কক্সবাজারে গত কয়েকদিনের টানা ভারি বর্ষণে নয়টি উপজেলার ৫১ ইউনিয়নের ৫১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অতি বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ী ঢলের পানিতে এসব গ্রামের ৪ লক্ষাধিক মানুষ হয়ে পড়েছে পানিবন্দি।
এ পর্যন্ত জেলায় পাহাড় ধস ও পানিতে ডুবে প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ জনে। এদের মধ্যে ছয়জন রোহিঙ্গা মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতের মধ্যে ১৩ জন পাহাড় ধসে ও সাতজন পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছে।
পাহাড়ি ঢলের পানিতে সবচেয়ে বেশী দুর্ভোগ বাড়িয়েছে রামু, কক্সবাজার সদর ও চকরিয়া উপজেলার অন্তত ৭/৮টি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মাণাধীন রেলপথের রাস্তা ভরাটের সময় পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রাখায় এ দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার লোকজন বলেছেন, বর্ষার সময় উজানের ঢলের পানি নিষ্কাশনের বিষয়টি মাথায় না রেখে রেলরাস্তা নির্মাণের কারণে গ্রামের পর গ্রাম এখন প্লাবিত হয়ে গেছে।
এদিকে কক্সবাজারের সাম্প্রতিক পাহাড় ধস ও টানা বর্ষণে সৃষ্ট দুর্গত এলাকা পরিদর্শনের জন্য গত দুদিন ধরে কক্সবাজার অবস্থান করছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান এনডিসি। তিনি বৃহস্পতিবার বিকালে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন কর্মীদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিতরণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বলেছেন, কক্সবাজারে পানিবন্দি প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক শ্রাবস্তী রায়, সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহিদ ইকবাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা) মো. নাসিম আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বিভীষণ কান্তি দাশ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায়, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মং এনুং মারমাসহ বিভিন্ন দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ।
বিভাগীয় কমিশনার জানান, আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা লোকজনদের মাঝে খাবার দেওয়া হচ্ছে। পাহাড় ধসে ও বানের পানিতে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দুর্যোগ কবলিত মানুষের জন্য কাজ করা হবে। এছাড়া বন্যা পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে স্বাস্থ্য সেবা, রাস্তা-ঘাট, কৃষি, মৎস্য, লবণ, ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হবে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ২০০ মেট্রিক টন চাল ও ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারে পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে লোকজনকে নিরাপদে আশ্রয় দিতে কাজ করছে ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। এদিকে কক্সবাজারের বন্যা কবলিত ও পাহাড়ধসের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদের নির্দেশে বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক বরাবরে আরো ৫০ মেট্রিক টন চাল, ১০ লাখ নগদ টাকা ও দুই হাজার বস্তা শুকনো খাবারের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।