রাজধানীসহ সারা দেশে মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। তা না হলে সংক্রমণ ও মৃত্যু আরও অনেক বেশি হতো। তবে ১ আগস্ট থেকে শিল্প প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ায় যেভাবে হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটেছে তাতে আগামী এক সপ্তাহ ক্রিটিক্যাল সময়। এরপর সংক্রমণ ফের বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। গণপরিবহন ও মার্কেট খুলে দিলে শতভাগ মানুষকে অবশ্যই মাস্ক পরাসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর হোসেনের কাছে করোনার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. এ এস এম আলমগীর হোসেন বলেন, ‘অনেকে লকডাউনের ফলে সুফল আসেনি বলে মন্তব্য করে থাকেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো লকডাউনের আগে যেভাবে করোনার সংক্রমণ প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছিল তাতে লকডাউন না দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতো। লকডাউন দেয়ার ফলে অধিকাংশ মানুষ ঘরে থেকেছে। ফলে বর্তমানে করোনার সংক্রমণ ২৭ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। তবে ১ আগস্ট থেকে গার্মেন্টসসহ রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ায় যেভাবে সারা দেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ ছুটে এসেছে তাতে আগামী এক সপ্তাহ ক্রিটিক্যাল সময়। এরপর বোঝা যাবে সংক্রমণ পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে।’
মাস্ক পরা নিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকেই মাস্কের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জানেন না। তারা নানা অজুহাতে মাস্ক পরলেও খুলে থুতনির নিচে বা কানের পাশে ঝুলিয়ে রাখেন। কিন্তু সার্জিক্যাল মাস্ক সব সময়ই পরে থাকা যায়। অনেকে মনে করেন মাস্ক নিজের জন্য পরেন। আসলে মাস্ক অন্যকে রক্ষার জন্যও পরা উচিত।’
‘বর্তমানে দেশে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ চলছে। এটি খুবই দ্রুত সংক্রমণশীল। আগে যেসব ভ্যারিয়েন্টে রোগীরা আক্রান্ত হতো তাতে রোগীর অবস্থা খারাপ হতে বেশ কিছুদিন সময় নিত। কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে দ্রুত রোগীর অবস্থা খারাপ হয়। এক্ষেত্রে অনেকে গাফিলতি করে করোনার নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা বিলম্বে শুরু করেন। এ কারণে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়, রোগীকে আর বাঁচানো যায় না।’
করোনার সংক্রমণ রোধে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য বিএসএমএমইউয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘লকডাউন কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। তাছাড়া প্রকৃত অর্থে লকডাউন বলতে যা বোঝায় সেভাবে পালিত হয় না। সুতরাং যে কোনো মূল্যে শতভাগ মানুষকে মাস্ক পরতে বাধ্য করতে হবে।’
সর্বশেষ বৃহস্পতিবারের হিসাব অনুযায়ী করোনায় একদিনে দেশে রেকর্ড ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়। এ সময়ে নমুনা পরীক্ষায় নতুন রোগী শনাক্ত হয় ১২ হাজার ৭৪৪ জন। শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ১২ শতাংশ। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৬ দশমিক শূন্য ৫৪ শতাংশ।