প্রস্তাবে সমর্থন না দেওয়ার কারণ নেই

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ফাইল ছবি

বাংলাদেশের প্রবীণ রাজনীতিবিদ, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, অপরাজেয় সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম রাজনীতির অঙ্গনের দুষ্টগ্রহ হেফাজতে ইসলাম নামীয় উগ্রবাদী, জঙ্গিবাদী, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী, মুক্তবুদ্ধির পক্ষের সকল মানুষ, যারা বাংলাদেশকে একটি সুস্থ, সুন্দর, সভ্য ও আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়, যারা অন্ধকারের বিপরীতে আলোর পক্ষে, জ্ঞানবিজ্ঞানের পক্ষে সকলেই শেখ সেলিম সাহেবের এই দাবিকে সমর্থন করেন। এমনকি যারা গণতন্ত্রের পক্ষে, প্রগতির পক্ষে অথচ আওয়ামী লীগার নন, তারাও এই মত সমর্থন করেন বলে আমরা নিশ্চিত। অথচ সরকারের অভ্যন্তরে সরকার পরিচালনা করে এবং অরাজনৈতিক সরকারি লোকজনের ক্ষুদ্র অথচ প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী—নানা পরিচয়ে বিভক্ত হলেও হেফাজতের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে—যেমনটি পাকিস্তানে ISI বা Inter-Services Intelligence নামীয় সংগঠনটি এবং তথাকথিত ধর্মবাদী একটি গোষ্ঠী তালেবানদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকে। নারী অধিকারবিরোধী, আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞানবিরোধী, গণতন্ত্র ও শোষণহীন সমাজবিরোধী উগ্র ধর্মীয় (তথাকথিত) গোষ্ঠী হেফাজতে ইসলামকে দেশের স্বার্থে অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা, হেফাজতরা—(১) বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, এ কারণেই শহিদ মিনার, স্মৃতিসৌধ ইত্যাদি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে চায়;

(২) এরা জাতীয় সংগীত গায় না, জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে না, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও শহিদ দিবস পালন করে না;

universel cardiac hospital

(৩) এরা আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের ও সংস্কৃতির বিরোধী। মধ্যযুগীয় শিক্ষায়-কুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে। স্যার সৈয়দ আহমদ, স্যার সৈয়দ আমীর আলী, নওয়াব আব্দুল লতিফ, মাওলানা কেরামত আলী, কাজী নজরুল ইসলাম, ডক্টর মুহম্মদ শহীদউল্লাহ, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, মাওলানা ভাসানী, ব্যারিস্টার আব্দুর রসুল প্রমুখ যে আদর্শের কথা বলে গেছেন, যা বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধের দর্শন, তা এই হেফাজতি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীটি অস্বীকার করে।

(৪) এরা ইসলামের ঘোরতর শত্রু, খারিজিদের উত্তরসূরি এবং মুসলমানকে মুসলমানের বিরুদ্ধে উসকে দেয়। এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন ও অনৈক্য সৃষ্টি করে।

(৫) এরা শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে। এরা এদের মতাদর্শ চাপিয়ে দিতে জবরদস্তি করে।

(৬) এরা সারা দুনিয়ায় মুসলমানদের ঘরে অগ্নিসংযোগ করে সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের হয়ে কাজ করছে। শিয়া-সুন্নি, মাজহাবি-লা-মাজহাবি ইত্যাদি। নন-ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে সর্বত্র জঘন্য কাজ করে বেড়াচ্ছে। IS, ISIL, তালেবান ইত্যাদির দোসর হচ্ছে এই হেফাজতে ইসলাম। তাদের ১৩ দফা দেখলেই সব বোধগম্য হবে। (৭) এরা বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে ওয়াজ ও তাফসিরের নামে ধর্মপ্রাণ অশিক্ষিত, স্বল্পশিক্ষিত ও ধর্মীয় বিষয়ে অন্ধ লোকদের বিভ্রান্ত করে চলেছে। এদের সাধনাচারের সঙ্গে নবি করিম (স.), সাহাবায়ে কেরাম, প্রাচীনকালের ওলামায়ে কেরাম প্রমুখের জীবনাচারের কোনোই মিল নেই। ভোগবাদী, নারীকে পণ্য ভাবা, Sodomy ইত্যাদি এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডব
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডব। ফাইল ছবি

আরো অনেক কারণ আছে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সময় এদের পূর্বসূরিরা, যেমন—আজিজুল হক, হাফেজ মোহাম্মদ উল্লাহ, আতাহার আলী প্রমুখ—পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেছিলেন। এদের বিচার হয়নি। বঙ্গবন্ধুর উদারতা এদের পূর্বসূরিদের রক্ষা করেছে। এরা কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমা করেনি। তাই তার ভাস্কর্য, তার ম্যুরাল ভাঙচুর করে, স্থাপনের বিরোধিতা করে। এরা শিখা অনির্বাণ, শিখা চিরন্তন ইত্যাদির বিরুদ্ধে। কোনো দুর্যোগ দুর্বিপাকে এরা মানুষের পাশে দাঁড়ায় না। আয়কর দেয় না, জাকাত দেয় কি না সন্দেহ আছে। এদের নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেমন—জামেয়া ইউনিসিয়া, দারুল আরকাম, হাটহাজারী, লালবাগ, কামরাঙ্গীর চরসহ কোনো হেফাজত নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসার হিসাবনিকাশ আপনি পাবেন না। কোথা থেকে টাকা আসছে, কোন খাতে খরচ হচ্ছে তা রহস্যাবৃত। মিছিল করলেই হাতে লাঠি থাকে, কেন? এই সব প্রশ্ন জনগণের। সরকারের কাছে দাবি এসব প্রশ্নের সদুত্তর চাই। তাই আমরা দেশবাসী এবং তওহিদি জনতা হেফাজত নিষিদ্ধের যে দাবি জননেতা শেখ সেলিম পার্লামেন্টে উত্থাপন করেছেন, তা সর্বান্তকরণে সমর্থন জানাই।

লেখক : সংসদ সদস্য, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা,
পঁচাত্তর-পরবর্তী প্রতিরোধ যোদ্ধা,
সম্পাদক, মত ও পথ।

শেয়ার করুন