আগের অর্থবছরের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বেসরাকারি খাতে ঋণ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে চলতি অর্থবছরের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) ঘোষিত এই মুদ্রানীতিতে বেশ কিছু বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে।
যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
১. করোনার প্রভাব মোকাবেলায় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ইতোমধ্যে গৃহীত প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারি জোরদারকরণ।
২. অর্থনীতির অগ্রাধিকারভিত্তিক খাতসমূহ যেমন- কৃষি, সিএমএসএমই, বৃহৎ শিল্প, রপ্তানিমুখী শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ইতোমধ্যে গৃহীত পুনঃঅর্থায়ন স্কীম বর্ধিতকরণের পাশাপাশি করোনার কারণে অধিকতর ক্ষতিগ্রস্ত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতসমূহ যেমন- ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিক, হোটেল ও রেস্টুরেন্টের কর্মচারী এবং বেসরকারি পর্যায়ের শিক্ষা খাতের সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গের জন্য বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন স্কীম চালুকরণ।
৩. নতুন উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গঠিত ৫০০ কোটি টাকার এবং তফসিলি ব্যাংকসমূহের পরিচালন মুনাফার ১ শতাংশ নিয়ে গঠিত স্টার্ট আপ ফান্ডের আকার পর্যায়ক্রমে বর্ধিতকরণ।
৪. সিএমএসএমই খাতসমূহ, বিশেষ করে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ক্লাস্টার এন্ড ভ্যালু চেইন এবং নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে ব্যাংকের অর্থায়ন বৃদ্ধিকল্পে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কীম কার্যকরভাবে চালুকরণ।
৫. অর্থনীতিতে মানসম্মত কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর লক্ষ্যে গ্রামাঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যাংকগুলোর ন্যূনতম সংখ্যক নিজস্ব জনবল দ্বারা প্রযুক্তিনির্ভর উপ-শাখা খোলার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ।
মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, মূলত করোনা মহামারির অনিশ্চয়তামূলক পরিস্থিতির কারণে বছরব্যাপী বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি শ্লথ থাকায় এ খাতে ২০২০-২১ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে নির্ধারিত ১৪.৮ শতাংশ ঋণ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রকৃতপক্ষে তা ৮.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
গভর্নর জানান, সরকার কর্তৃক ব্যাংক-বহির্ভূত উৎস হতে বিশেষত জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক হারে ঋণ গ্রহণ করে। ফলে ব্যাংকিং খাত হতে সরকারকে প্রদত্ত নীট ঋণ বৃদ্ধির পরিমাণ বছরব্যাপীই কর্মসূচিতে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেকটা নিচে থাকার পাশাপাশি রেমিট্যান্সের অন্তর্মুখী প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। এতে করে ব্যাংকিং খাতে উদ্বৃত্ত নগদ ও তরল সম্পদের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়।
ফজলে কবির বলেন, তবে বেসরকারি খাতসহ সরকার ও অন্যান্য পাবলিক সেক্টরে প্রদত্ত নীট ঋণের প্রবৃদ্ধি শ্লথ থাকায় অর্থনীতিতে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহের পরিমাণও মুদ্রানীতি কর্মসূচিতে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হারে বৃদ্ধি পায়, যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।