২২ পরিবার এখন ২২ হাজার পরিবার হয়েছে: মোকতাদির চৌধুরী

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

মোকতাদির চৌধুরী

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে বন্দুকের নল দিয়ে হত্যা করেছে বা বন্দুকের নলের পেছনে থেকে যারা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত রয়েছে ইতোমধ্যে তাদেরকে আমরা চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় এনে ফাঁসি দিতে পেরেছি এবং ইন্ডিমেনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করার পরেই এটি সম্ভব হয়েছে। মাত্র চারজন ব্যক্তির এখনও ফাঁসি কার্যকর করা হয়নি, কারণ তারা বিদেশের মাটিতে পালিয়ে আছেন। সকলেই দাবি করছে এদেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করার জন্য। এ দাবি আমরা আজকের সভা থেকেও করছি।

আজ ১৬ আগস্ট ,সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, সেইসঙ্গে আমি আরও একটি দাবি করছি এবং অনেকেই এখন এই দাবির পক্ষে একমত পোষণ করছেন যে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যারা ছিল তাদের খুঁজে বের করতে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক। যে গুলি করল তার পেছনে উৎসাহ ও প্রেরণা দিল কে? নির্দেশটা দিল কে? সেই লোকদের চিহ্নিত করার একটা বিষয় আছে। কেননা এই কতিপয় সামরিক কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধুর মতো এক বিশাল ব্যক্তিত্বের রাজনীতিবিদকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করেছিল, সেটি কোনো ঘটনা নয়। এর পেছনে কোনো কোন শক্তি ইন্দন জুগিয়েছিল সেটিও চিহ্নিত করা এখন জাতীয় দাবি হয়ে উঠছে।

তিনি বলেন, সেখানে রাজনীতিবিদদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন, সেখানে সামরিক-বেসামরিক আমলারা জড়িত ছিল। সেখানে নাটের গুরু মুস্তাক ও তার অনুচরেরা ছিল। আর ছিল কারা? উঠতি ব্যবসায়ীরা, যারা অস্থির হয়ে গিয়েছিল এদেশের সম্পদ লুটপাট করার জন্য।

মোকতাদির চৌধুরী আরও বলেন, এই লুন্ঠনকারীরা স্বাধীনতার পরেও ছিল, স্বাধীনতার আগেও ছিল। স্বাধীনতার আগে কারা ছিল? যারা পাকিস্তানের লুন্ঠনকারীদের দেখেছে এবং মনে করেছে তাদেরও লুন্ঠনে অংশগ্রহণ করা উচিত। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে আন্দোলন করছিল সেটি ছিল আলটিমেটলি একটি স্বাধীন দেশ গঠনের উদ্দেশ্য। কিন্তু একদল উঠতি ব্যবসায়ী চেয়েছিল বাংলাদেশকে লুণ্ঠন করতে। যেজন্য আমরা তদানিন্তন সময়ে ২২ পরিবারের বিপক্ষে যুদ্ধ করেছিলাম (পাকিস্তান আমলের ২২টি ধনী শিল্পপতি বা গোষ্ঠী) তাদের লুন্ঠন দেখে তারাও (উঠতি ব্যবসায়ী) তাদের মতো হতে চেয়েছিল এবং বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে তারা সফলও হয়েছে, যারা আজ হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। ঐ ২২ পরিবার এখন ২২ হাজার পরিবার হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা না করলে এটি সম্ভব হত না। কারণ বঙ্গবন্ধু একটি ইগালেটিটিয়্যাল সোসাইটি চেয়ে ছিলেন, একটি ভারসাম্যযুক্ত অর্থনীতির দেশ গড়ে উঠুক-এটি বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন। তাঁর অর্থনীতি ছিল কল্যাণের অর্থনীতি। কিন্তু এটা ঐ ব্যবসায়ী শ্রেণি পছন্দ করেনি।

তিনি বলেন, এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর অনেককেই আমরা চিনি এবং তারা অনেকেই এখনও লুটপাটের অগ্রভাগে আছে। তাদের ছত্রছায়ায়তেই বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী সময়ে যেসমস্ত সরকারসমূহ ক্ষমতায় আছে তারা তাদেরকে ছত্রছায়া দিয়ে দিয়ে এখানে নিয়ে এসেছে।

প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে বাকশাল কায়েম করে যে বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছিলেন এটাকে তারা (ব্যবসায়ী ও আমলারা) নস্যাৎ করার জন্যই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পথে গেল এবং এই হত্যাকে নিছক ব্যক্তির আক্রোশের হত্যা বলে প্রচার করার জন্য তারা বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবারকেও হত্যা করেছিল।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আওয়ামী লীগাররা মাঠে নামে নাই। কেন নামে নাই জানেন? কারণ ক্ষমতায় তো আওয়ামী লীগই! ক্ষমতায় যারা ছিল- শুনতে খারাপ লাগলেও বাস্তব সত্য হলো, খুনি মোস্তাক ও তার সহচররা যারা মন্ত্রীসভায় গিয়েছিল, তাদের সকলকেই কী জোর করে নিয়ে গিয়েছিল? নাকি স্বেচ্ছায়ও কেউ কেউ মন্ত্রী হয়েছিলেন? শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের অবস্থান কী ছিল? কেএম ওবায়দুর রহমানের অবস্থান কী ছিল? তারা মুস্তাকের সাথে গেল। ফেরদৌস কোরেশি মুস্তাকের সাথে যায় নাই কিন্তু জিয়াউর রহমানের সাথে গিয়েছিল। যদিও তারা তিনজনই বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। কিন্তু তারা ছিল পুঁজিপতিদের পক্ষের লোক।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ফাহিমা খাতুনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান, পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার।

অনুষ্ঠানে গত ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতার বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন বিজয়ী শিক্ষার্থীর মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ফাহিমা খাতুন বলেন, ১৫ আগস্টের পরে বঙ্গবন্ধুর যে আদর্শ সেই আদর্শকে ধূলিসাৎ করে দেয়াট চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মরে নাই এবং বঙ্গবন্ধুও মরে নাই। তাই আমরা দেখি, আবার আমরা তাঁর আদর্শকে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তারপরেও আমাদের যে আবহমান সংস্কৃতি সেই সংস্কৃতিতে ৭৫-এর পর থেকে ১৯৯৫ সালে পর্যন্ত যে চিঁড় ধরেছিল সেটি এখনও আমরা জোড়া লাগাতে পারিনি। অর্থাৎ সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যে ধর্মান্ধতা, ধর্মীয় কুপমণ্ডুকতার চিড়গুলো এখনও আমরা লক্ষ্য করছি। শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত জনশক্তির মাঝেও সেটি দেখা যাচ্ছে। আমরা যতই ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলি কিন্তু আমাদের আচরণে সেটার প্রভাব পড়ে না। আমরা মানবতার কথা বলি, সেটাও কিন্তু অনেক সময় আমাদের মধ্যে দেখি না। আর দেশপ্রেম- সেই বিষটাও আমাদের মনে রাখতে হবে যে, দেশকে ভালোবাসলে এই দেশটাকে আমরা এমনভাবে ভালোবাসব যেন দেশের কোনো খারাপ আমাকে দিয়ে না হয়।

শেয়ার করুন