বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে ২০৩০ সালের মধ্যে গোটা বিশ্বের সার্বিক ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে বলে হুশিয়ার করেছে জাতিসংঘ। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরেই পরিবর্তন চোখে পড়ছিল। তবে আগে যা ছিল স্তিমিত, ধীর গতি, এখন সেই পরিবর্তন ঘটছে দ্রুত গতিতে। খবর আরব নিউজের।
এখনই সংযত না হলে ধ্বংসের আর বেশি বাকি নেই। বেশ কয়েক বছর ধরে সতর্ক করার পর এবার জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এমনই লাল সঙ্কেত দিল জাতিসংঘ।
সোমবার ১৯৫টি সদস্য দেশকে নিয়ে বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তনের ষষ্ঠ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের আন্তঃরাষ্ট্র প্যানেল (আইপিসিসি)। তাতে বলা হয়েছে, এ ভাবে চলতে থাকলে কোনো দেশই রক্ষা পাবে না।
সোমবার আইপিসিসির রিপোর্টটি পেশ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতারেস। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে বিজ্ঞানীরা যা আঁচ করেছিলেন, তার চেয়ে এক দশক আগেই বিশ্ব উষ্ণায়ন বিপজ্জনক জায়গায় পৌঁছে যেতে পারে।
২০৩০ সালের মধ্যে গোটা বিশ্বের সার্বিক ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে। বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে ১৯০১ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সমুদ্রের পানিস্তর যেখানে প্রতি বছর ১.৩ মিলিমিটার করে বাড়ছিল, ২০০৭ থেকে ২০১৮ সালে তা বছরে ৩.৭ মিলিমিটারে গিয়ে ঠেকেছে।
সামগ্রিক ভাবে ১৯০১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গোটা বিশ্বে পানিস্তরের গড় বৃদ্ধি ছিল ০.২০ মিটার।
বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন কতটা উদ্বেগজনক জায়গায় পৌঁছেছে, তা-ও বিশদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। বলা হয়েছে, কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে এই উষ্ণতা বৃদ্ধি সীমাবদ্ধ নেই। বিশ্বের সর্বত্র লাগাতার এই বৃদ্ধি ঘটছে।
দ্রুত গতিতে উষ্ণতা বাড়লেও, তা শীতল হতে সময় লেগে যাচ্ছে অনেকটা, এত দিন যা লক্ষ করা যায়নি। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণেই জলবায়ু সহনশীলতার মাত্রা পেরিয়ে যাচ্ছে।
তাই ১৯৫০ সালের পর থেকে তাপপ্রবাহের তীব্রতা লাগাতার বেড়ে চলেছে এবং আগের থেকে তা ঘন ঘন তাপপ্রবাহ বইছে। সেই তুলনায় শৈত্যপ্রবাহের তীব্রতা অনেক কম এবং ঘন ঘন তার প্রকোপে পড়তে হয় না বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য মনুষ্যঘটিত কারণগুলির উপরই জোর দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, শহর এলাকাগুলিই উষ্ণায়নের মূল কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লাগাতার তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে উষ্ণ বাতাস সেখানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে, যা শীতল হতে দীর্ঘ সময় লাগে। এই একই কারণে নদী, হ্রদ, জলাধার তো বটেই, গাছগাছালিতে ঘেরা সবুজ এলাকাগুলিতেও উষ্ণতা বহু ক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।
এ ভাবে চললে, প্রতি ১০ বছরে একবার বা প্রতি ৫০ বছরে একবার যে তীব্র বন্যা, খরা হয়, আগামী দিনে তা আরও ঘন ঘন দেখা দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা।