অপ্রতিরোধ্য তালেবান, পাততাড়ি গোটাতে ব্যস্ত মার্কিনিরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

তালেবান
প্রতীকী ছবি

ক্রমেই আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তালেবান। দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম শহর হেরাতের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহারও দখলে নেয়ার দাবি করেছে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা। এ তথ্য সত্য হলে সপ্তাহখানেকের মধ্যে আফগানিস্তানের ১২তম প্রাদেশিক রাজধানীর পতন হয়েছে তাদের হাতে। এ অবস্থায় অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে পশ্চিমা-সমর্থিত আশরাফ ঘানির সরকার। যুক্তরাষ্ট্র মুখে বলছে তাদের পাশে রয়েছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তালেবানের অপ্রতিরোধ্য অভিযানের মুখে আফগানিস্তান থেকে পাততাড়ি গোটাতে ব্যস্ত মার্কিনিরা।

শুক্রবার সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, কান্দাহারের গভর্নর অফিসসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন দখল করেছে তালেবান বিদ্রোহীরা। যদিও সরকারপক্ষ এখনো পরাজয়ের কথা স্বীকার করেনি। তালেবানের এক মুখপাত্র টুইটারে বলেছেন, কান্দাহার পুরোপুরি জয় করা হয়েছে। মুজাহিদীনরা শহরের শহীদ চত্বরে পৌঁছে গেছে। এএফপির খবর অনুসারে, স্থানীয়রাও নিশ্চিত করেছেন, কান্দাহারের নিয়ন্ত্রণ এখন তালেবানের হাতে।

এর আগে, স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিকরা জানিয়েছিলেন, সরকারি বাহিনীর হাত থেকে আফগানিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হেরাত ছিনিয়ে নিয়েছে তালেবান। কাবুল থেকে মাত্র ১৩০ কিলোমিটার দূরবর্তী গজনিও এখন বিদ্রোহীদের হাতে।

কাবুল থেকে আল-জাজিরার সংবাদদাতা জানিয়েছেন, হেরাত দখল তালেবানের জন্য অনেক ‘বড় অর্জন’ এবং সরকারি বাহিনীর ‘বিশাল ক্ষতি’। তিনি বলেন, রাত থেকে তালেবান মারাত্মক আগ্রাসী হয়ে উঠেছে, পশ্চিম দিকটা দখলে নেয়ার দাবি করেছে তারা, সম্ভবত পূর্বাংশও, আর অবিশ্বাস্য চাপ সৃষ্টি করেছে দক্ষিণে।

এর আগে, তালেবানের প্রবল আক্রমণের মুখে গত বৃহস্পতিবার ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দিয়েছে আফগান সরকার। তবে তালেবানের পক্ষ থেকে তাতে সাড়া দেয়ার কোনো লক্ষণ নেই। মার্কিন গোয়েন্দাদের বিশ্বাস, আগামী ৯০ দিনের মধ্যে তালেবান বিদ্রোহীদের হাতে কাবুল সরকারের পতন ঘটবে।

ঘানিকে মুখেই ভরসা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

তালেবানের আক্রমণে কোণঠাসা আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সঙ্গে বৃহস্পতিবার টেলিফোনে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। যুক্তরাষ্ট্র এখনো আফগানিস্তানের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে আশ্বাস দিয়েছেন তারা।

দুই মার্কিন মন্ত্রী জানিয়েছেন, তারা নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে কাবুল থেকে নিজেদের বেসামরিক লোকজন সরিয়ে নিচ্ছেন এবং বিশেষ ভিসাধারীদের যুক্তরাষ্ট্রে নিতে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান সরকারের সঙ্গে শক্তিশালী কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর বলে আশ্বাস দিয়েছেন উভয় মন্ত্রী।

এদিকে, কাবুল দূতাবাস থেকে নিজস্ব লোকজনকে সরিয়ে নিতে বাড়তি তিন হাজার সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস সাংবাদিকদের বলেছেন, বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে কাবুলে আমাদের বেসামরিক লোকজন কমিয়ে আনা হচ্ছে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহগুলোতে আফগানিস্তানে কেন্দ্রীয় কূটনীতিকদের উপস্থিতিও কমিয়ে আনা হবে। এই কাজের স্বার্থে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর সাময়িকভাবে হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অতিরিক্ত কর্মী মোতায়েন করেছে।

শেয়ার করুন