দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দফায় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়িয়ে সর্বশেষ তা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে গত ৭ আগস্ট সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক আলোচনা সভা ও ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের জীবন বাঁচাতেই করোনার এই সঙ্কটে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন। এক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের জীবনের পাশাপাশি অভিভাবকদের জীবনের মূল্যও কি সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়? তাছাড়া দেশে গণপরিবহণ থেকে শুরু করে শপিংমল-সবই যদি চালু রাখা যায় তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টানা বন্ধ না রেখে বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে না কেন?
অন্যদিকে ১১ আগস্ট শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপে আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে সরকার। আগামী সেপ্টেম্বরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে যখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন দুইশতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর আসছে, তখন আমরা কার কথা বিশ্বাস করব বা সত্য বলে ধরে নিব? সেতুমন্ত্রীর, নাকি শিক্ষামন্ত্রীর? অর্থাৎ, কিছুদিনের মধ্যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হচ্ছে কি?
প্রসঙ্গত, ইউনেস্কো এবং ইউনিসেফ সম্প্রতি যৌথ বিবৃতি দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দিতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। আমরা এই দুটি বিশ্বসংস্থার সাথে একমত। আমাদের দেশেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে শিগগিরই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। না হলে জাতি ও বিশ্বের সবাইকে এর খেসারত দিতে হবে। কারণ, এই অতিমারির সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ থাকায় বাল্যবিবাহ বেড়ে গেছে, কিশোর অপরাধ বেড়ে গেছে। পড়াশোনা ও পড়ার মান প্রায় শূন্যের কোঠায়। বিত্তবান পরিবার ব্যতীত মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতে এ সংকট খুবই মারাত্মক।
লেখক : কবি ও সাংবাদিক