হেরাত ও কান্দাহারের বাসিন্দারা এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না, তালেবান কীভাবে এত দ্রুত শহর দুটির নিয়ন্ত্রণ নিল। সেখানে বিদ্রোহীদের আক্রমণের বিপরীতে বলতে গেলে কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেনি বা গড়েনি সরকারি বাহিনী। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। বৃহস্পতিবার রাতে কান্দাহারের এক নারী আল-জাজিরাকে বলেন, ওরা আসলে আমাদের বিক্রি করে দিয়েছে, সরকারের কোনো প্রতিরোধই ছিল না। কখনো ভাবিনি, কান্দাহার এত দ্রুত দখল হয়ে যাবে।
একই সুর শোনা গেছে আরও অনেকের মুখে। হেরাতে তালেবান-বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘আপরাইজিং ফোর্স’-এর এক সমর্থক বলেন, মূলত এসব জায়গা ওদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। দেখবেন, এরপর কাবুল ও মাজার-ই-শরিফ যাবে।
জানা গেছে, গত ৬ আগস্ট থেকে আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রাদেশিক রাজধানীর মধ্যে ১৮টির দখল নিয়েছে তালেবান। তবে এখন পর্যন্ত আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানিসহ সরকার পক্ষের কেউ একটি এলাকাও হাতছাড়া হওয়ার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি।
অনেকের মতে, বৃহস্পতিবার তালেবানের হাতে পরপর আফগানিস্তানের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহার ও হেরাতের পতন চলমান সহিংসতার অন্যতম ‘টার্নিং পয়েন্ট’। কাবুল পালিয়ে যাওয়া হেরাতের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না এমনটি ঘটেছে।
এদিকে, ২০ বছর পর ফের তালেবানের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর হেরাত ও কান্দাহারের পরিস্থিতি মানুষের মধ্যে কৌতুহলের জন্ম দিয়েছে। হেরাতের এক বাসিন্দা শুক্রবার জানিয়েছেন, শহরের বহু মানুষ রাস্তায় তালেবান সদস্যদের দেখতে নেমেছেন। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতেও মানুষজনকে রাস্তায় জড়ো হতে দেখা গেছে। আকাশে গুলি ছুড়ে এসব মুহূর্ত উদযাপন করছে তালেবান বিদ্রোহীরা।
চলছে হয়রানিও
কান্দাহারের এক সাংবাদিক জানান, তালেবানের উদযাপন বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। শিগগিরই তারা বাড়িঘরে ঢুকে তল্লাশি ও বাসিন্দাদের হয়রানি শুরু করে। তিনি বলেন, ওরা (তালেবান) বাড়ি বাড়ি গিয়ে কে থাকে খোঁজ নিচ্ছে। তাহলে নিরাপত্তা বাহিনী বা সরকার কে এখানে?
এ সাংবাদিক জানান, এক সরকারি কর্মকর্তা বসবাস করেন ভেবে তার বাড়িতেও তালেবান এসেছিল। এখন তিনি অন্য জায়গায় পালিয়ে রয়েছেন। কারণ তার ভয়, গণমাধ্যমে যুক্ত হওয়ার আগে বিদেশি বাহিনীর ঘাঁটির কাছে একটি দোকানে কাজ করতেন, এ জন্য তাকে হয়রানি করা হতে পারে।
কান্দাহারের এক যুবক বলেন, আমার চাচা বলেছেন, ওদের মনে সন্দেহ তৈরি করতে পারে এমন জিনিসপত্র লুকিয়ে ফেলতে। কারণ তারা চাচার বাড়ি তল্লাশি করেছে এবং অন্য বাড়িতেও করছে।
আরেক বাসিন্দা বলেন, তালেবান তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে সবক’টি বন্দুক ও গাড়ি নিয়ে গেছে।
ভয়ে ঘরবন্দি হয়ে পড়া এক বাসিন্দা বলেন, আমার মনে হয় ওদের গোয়েন্দারা অনেক শক্তিশালী আর তাদের কাছে একটি তালিকা রয়েছে।
কাবুল পালিয়ে যাওয়া হেরাতের এক রাজনীতিবিদ বলেন, তালেবান তার পরিবারকে খুঁজে বের করে হয়রানি করবে বলে ভয় পাচ্ছেন তিনি। এ নারীর কথায়, সারারাত শুধু আমার বাড়ি, আমার বাবা-মায়ের কথা ভেবেছি। কী হবে, আমার জন্য যদি তাদের তুলে নিয়ে যায়?