আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বান জাতিসংঘের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আফগানিস্তানে বোমা হামলায় নিহত ২৪
ছবি : ইন্টারনেট

তালেবানের অপ্রতিরোধ্য হামলার মুখে আফগানিস্তানের চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই পাশের দেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছেন। এমন অবস্থায় বেসামরিক আফগানদের আশ্রয় দিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালেবানদের হামলার মুখে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে রাজধানী কাবুলে জড়ো হচ্ছে হাজারো মানুষ। অনেকেই অস্থায়ী তাঁবু টানিয়ে অথবা রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু আফগানিস্তানের পরিস্থিতি এত দ্রুত বদলাচ্ছে যে শিগগির রাজধানী কাবুলও আক্রান্ত হতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আফগান চলচ্চিত্র নির্মাতা সাহরা কারিমি কাবুল থেকে বিবিসিকে জানিয়েছেন, তার মনে হচ্ছে, পুরো বিশ্ব এখন আফগানিস্তানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তার ভয় হচ্ছে, আফগানিস্তানে আবারও হয়ত সেই তালেবানি ‘অন্ধকার যুগ’ শুরু হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত তালেবানি শাসনামলে আফগানিস্তানে নারীদের মুখ, চুলসহ সম্পূর্ণ দেহ ঢাকা বোরখা পরা বাধ্যতামূলক ছিল। মেয়েদের বয়স ১০ বছরের বেশি হলেই স্কুলে যাওয়া ছিল নিষিদ্ধ। শরিয়া আইনের নামে তারা চালু করেছিল দোররা ও পাথর ছুড়ে হত্যার মতো ভয়ঙ্কর সব শাস্তি।

এদিকে, ক্রমেই আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তালেবান। দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম শহর হেরাতের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহারও দখলে নেয়ার দাবি করেছে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা। এ তথ্য সত্য হলে সপ্তাহখানেকের মধ্যে আফগানিস্তানের ১২তম প্রাদেশিক রাজধানীর পতন হয়েছে তাদের হাতে। এ অবস্থায় অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে আশরাফ ঘানির সরকার।

শুক্রবার সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, কান্দাহারের গভর্নর অফিসসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন দখল করেছে তালেবান বিদ্রোহীরা। যদিও সরকারপক্ষ এখনো পরাজয়ের কথা স্বীকার করেনি।

তালেবানের এক মুখপাত্র টুইটারে বলেছেন, কান্দাহার পুরোপুরি জয় করা হয়েছে। মুজাহিদীনরা শহরের শহীদ চত্বরে পৌঁছে গেছে। এএফপির খবর অনুসারে, স্থানীয়রাও নিশ্চিত করেছেন, কান্দাহারের নিয়ন্ত্রণ এখন তালেবানের হাতে।

এর আগে, স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিকরা জানিয়েছিলেন, সরকারি বাহিনীর হাত থেকে আফগানিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হেরাত ছিনিয়ে নিয়েছে তালেবান। কাবুল থেকে মাত্র ১৩০ কিলোমিটার দূরবর্তী গজনিও এখন বিদ্রোহীদের হাতে।

কাবুল থেকে আল-জাজিরার সংবাদদাতা জানিয়েছেন, হেরাত দখল তালেবানের জন্য অনেক ‘বড় অর্জন’ এবং সরকারি বাহিনীর ‘বিশাল ক্ষতি’। তিনি বলেন, রাত থেকে তালেবান মারাত্মক আগ্রাসী হয়ে উঠেছে, পশ্চিম দিকটা দখলে নেয়ার দাবি করেছে তারা, সম্ভবত পূর্বাংশও, আর অবিশ্বাস্য চাপ সৃষ্টি করেছে দক্ষিণে।

এর আগে, তালেবানের প্রবল আক্রমণের মুখে গত বৃহস্পতিবার ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দিয়েছে আফগান সরকার। তবে তালেবানের পক্ষ থেকে তাতে সাড়া দেয়ার কোনো লক্ষণ নেই। মার্কিন গোয়েন্দাদের বিশ্বাস, আগামী ৯০ দিনের মধ্যে তালেবান বিদ্রোহীদের হাতে কাবুল সরকারের পতন ঘটবে।

শেয়ার করুন