বাংলা গানের যুবরাজ বলা হয় আসিফ আকবরকে। শূন্য দশকে দেশের অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে রাজত্ব করেছেন তিনি। এখন সেই একচেটিয়া দাপট না থাকলেও সংগীতে নিয়মিত আছেন। মাঝেমধ্যেই নতুন গান উপহার দেন।
তবে গানের পাশাপাশি আসিফ সক্রিয় সোশ্যাল মিডিয়াতেও। বিভিন্ন সময়ে ব্যক্তিগত ও জাতীয় ইস্যুতে নিজের অভিমত প্রকাশ করে থাকেন। সম্প্রতি দেশের বিনোদন জগত নিয়ে নানা সমালোচনা ও বিতর্ক চলছে। সেটাকে কেন্দ্র করে নেটিজেনরা তুলোধুনা করছেন তারকাদের।
এ বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন আসিফ আকবর। তিনি তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে সবাইকে। আমরা যারা শোবিজে কাজ করি, কারো কারো হিসাবে তারা সবাই দোজখে আগুন ধরানোর এক নম্বর লাকরি। আমাদের সমস্ত পাপের শাস্তি দুনিয়াতে আর আখেরাতে একই মাত্রার কিনা জানি না। সিনেমা, নাটক, গানসহ সমস্ত শৈল্পিক চর্চাকে আজকাল ঘৃনার চোখে দেখা হয়। অত্যাচারী লুটেরা ক্ষমতার অপব্যবহারকারী সুদ ঘুষ খোর হারামজাদারা হয় রাষ্ট্রের এলিট সিটিজেন। মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে- আপনাদের ঘৃণাভরা মনে আমাদের অস্তিত্ব কীভাবে কাজ করে! আমি গান গেয়েছি পাপ করেছি, আমার শাস্তি দুনিয়ায় অভিশপ্ত হয়ে বেঁচে থাকা।’
আসিফ আরও লিখেছেন, ‘আপনাদের কেউ কেউ গান শুনবেন, আর ব্র্যাকেটে জাহান্নামের ভয় দেখাবেন! এ কেমন বৈপরীত্য! রঙিন দুনিয়া আপনার দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। আপনিও মজা পাচ্ছেন, ফাঁকে ফাঁকে রঙিন দুনিয়ার সঙ্গত পেতে টাকা ঢালছেন নিজের যেকোনো পন্থায় উপার্জনের গরমে। সুযোগের অভাবে ভদ্রলোক হয়ে থাকা সমস্ত পাপীর রেকর্ড আল্লাহর কাছে অবশ্যই আছে। শোবিজ এতো ঘৃণার জায়গা হলে ব্যান করে দেয়া হউক দেশের চলিত সিলেবাস থেকে। আমি পুরুষ হিসেবে নিজেই সুযোগ সন্ধানী অপরাধী। আমাকে ধরতে হলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রমানের অভাব নেই। যারা ধরবেন তাদের চলাচল তো আমাদের সাথেই!’
শোবিজের কথিত অপরাধীদের পেছনে মূল হোতা অন্য কেউ- এমন দাবি করে আসিফ লিখেছেন, ‘এই নগরে রাতের অন্ধকার জগতে পোশাকে পোশাকে কোন পার্থক্য হয়না। ক্ষমতা যার কাছে তিনি সাধু, বাকি ধৃতরা সব অপরাধী, অথচ সবাই সবাইকে চেনে। হঠাৎ করে ধরা পড়া অপরাধীরা নিজে নিজে তৈরী হয়নি। তাদের পেছনে কেউ ছিল যারা রাষ্ট্রের প্রভাবশালী। আজকাল বেশী কথা বলতে চাইনা, এখন ভয় লাগে। সব কথা বলাও ঠিকনা। শোবিজের নাম ভাঙিয়ে খুব মজা হচ্ছে সুপার সিভিলাইজড সোসাইটিতে। রঙিন দুনিয়া সবসময় রঙিন থেকে রঙিনতম হতেই থাকবে। ফেঁসে যাবে উচ্চাভিলাষী কেউ কেউ। তাদের পেছনের পৃষ্ঠপোষকতাকারী গডফাদার নামের শুয়োরগুলো এলিট থেকে যাবে। পাবলিক হাসবে, মজা নেবে শোবিজের জোকারদের নিয়ে। তারা ভুলে যায় নিজের পরিবারেও এমন অভিশপ্ত কারো জন্ম হতে পারে।’
সবশেষে আসিফ লিখেছেন, ‘খারাপ আমিও, সবসময়ের জন্যই খারাপ। আমার রুটি-রিজিকের মালিক মহান আল্লাহ, নইলে এই পাপাচারক্লিষ্ট গান গাওয়া আমার পেশা কেন হবে! খুব বেশি খারাপ লাগলে বাংলাদেশের শোবিজ বয়কট করে আন্তর্জাতিক মাত্রার বিনোদন নিন। শোবিজে অনেক খারাপ মানুষের ভিড়ে একজন সৈয়দ আবদুল হাদী এবং ফেরদৌসী রহমান আন্টির মতো লিভিং লিজেন্ডরাও এখনো সভ্যতার উপমা হয়ে জীবিত আছেন এই বঙ্গদেশে। নিজেও সভ্য হউন, আর আমরা অসভ্যরা আপনার মত সভ্যদের মঙ্গল কামনা করি সবসময়।’