জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সরাসরি যারা হত্যা করেছে তারা যেমন অপরাধী তেমনি যারা এই হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্র তৈরি করেছিল তারাও সমান অপরাধী বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তাদেরও চিহ্নিত করা এবং বিচারের আওতায় আনা জরুরি ছিল বলে মনে করেন তিনি।
আজ সোমবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী এই শোকসভায় অংশ নেন।
ষড়যন্ত্র আগে থেকেই শুরু হয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭২ সালে থেকেই ষড়যন্ত্রের শুরু হয়। প্রথমে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভক্তি, পরে জাসদ সৃষ্টি হলো। যারা পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দোসর তাদের অনেকেই পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে চলে গেল, আর যারা এদেশে ছিল তারা হঠাৎ উধাও হয়ে গেল। তারা সবাই আন্ডার গ্রাউন্ড পার্টির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, আজকে আপনারা এই ঘটনার পেছনে কারা আছে সেটা জানতে খুঁজে বেড়াচ্ছেন, বেশি খোঁজার দরকার নেই। আপনারা আমাদের দেশের সে সময়ের পত্রপত্রিকা পড়েন। তখনকার যাদের বক্তব্য বের করেন। আপনাদের কাছে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বছরের পর বছর লেগে যায় একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়তে। সেখানে একটি বছর সময় দেওয়া হলো না। সাথে সাথে সমালোচনা করা হলো। আর ধৈর্য ধরা হলো না- এটা নাই, ওটা নাই, এটা হবে না কেন, ওটা হবে না কেন। নানা কথা লেখা হলো। কারা লিখেছিল, কাদের খুশি করতে গিলেছিল। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের অবস্থানটা তৈরি করেছিল। যেটাকে বলে গ্রাউন্ড প্রিপেয়ার করা। সেটা তারা করেছিল।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমি জানি, যারা সরাসরি হত্যা করেছে, নিজেরা স্বীকার করেছে। বিবিসির ইন্টারভিউতে রশিদ, ফারুক বলেছে, যে তারা হত্যা করেছে। তার কারণ একটা চেষ্টা ছিল- শেখ মুজিবকে জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা এবং অনেক অপপ্রচার চালিয়ে তাকে জনগণের কাছ থেকে দূরে সরাতে পারেনি। আর সরাতে পারেনি বলেই তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এটা হলো বস্তবতা।
শেখ হাসিনা বলেন, তখন যারা সমালোচনা লিখেছে, বক্তব্য দিয়েছে, তারা এদের দোসর হিসেবে গ্রাউন্ড তৈরি করেছিল। সেটা একটু আপনারা স্মরণ করে রাখবেন। তাহলে আপনাদের বেশি দূর যেতে হবে না। কেউ কেউ কমিশন গঠনের দাবি করছেন। খুব ভালো কথা, সেই সঙ্গে এই জিনিসগুলো মিলিয়ে দেখেন। আপনাদের সকলের কাছে বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যাবে।
সরকারপ্রধান বলেন, খুনিদের বিচার হয়েছে। এখনো যারা বাইরে পলাতক তার মধ্যে ডালিম পাকিস্তানেই আছে। তখন থেকে রশিদ পাকিস্তান এবং লিবিয়ায় থাকে। ডালিম মাঝে মাঝে কেনিয়াতেও যায় বা অন্য দেশে যায়। সে পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে চলে। কিন্তু পাকিস্তানকে বহুবার বলা হয়েছে। কিন্তু তারা এটা স্বীকারও করে না।
পলাতক খুনিদের তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, রাশেদ কানাডায়, নুর এখন যুক্তরাষ্ট্রে, মোসলে উদ্দিনের খোঁজ মাঝেমাঝে পাওয়া যায়, আবার মাঝে মাঝে পাওয়া যায় না। হত্যার বিচার করার দরকার ছিল. সেটা করেছি এবং কারা জড়িত ছিল সেটাও বের হবে। সেই দিন বেশি দূরে না।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, জাতির পিতার একমাত্র স্বপ্ন ছিল, বাংলাদেশের মানুষ অন্ন পাবে, বস্ত্র পাবে, উন্নত জীবনের অধিকার পাবে। ঘরে ঘরে আলো পাবে। এগুলো আমার বাবার জীবনের লালিত স্বপ্ন। সেটা যখন করতে পারবো, আমি মনে করি, সেই হত্যার প্রকৃত প্রতিশোধ আমি সেই দিনই নিতে পারবো।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রান্তে আলোচনায় অংশ নেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ।