২০)। তারাও ভারতের সমান ১৯ জন খেলোয়াড় ব্যবহার করেছে সে দুই সিরিজে।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে একটি করে জিতেছে দুই দল। তাই আজকের ম্যাচটিই সিরিজ নির্ধারণী। যারা জিতবে তারাই পাবে শিরোপা।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ভারতের সর্বনিম্ন সংগ্রহ
১/ ৭৪ বনাম অস্ট্রেলিয়া (২০০৮)
২/ ৭৯ বনাম নিউজিল্যান্ড (২০১৬)
৩/ ৮১/৮ বনাম শ্রীলঙ্কা (২০২১)
৪/ ৯২ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা (২০১৫)
৫/ ১০১ বনাম শ্রীলঙ্কা (২০১৬)