অনলাইনে তৎপরতা বেড়েছে জঙ্গিদের!

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিএমপির সংবাদ সম্মেলন
সংগৃহীত ছবি

সাম্প্রতিককালে দেশে জঙ্গিবাদী প্রত্যক্ষ কোনো অপতৎপরতা লক্ষ্য করা না গেলেও অনলাইনে তাদের তৎপরতা আগের তুলনায় বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জঙ্গি দমনে গঠিত কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলছেন, অফলাইনে তাদের (জঙ্গিদের) তৎপরতা নেই, তবে তারা অনলাইনে সক্রিয়। যদিও এজন্য নগরবাসীর উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কোনো ঘটনা ঘটার আগেই জঙ্গি সদস্যদের গ্রেফতার করছে সিটিটিসি।

গত ১৭ মে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে প্লাস্টিকের ব্যাগের ভেতর থেকে শক্তিশালী একটি বোমা উদ্ধার হয়। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে যাত্রাবাড়ী থেকে গতকাল (রোববার) দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তাদের গ্রেফতারের বিষয়ে তথ্য জানাতে আজ (সোমবার) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান বলেন, নারায়ণগঞ্জের পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনায় নব্য জেএমবির দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- শফিকুর রহমান হৃদয় ওরফে বাইতুল্লাহ মেহসুদ ওরফে ক্যাপ্টেন খাত্তাব ও মো. খালিদ হাসান ভূঁইয়া ওরফে আফনান।

গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ৪০০ গ্রাম লাল রঙের বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থ, তিনটি বিউটেন গ্যাসের ক্যান, একসেট রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস, ৪ প্যাকেট ছোট সাইজের বিয়ারিং বল, ১০টি ক্রিসমাস বাল্ব, দুটি কালো রংয়ের ইলেকট্রিক টেপ, একটি আইইডি তৈরির ম্যানুয়াল, হামলায় ব্যবহৃত লাল রঙের পালসার মোটর সাইকেল জব্দ করা হয়।

আসাদুজ্জামান বলেন, গত ১১ জুলাই সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও সোয়াট টিম যৌথ অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জে আড়াইহাজার থানার নোয়াগাঁও এলাকা থেকে নব্য জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ গ্রেফতার করে।

মামুনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যাত্রাবাড়ী থেকে নব্য জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য এবং বোমা তৈরির অন্যতম কারিগর শফিকুর ও খালিদ হাসানকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নব্য জেএমবির আমির মাহাদী হাসান জন ওরফে আবু আব্বাস আল বাঙ্গালীর নির্দেশে গত ১৬ মে সাইনবোর্ড ট্রাফিক বক্সে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা হামলার চেষ্টা হয়। ত্রুটিপূর্ণ রিমোটের কারণে কয়েকবার চেষ্টা করেও বোমাটি বিস্ফোরণে ব্যর্থ হয়ে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এবং রিমোটটি রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়।

পুলিশ বলছে, মাহাদী হাসান জনের নেতৃত্বে গ্রেফতার শফিকুর রহমান নব্য জেএমবির সামরিক শাখার ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গ্রেফতার শফিকুর ও খালিদ হাসান বোমা তৈরির ম্যানুয়াল ও ভিডিও দেখে বোমা তৈরির অনলাইন প্রশিক্ষক ফোরকানের তত্ত্বাবধানে আব্দুল্লাহ আল মামুনের কক্ষে হামলায় ব্যবহৃত আইইডি তৈরি করে।

ফোরকান সম্পর্কে জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ফোরকান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিস্ট্রি বিভাগের ছাত্র। তার বোমা তৈরির দক্ষতা রয়েছে। তাকে গ্রেফতারেরর চেষ্টা চলছে।

জঙ্গিদের অনলাইন তৎপরতা সম্পর্কে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলোর অফলাইনের চেয়ে অনলাইনে তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরাও তৎপর। অনলাইনভিত্তিক তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেলেই নগরবাসীর উদ্বিগ্ন বা অস্বস্তির কারণ হতে পারে। আমরা সম্প্রতি অনেক শীর্ষ জঙ্গি নেতাকে গ্রেফতার করেছি। আমরা নগরবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, জঙ্গিরা এখন হুমকি নয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল মান্নান, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রহমত চৌধুরী ও সহকারি পুলিশ কমিশনার মো. মাহমুদুজ্জামান।

শেয়ার করুন