লকডাউনের মধ্যে হঠাৎ করেই রপ্তানিমুখী কলকারখানা খুলে দেয়ার সরকারের সিদ্ধান্তকে ‘পুরোপুরি আত্মঘাতী’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আমি কি এমনি বলেছিলাম যে, এগুলো (সিদ্ধান্ত) আসতেছে সব হেমায়েতপুর থেকে।
আজ রোববার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্তসমূহ তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা আজকের পত্রিকাগুলোতে দেখেছেন কী ভয়াবহ অবস্থা? কী রকম তুঘলকি কারবার- আগে বলা হলো যে, করখানা খোলা হবে না, ৫ তারিখ পর্যন্তই বন্ধ থাকবে। আবার হঠাৎ করেই বলা হলো কলকারখানা খোলা হবে। কী করে লোকগুলো আসবে তার কোনো ব্যবস্থা নেই। আবার দেখা যাচ্ছে, রাতে বলছে যে, দুপুর ১২টা পর্যন্ত গণপরিবহন খোলা থাকবে।
তিনি বলেন, আমি কি এমনি বলেছিলাম যে, এগুলো আসতেছে সব হেমায়েতপুর থেকে। আসলেই তো! সব হেমায়েতপুরের অবস্থা। এটা বদ্ধ উন্মাদনা ছাড়া আমি কিছু দেখতে পাই না। বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে যে, অযোগ্যতা, দুর্নীতিপরায়ণতা এবং আন্তরিকতার চরম অভাবে এসব আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে। দিস ইজ টোটালি সুইসাইডাল।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের পত্রিকা দেখে তো আপনার সন্ত্রস্ত হয়ে যেতে হয়। যেভাবে মানুষ আসছে একেবারে গাদাগাদি করে, ঘাড়ের উপর, ঘাড়ের উপরে চড়ে এবং সেভাবে এসে কিভাবে …। একবার তাদের ছুটি দিলো, সব চলে গেলো। আবার ফিরছে তারা মফস্বল থেকে। এখন তো মফস্বলেই সংক্রমণ সবচেয়ে বেড়েছে। ওইগুলো নিয়ে তারা আবার ফিরে আসছে। সো উই আন্ডারস্ট্যান্ড কি হতে যাচ্ছে ঢাকায়। আমরা মনে করি, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় চরম ব্যর্থতার জন্য সকল দায়-দায়িত্ব নিয়ে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, সরকারের অপরিকল্পিত লকডাউনে জনগণের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। বিএনপি অনেক বার বলেছে যে, দিন আনে দিন খায় মানুষ, প্রান্তিক মানুষ, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, মাঝি, রিকশা শ্রমিক, ভ্যান শ্রমিকসহ সকল প্রকার নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য সহায়তা ও আর্থিক সহায়তা ব্যতীত লকডাউন কখনই কার্য্কর হবে না। সেইজন্যই বিএনপি এসব মানুষকে এককালীন ১৫ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে প্রদানের প্রস্তাব করেছিল। সরকার সেদিকে না গিয়ে দলীয় লোকদের আড়াই হাজার টাকা করে প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রকৃত দুর্গত মানুষের কাছে এই সহযোগিতা পৌঁছাচ্ছে না।
তিনি বলেন, হঠাৎ করে রপ্তানীমুখী কলকারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে কল-কারখানায় কর্মরত শ্রমিকেরা আরো মারাত্মক ভোগান্তির সম্মুখীন হয়েছে। একদিকে গণপরিবহন বন্ধ, অন্যদিকে কারখানায় কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশে তারা হতবিহবল হয়ে উঠেছে। চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। প্রায় সব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়। ঢাকার বাইরে এই শ্রমিকরা এবং ঢাকার জনগণ ডেল্টা ভেরিয়েন্টের ভয়াবহ সংক্রমণের শিকার হবার আশঙ্কা বাড়ছে।
টিকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার অবলীলায় জনগণকে ভুল তথ্য দিয়ে প্রতারণা করছে। এদিকে সরকার বলছে, প্রতি সপ্তাহে ৬০ লাখ টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। অথচ গত ৭ মাসেও ৬০ লাখ টিকা দিতে পারেনি। টিকা প্রাপ্তির কোনো নিশ্চয়তা ছাড়াই প্রতি মাসে ১ কোটি টিকা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে তারা (সরকার) যা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ব্যতীত কিছুই নয়।
তিনি বলেন, প্রতি মাসে ১ কোটি টিকা প্রদানের জন্য টিকা প্রাপ্তির উৎস সরকার এখন পর্যন্ত জানাতে পারেনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর টিকা নিয়ে এসব উক্তি এখন হাস্যকর। এগুলো যে ফাঁকা বুলি এটা বুঝতে আর জনগণের বাকি নেই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় ফাঁকা বুলি না আওড়িয়ে অবিলম্বে টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ জনগণের সামনে তুলে ধরার আহবান জানানো হয়।
সংক্রমণ ও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা দেয়া হচ্ছে না
সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যার প্রকৃত পরিসংখ্যান না দিয়ে জনগণকে প্রতারণা করতে ‘অসত্য তথ্য’ দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, হাসপাতালে সংবাদকর্মীদের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধানিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলার ভয়ে সংবাদকর্মীরা প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে পারছেন না।
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী অবিলম্বে এই পরিস্থিতির পরিবর্তনের জন্য সরকারকে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন ফখরুল। তিনি বলেন, জেলা হাসপাতালগুলোতে পরিস্থিতি উন্নত করার কোনো প্রচেষ্টা সরকারের নেই। অন্যদিকে ঢাকায় কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে অতিরিক্ত রোগীর চাপে চরম অব্যবস্থাপনা দেখা দিয়েছে। সঠিক তথ্য না দেয়ায় সংক্রমিত ব্যক্তিরা হাসপাতালে কোনো বেড পাচ্ছে না। করোনা সংক্রান্ত জটিল রোগী ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অক্সিজেন-আইসিইউ বেড পাচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।