কাশিমপুর কারাগারে পরীমনি

ডেস্ক রিপোর্ট

পরীমনি
ফাইল ছবি

মাদক মামলায় দুই দফা রিমান্ড শেষে চিত্রনায়িকা পরীমনির জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত। পরীমনির জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম ধীমান চন্দ্র মণ্ডল শুক্রবার দুপুরে এ আদেশ দেন।

পরীমণির পাশাপাশি তার সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপু, পরীমনির একটি সিনেমার প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ এবং তার ব্যবস্থাপক সবুজ আলীর ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বিচারক।

কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নারী বন্দিদের রাখার ব্যবস্থা না থাকায় পরীমনিকে কাশিমপুরের মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

তবে পর্নগ্রাফি আইনের অন্য একটি মামলায় রাজ ও সবুজের চার দিনের রিমান্ড আদেশ থাকায় তাদের সিআইডি হেফাজতে পাঠানো হচ্ছে বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু জানিয়েছেন।

মহানগর পুলিশের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপ- কমিশনার মো. জাফর হোসেন জানান, মাদক আইনের দুই মামলায় চার আসামিকে বেলা পৌনে ১২টার দিকে রিমান্ড শেষে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নিয়ে আসে পুলিশ।

নতুন করে রিমান্ডের আবেদন না করে তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। অন্যদিকে পরীমনির পক্ষে জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।

নতুন করে রিমান্ডের আবেদন না থাকায় এজলাসে হাজির না করে পরীমনিকে রাখা হয় হাজতখানায়। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয় বেলা আড়াইটার পর।

মজিবুর রহমান, নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভীসহ কয়েকজন আইনজীবী এদিন পরীমনির পক্ষে জামিন চেয়ে শুনানি করেন।

পুলিশের পক্ষ থেকে পরীমনিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদনে বলা হয়, “মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় দুই দফা রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত দিয়েছেন পরীমনি। মামলার তদন্তের স্বার্থে তা যাচাই করা হচ্ছে।
“মামলার অভিযোগের সঙ্গে তার জড়িত থাকার ব্যাপারে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তদন্ত অব্যাহত আছে। মামলার তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাকে জেলহাজতে রাখা হোক।”

অন্যদিকে পরীমনির জামিনের পক্ষে তার আইনজীবী মজিবুর রহমান বলেন, “আসামির সামাজিক মান-মর্যাদা রক্ষা এবং শিল্পী হিসেবে তাকে মানসিক উৎপীড়ন থেকে রক্ষার মানবিক তাগিদেই জামিনে মুক্ত করা আবশ্যক।

“পরীমনির মুক্তির দাবিতে সমাজের মুক্ত চিন্তার প্রগতিশীলরা সোচ্চার হচ্ছে। বিজ্ঞ আদালত নিশ্চয় পত্র-পত্রিকা খুললে দেখবেন, প্রতিদিন এসব সংবাদ ছাপা হচ্ছে, টেলিভিশনে প্রচার করা হচ্ছে। দেশের বিশিষ্টজনেরা তার মুক্তি দাবি করছেন।

“সে যদি এই মামলায় অপরাধী হয়, তাহলে তাকে মামলার বিচারের মধ্যে দিয়ে শাস্তি দেওয়া যাবে। কিন্তু আপাতত যে কোনো শর্তে তার জামিন চাই বিজ্ঞ আদালত।”

পরীমনির বাসা থেকে মদ উদ্ধারের সাক্ষী পাওয়া একটি ‘অনিশ্চিত বিষয়’ হবে বলে মন্তব্য করেন আইনজীবী মজিবুর রহমান।

তিনি বলেন, “পাসপোর্ট রেখে জামিন দেওয়া হোক। কারণ আইও বলেছেন, আসামি পালিয়ে যেতে পারে। পাসপোর্ট জমা রাখলে তো বিদেশে যেতে পারব না। বিশ্বময় অতিমারী সমস্যা চলছে, এরমধ্যে তদন্ত কর্মকর্তার ওই আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়।”

পরীমনির বাসায় র‌্যাবের অভিযান ‘আইনসিদ্ধ হয়নি’ দাবি করে এই আইনজীবী বলেন, “তারা আসামিকে গ্রেপ্তার করে উত্তরায় তাদের অফিসে নিয়ে গেছেন। তাকে থানায় হস্তান্তর না করে নিজেদের কাছে কয়েক ঘণ্টা রাখার পর তাকে থানায় হস্তান্তর করা হয়।”

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু শুনানিতে বলেন, “আসামির বাসা থেকে প্রচুর দেশি-বিদেশি মাদক উদ্ধার করা হয়েছে, তার কাছে এলএসডি পাওয়া গেছে। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাসায় পৌঁছানোর আধা ঘণ্টা পর দরজা খুলেছেন। সেই সময়ের মধ্যে তিনি মদগুলো ঢেলে ফেলে দিয়েছেন।

“তিনি নায়িকার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে দেশের অনেক শিল্পপতি, কোটিপতি ও সম্ভ্রান্ত ঘরের লোকদের ও তরুণ সমাজকে ডিজে পার্টির মাধ্যমে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জড়ানোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাই মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করছি।”

উভয় পক্ষের যুক্তি শোনার পর বিচারক জামিন নাকচ করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

বনানী থানার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের আরেক মামলায় প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ ও তার সহযোগী সবুজ আলীর ক্ষেত্রেও কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত। তবে পর্নগ্রাফি আইনের মামলায় রিমান্ড থাকা তাদের সিআইডি হেফাজতে নেওয়ার কথা রয়েছে।

প্রথম দফায় চার দিনের রিমান্ড শেষে পরীমনি, দীপু, রাজ ও সবুজকে গত মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে আবারও রিমান্ডের আবেদন করেছিল মামলাগুলোর তদন্ত সংস্থা সিআইডি।

সেদিন শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস বনানী থানার মাদক আইনের মামলায় পরীমণি ও তার সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুকে আরও দুই দিন করে রিমান্ডে পাঠান।

আর প্রযোজক রাজ এবং তার ব্যবস্থাপক সবুজ আলীকে মাদক আইনের মামলায় দুদিন এবং পর্নগ্রাফি আইনের মামলায় চার দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয় আদালত।

সেদিন শুনানি শেষে আদালত থেকে সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় আদালতে উৎসুক জনতার সামনে পরীমনি বলেন, “আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হচ্ছে।”

নড়াইলের মেয়ে শামসুন্নাহার স্মৃতি ঢাকার চলচ্চিত্রে পরীমনি নামে অভিষিক্ত হন ২০১৫ সালে। সম্প্রতি এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ তুলে তুমুল আলোচনার জন্ম দেন তিনি।

আর রাজ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার। প্রযোজকদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক ও পরিবেশক সমিতির সদস্য রাজ অভিনয়ও করেন।

‘ডিজে পার্টি’ আয়োজনের আড়ালে অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ৩ অগাস্ট ঢাকায় শরিফুল হাসান (মিশু হাসান) ও মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসান নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার পরদিন র্যাব যায় পরীমনির বনানীর বাসায়।

কয়েক ঘণ্টা অভিযান শেষে পরীমনি এবং তার সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুকে আটক করে নিয়ে যায় র্যাব। এরপর অভিযান চলে বনানীতে চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বাড়িতে। সেখান থেকে রাজ এবং তার ব্যবস্থাপক সবুজ আলীকে র্যাব আটক করে।

৫ অগাস্ট উত্তরায় র্যাব সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, পরীমনি ও রাজের বাড়িতে ‘মদ ও মাদকদ্রব্য’ পেয়েছেন তারা। পরীমনির একটি মদের লাইসেন্স পাওয়া গেলেও তার মেয়াদ ছিল না। এছাড়া রাজকে গ্রেপ্তারের সময় কম্পিউটারে ‘পার্ন কনটেন্ট’ পাওয়া গেছে।

মিশু ও জিসানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই পরীমনি ও রাজের বাড়িতে অভিযান চালানো হয় বলে কমান্ডার আল মঈন সেদিন জানান।

এরপর চারজনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়, বনানী থানায় দায়ের করা হয় মাদক আইনে দুটি মামলা। এছাড়া রাজ ও সজুজের বিরুদ্ধে পর্নগ্রাফি আইনে আরেকটি মামলা করা হয়।

র্যাবের করা জব্দ তালিকায় পরীমনির বাসা থেকে ‘বিপুল পরিমাণ মদ এবং আইস ও এলএসডির মতো মাদকদ্রব্য’ উদ্ধারের কথা বলা হয়। আর রাজের ফ্ল্যাট থেকে মদ ও ইয়াবার সঙ্গে ‘সেক্স টয়’ এবং একটি সাউন্ড বক্স জব্দ করার কথা বলা হয়।

৫ অগাস্ট সন্ধ্যায় চারজনকে আদালতে তোলা হলে মাদক আইনের দুই মামলায় চারজনকে চার দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন ঢাকার মহানগর হাকিম মো. মামুনুর রশিদ। পরে মামলাগুলোর তদন্তভার সিআইডির হাতে যায়।

শেয়ার করুন