করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত সারা বিশ্ব। নানা রকম বিধিনিষেধ আরোপ, সঙ্গে টিকাদানের গতি বাড়িয়েও সংক্রমণের হাত থেকে মুক্তি মিলছে না অনেক দেশের। আর তাই এই মারাত্মক ছোঁয়াচে জীবাণু উৎপত্তি বা উৎস নিয়ে প্রশ্নের অন্ত নেই। এ নিয়ে তদন্ত চললেও সবার সন্দেহের আঙুল যেন চীনের দিকেই। একই তথ্য দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের একজন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতার সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন একটি রিপোর্ট।
সোমবার রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান পার্টির আইনপ্রণেতা এবং হাউসের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির প্রধান মাইকেল ম্যাককউল এই রিপোর্টটি প্রকাশ করেন। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির গবেষকরা মানুষকে সংক্রমিত করার জন্য ভাইরাসের মধ্যে পরিবর্তন করছিলেন।
এসময় লিকেজের মাধ্যমে ভাইরাসটি বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। আর তাই করোনার উৎস নির্ধারণে বহুদলীয় তদন্তের আহ্বানও জানান ম্যাককউল। যদিও চীনেই করোনার উৎপত্তি হয়েছে বলে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
প্রকাশিত রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, চীনের উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির গবেষণাগারে একটি ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসকে আরও সংক্রামক করতে জেনেটিক্যালি পরিবর্তনের কাজ করা হচ্ছিল। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হলেও খুবই অনিরাপদ পরিবেশে এই কাজ চলমান ছিল। একপর্যায়ে ল্যাব লিকেজের ফলে এই ভাইরাস বাইরে চলে আসে। রিপোর্টে ওই ল্যাবে ‘গেইন-অব-ফাংশন’ গবেষণা করার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
তবে চীন দাবি করেছিল যে, উহানের মাছ বাজারে প্রথম এই ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। কিন্তু বেইজিংয়ের এই দাবি নাকচ করে দিয়েছেন মার্কিন রিপাবলিকান দলের গবেষকরা। তাদের দাবি, করোনাভাইরাস সম্পূর্ণভাবে মানবসৃষ্ট। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সংক্রমিত হয়েছেন প্রায় ২০ কোটি মানুষ।
এদিকে করোনার উৎস নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশের পাশাপাশি এ বিষয়ে আলাদা একটি বিবৃতিও দিয়েছেন রিপাবলিকান মাইকেল ম্যাককউল। বিবৃতিতে তিনি চীনের উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির গবেষক এবং দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে আইন পাস করার জন্য কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তার দাবি, মহামারি ছড়িয়ে পড়া রোধে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে এসব চীনা ব্যক্তিরা বাধা দিয়েছিলেন। ম্যাককউল বলছেন, ‘আমরা জানি যে, উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির গবেষণাগারে ‘গেইন-অব-ফাংশন’ গবেষণা চলছিল এবং এটাও জানি যে খুবই নিরাপদ পরিবেশে সেই গবেষণা পরিচলানা করা হচ্ছিল।’
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। প্রথমে বলা হয়েছিল, উহান শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত হুনান সি-ফুড মার্কেট থেকেই প্রথম করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটে।
দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম যে ব্যক্তি মারা যান, তার ওই মার্কেটে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ৬১ বছর বয়স্ক ওই ব্যক্তি যখন মারা যান, তখনও এই রোগের নাম নির্দিষ্ট করা হয়নি। চীনের সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘অপরিচিত ধরনের নিউমোনিয়ায়’ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনি।
তবে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে, চীন থেকে গোটা বিশ্বে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো একধাপ এগিয়ে গিয়ে কোভিড-১৯ কে ‘‘চীনা ভাইরাস’’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।