হঠাৎ করেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেয়ার সুর মিয়ানমার জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের। অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে নেয়া সেনাবাহিনী ৬ মাসের মাথায় আগামী দুই বছরের মধ্যে বহুদলীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০২০ সালের নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয় অং সান সু চির বিরুদ্ধে। এরপর গৃহবন্দি হন সু চি। ক্ষমতার মসনদে বসে জান্তা।
রোববার টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে মিয়ানমার জান্তা প্রধান বলেন, দেশের জরুরি অবস্থার মেয়াদ আগামী ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই সময়ের মাঝেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যদিয়ে দেশটিতে সেনাশাসনের সময় আরও দুই বছর বাড়িয়ে দেয়া হলো।
জান্তা সরকারের স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল তাদের পক্ষ থেকে রোববার এক বিবৃতিতে আরও জানায়, মিন অং হ্লাইংকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের (কেয়ারটেকার সরকার) প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছে। পরে জান্তা প্রধান নিজেই এক ঘোষণায় নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা দেন এবং জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি পরিষ্কার করেন।
মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সময়ে করোনা সংক্রমণ ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের অতিসংক্রামক ডেল্টা ধরন ছড়িয়ে পড়েছে মিয়ানমারে। বিপর্যয়ের মুখে সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা। এমন অবস্থায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছে না জান্তা সরকার।
ধরপাকড় আর নির্যাতনের ভয়ে প্রকাশ্যে আসছেন না নার্স-চিকিৎসকরা। কারণ সেনাবাহিনীর ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার পর তারাই প্রথম সরব হয়েছিলেন। করোনা মোকাবিলায় চিকিৎসক-নার্সদের সহযোগিতার বিকল্প নেই। ফলে হন্যে হয়ে জান্তা সরকার তাদের খুঁজছেন।
ক্ষমতা নেয়ার পর গত ৬ মাসে ব্যাপক ধরপাকড় হয়েছে মিয়ানমারে। বিশেষ করে তরুণদের ধরে ধরে জেলে পাঠানো হয়েছে। এখন কারাগারে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আরেক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
মিয়ানমারের সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৮০ হাজার এবং মারা গেছেন ৮ হাজার ২০০ জন। যদিও ধারণা করা হয়, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি, কারণ করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরীক্ষার সুযোগ সেখানে সীমিত।
দেশটিতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে এখনো বিক্ষোভ সমাবেশ চলছে, এরই মাঝে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের হানায় পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। ফলে বেসামাল অবস্থা জান্তা সরকারের।
রয়টার্স জানিয়েছে, মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে ভিন্নমত দমন করতে ৯৩৯ জনকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ করেছে দ্য অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস। এছাড়া ৬ হাজার ৯৯০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে এটি এক ধরনের কৌশল মিয়ানমার জান্তা প্রধানের। আর জরুরি অবস্থা আরও ২ বছর বাড়ানোর মাধ্যমে জান্তা সরকারের ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত করা হলো। প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসে হয়ত কৌশলও বদলাতে পারেন জান্তা প্রধান, এমন শঙ্কা সাধারণ মানুষের।